মঙ্গলবার, ১৪ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রে অন্যরকম ইফতার

শেখ সফিউদ্দিন জিন্নাহ্

বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রে অন্যরকম ইফতার

গাজীপুরের এক বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রে আশ্রিত বয়োবৃদ্ধ মা-বাবা’রা পবিত্র রমজান মাসে সারা দিন রোজা রেখে অন্যরকম ইফতারিতে মেতে ওঠেন। মসজিদ থেকে প্রচার হয় পবিত্র কোরআনের বাণী। সবাই প্রস্তুতি নেন ইফতারের। আজানের ধ্বনি ভেসে আসার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় ইফতার। গাজীপুরের মির্জাপুর বিশিয়া কুড়িবাড়ীর বেসরকারি বৃদ্ধাশ্রমে গত রবিবার সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ইফতারের কাছাকাছি সময়ে আশ্রিতরা বৃদ্ধাশ্রমের ভেতরের মসজিদ ও ক্যান্টিনে গোল হয়ে ইফতারি নিয়ে বসেছেন। কেউ পানি এগিয়ে দিচ্ছেন। আবার কেউ ছোলা-মুড়ি এগিয়ে দিচ্ছেন। লক্ষ্য করা যায়, অন্যরকম আনন্দের মুহূর্ত। পাশে আদরের ছেলে-মেয়েরা না থাকলেও যেন ঘাটতি নেই আনন্দে। একে অপরের সঙ্গে তারা আনন্দকে ভাগাভাগি করে নিয়েছেন।

জানা যায়, প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বৃদ্ধাশ্রমের ভেতরেই ছালা, মুড়ি, পিয়াজু, আলুর চপ, বেগুনি, জিলাপি, খেজুর, আম, কাঁঠাল, আনারস, জিলাপিসহ বিভিন্ন ধরনের ফল-মূল দিয়ে আয়োজন করা হয় ইফতারির। এসব পরিবেশনের পাশাপাশি রাখা হয় বিশুদ্ধ পানি ও ফলের রস। দেখা যায়, ফলও আছে হরেক রকম। আবার অনেকের বাড়ি থেকেও আসে ইফতারির নানা আইটেম। সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়তেই জমে ওঠে ইফতারি।

বেশ কয়েকজন বয়োবৃদ্ধের সঙ্গে কথা বলা হয়। এরকম এক বয়োবৃদ্ধ আরফান আলী অনেকটা কান্নাস্বরে বলেন, ‘এখানে এসে মানুষের সেবা-যত্নে অনেক দুঃখ ভুলে গেছি।’ পুরান ঢাকার আশ্রিত বৃদ্ধ নাহার বলেন, ‘বাবারে কী বলব? এখানকার মানুষ এত ভালো, তারা খুবই সহানুভূতিশীল। এরা কখনো বুঝতেই দেয় না আমরা অসহায়। ইফতারির সময় খুবই আনন্দের সঙ্গে আমরা ইফতার করি।’ ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া এলাকার বৃদ্ধ জামানউদ্দিন বলেন, ‘বৃদ্ধাশ্রমের দায়িত্বে থাকা ইনচার্জ, সিকিউরিটি গার্ড, মালি, লেবার আর আমরা একসঙ্গেই ইফতার করি। ইফতারের ২০ মিনিট আগে থেকেই আমরা একত্রে বসে পড়ি। ইফতার শেষে বৃদ্ধাশ্রমের ভিতরে সবার জন্য রাতের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়।’ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখানে শুধু ইফতারিই নয়, সবাই মিলে সাহরির সময় ক্যান্টিনে গিয়ে সাহরি খান। বৃদ্ধাশ্রমে নামাজের জন্য একটি পাঞ্জেগানা মসজিদ আছে। মসজিদের ভিতরে এবং বাইরে বেষ্টনী দিয়ে মুসল্লিদের জন্য ইফতারির আয়োজন করা হয়।

বৃদ্ধাশ্রমের ইনচার্জ মো. শরীফ হোসেন বলেন, ‘এখানে আশ্রিত বয়োবৃদ্ধরা অসহায় হলেও অসহায়ের কোনো চিহ্ন রাখা হয়নি আশ্রমে। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করি, যেন এসব বয়োবৃদ্ধরা সব দুঃখ-কষ্ট ভুলে থাকেন। প্রতিষ্ঠানের টাকায় এখানে বয়োবৃদ্ধদের সব ব্যয় বহন করা হয়। রমজান মাসে স্পেশাল ইফতারি প্রতিষ্ঠানের সৌজন্যেই হয়ে থাকে।’

সর্বশেষ খবর