সোমবার, ১৩ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

আবাসনের কোনো প্রস্তাব গৃহীত না হওয়ায় লজ্জিত রিহ্যাব

নিজস্ব প্রতিবেদক

আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে আবাসন খাতের কোনো প্রস্তাব গৃহীত না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করে রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন বলেছেন, সত্যিকার অর্থেই আমরা এই বাজেট দেখে লজ্জিত। বাজেটে ফলপ্রসূ কোনো সমাধান পাইনি। আগামীতে রাজস্ব বোর্ডের কোনো বৈঠকে রিহ্যাব যাবে কিনা, সেটাও এখন ভেবে দেখব। আবাসন খাত মহাসংকটে পড়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ৮০ শতাংশ বিক্রি কমে গেছে।  নতুন প্রকল্প গ্রহণের হার কমেছে ৯০ শতাংশ। আবাসন খাতের সমস্যা সমাধানে সরকারিভাবে একটি শক্তিশালী জাতীয় কমিটি গঠন ও স্টিম্যুলাস প্যাকেজ চেয়ে ৭ দফা দাবি জানিয়েছে রিহ্যাব। গতকাল রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-রিহ্যাব আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সংগঠনটির সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন। এতে উপস্থিত ছিলেন রিহ্যাবের সিনিয়র সহসভাপতি মো. নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন এমপি, সহসভাপতি মো. আহকাম উল্লাহ, প্রকৌশলী সরদার মো. আমিন প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনে ৭ দফা দাবি উত্থাপন করে রিহ্যাব সভাপতি বলেন, দেশের আবাসন খাত ভালো হলেই ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন সহজেই সম্ভব হবে। আবাসন খাত মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়েছে। তৈরি ফ্ল্যাট বিক্রি হচ্ছে না। অথচ বিদেশে ৭৬ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। এই প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে একটি শক্তিশালী জাতীয় কমিটি গঠন করে আবাসন শিল্পের সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান করা হোক। আবাসন শিল্পের ক্রান্তিকাল উত্তরণের জন্য স্বল্প মেয়াদি এবং দীর্ঘ মেয়াদি ব্যবস্থা নিতে এই কমিটি গঠন করে একটি স্টিম্যুলাস প্যাকেজ ঘোষণা করা হোক। রিহ্যাব বলেছে, শহর এলাকায় ৫ বছরের জন্য ‘ট্যাক্স হলিডে’ এবং শহরের বাইরে ১০ বছরের জন্য ‘ট্যাক্স হলিডে’ প্রচলন করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে স্বল্প আয়ের ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির জনসাধারণের জন্য যে কোনো পরিমাণ টাকার তহবিল গঠন করে দীর্ঘ মেয়াদি ‘সিঙ্গেল ডিজিট সুদে রি-ফাইন্যান্সিং পুনঃপ্রচলন’ করা হোক। আবাসন শিল্পে অন্যান্য দেশের মতো শিল্প ঋণসহ শিল্প সুবিধার প্রচলন করতে হবে। রেজিস্ট্রেশন ব্যয় ৪ শতাংশ হারে কমানো ও অপ্রদর্শিত অর্থ সৃষ্টি প্রবণতা কমানোর পদক্ষেপ নিতে হবে। সেকেন্ডারি মার্কেটের রেজিস্ট্রেশন ব্যয় ১ শতাংশ ও ২ শতাংশ করে মানি ফ্লো বাড়ানো হোক। নগদ ও খুচরা পণ্য ক্রয়ে ভ্যাট এবং উেস কর বন্ধ করা প্রয়োজন। এর সঙ্গে নির্মাণ প্রকল্পগুলোতে ইউটিলিটি বিলসমূহ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেটে নির্ধারণ করা হলে আবাসন খাত ঘুরে দাঁড়াবে। এ খাত রক্ষার্থে রিহ্যাবের দাবিসমূহ গ্রহণ করা হলে রাজস্ব আয়ে ফলপ্রসূ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে আবাসন শিল্প। এতে ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন ঝুঁকিমুক্ত হবে। অন্যথায় দেশ অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে রিহ্যাব বলেছে, সরকারের নীতি সহায়তার অভাবে ক্রমে দেশের আবাসন খাত মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়েছে। মানুষের সামর্থ্যের মধ্যে মাসিক কিস্তি সুবিধা দেওয়ার মতো এই খাতে পর্যাপ্ত আর্থিক ঋণ প্রবাহ না থাকায় অনেকের বাসস্থানের স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে না। এখন প্রায় ২২ হাজার ক্রেতা, ২ হাজার জমির মালিক এবং রিহ্যাব সদস্য ও সদস্য নয় এমন ২ হাজার ৫০০ ডেভেলপার মহাসংকটে পড়েছে। তৈরি ফ্ল্যাট বিক্রি না হওয়ায় সব সদস্যের নিজস্ব পুঁজি ও ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণ আটকে গেছে। সেই সব কোম্পানির বিক্রীত ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। ব্যাংক ঋণের সুদ বেড়ে কোম্পানিগুলো দিন দিন ভয়ানক সংকটে পড়ছে।

রিহ্যাব বলেছে, দেশে প্রতিটি বাজেটের পর ব্যয় বেড়েছে। উচ্চ রেজিস্ট্রেশন ব্যয়ের ফলে ক্রেতারা রেজিস্ট্রেশনে আগ্রহ হারাচ্ছেন। এই মুহূর্তে যদি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হয়, তবে এ দেশের গৃহায়ণ শিল্পের মারাত্মক ও অপূরণীয় ক্ষতি হবে। সরকারের প্রবৃদ্ধির টার্গেট অর্জনও ঝুঁকিতে পড়বে। রিহ্যাবের বাজেট প্রস্তাবনায় আমরা সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়েছিলাম একটি তহবিল গঠনের ওপর। ঘোষিত জাতীয় বাজেটে এই তহবিল গঠনের কোনো প্রতিফলন নেই। এবারের বাজেটে ট্যাক্স হলিডের মাধ্যমে বিকেন্দ্রীকরণ নগরায়ণ, গৃহায়ণ শিল্পের জন্য নির্মাণকালীন পরিস্থিতিতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল হারে ইউটিলিটি ফি নির্ধারণ, সাপ্লায়ার ভ্যাট ও উেস কর সংগ্রহের দায়িত্ব থেকে ৫ বছরের জন্য ডেভেলপারকে অব্যাহতি প্রদানের প্রস্তাব করা হলেও এগুলোর কোনো কিছুর প্রতিফলন বাজেটে নেই। এই অবনতিশীল পরিস্থিতি থেকে আবাসন খাতকে উদ্ধারের জন্য কোম্পানিগুলোকে ৫ বছরের জন্য ট্যাক্স হলিডে চাওয়া হলেও বাজেটে তা বিবেচনা করা হয়নি।

সর্বশেষ খবর