মঙ্গলবার, ১৪ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

জোড়া শিশুর অপারেশন বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে

মাহবুব মমতাজী

দেশে প্রথমবারের মতো এক মাথার জোড়া শিশুর অপারেশন হতে চলেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে তিন মাস ধরে শিশুটি ভর্তি রয়েছে। কর্তৃপক্ষ আগামী ২০ জুন এই জোড়া শিশুর অপারেশনের প্রস্তুতি নিয়েছে।

হাসপাতাল    কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসাবিজ্ঞানে এ ধরনের জোড়া বা যমজকে প্যারাসাইটিক টুইন বা অপূর্ণাঙ্গ যমজ বলা হয়। গত ৭ মার্চ শিশুটি জন্ম নেয়। তারপর থেকে এই হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন রয়েছে। সূত্র আরও জানায়, অপারেশনের মাধ্যমে শিশু দুটিকে পৃথক করা হবে। এ জন্য প্রায় আড়াই লাখ টাকা খরচ হবে। মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই চিকিৎসার সার্বিক ব্যয়ভার বহন করছে। জানা গেছে, প্যারাসাইটিক টুইন সমস্যা নিয়ে জন্মানো এই শিশুর স্বাভাবিক জন্ম দেন বাগেরহাটের হীরামণি নামে এক গৃহিণী। তার স্বামীর নাম মো. জাকারিয়া। তিনি পেশায় দিনমজুর। এর আগে হীরামণি তিনটি সুস্থ স্বাভাবিক কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছেন। যমজ শিশুটির জন্মের তৃতীয় দিন ১০ মার্চ বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শিশুটি হাসপাতালের সি ব্লকের পঞ্চমতলার ৫-ডি ওয়ার্ডে ১৩ নম্বর বেডে শিশু সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. রুহুল আমিনের নিবিড় তত্ত্বাবধানে আছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এর আগে ২০০১ সালে ডা. রুহুল হাসান-হোসেন নামে জোড়া যমজ শিশুর সফল অপারেশন করেছিলেন। এর মধ্যে হাসান বেঁচে গেছে। ২০০৮ সালে বর্ণা-বর্ষা নামে আরও একটি জোড়া যমজ শিশুর অপারেশন করেন তিনি। এর মধ্যে শুধু বর্ণা বেঁচে আছে। চিকিৎসকরা জানান, যমজ জোড়া শিশু দুটির মধ্যে অপূর্ণাঙ্গ শিশুটি যুক্ত আছে পূর্ণাঙ্গ শিশুর পেটের ডান দিকে। অপূর্ণাঙ্গ শিশুটির পিঠের হাড় পূর্ণাঙ্গ শিশুটির বুকের হাড়ের সঙ্গে মিশে আছে। পূর্ণাঙ্গ শিশুটির নাভিও অসম্পূর্ণ। একে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় এক্সমফালোস। এর ভিতরের যকৃত ও খাদ্যনালি রয়েছে একটি পর্দা দিয়ে ঢাকা অবস্থায়। একটি জটিল অস্ত্রোপচারের মধ্য দিয়ে নাভির অসম্পূর্ণতা ঠিক করতে হবে। এ জটিল অপারেশনে সহযোগিতায় থাকবেন অ্যানালজেশিয়া, অ্যানেসথেসিয়া অ্যান্ড ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিন বিভাগ এবং নবজাতক বিভাগের বিশেষজ্ঞরা। যমজ শিশুর মা হীরামণি বলেন, ‘জন্মের সময় কোনো সমস্যা হয়নি। অন্য কোনো অসুখ-বিসুখ নেই। শুধু একজনের পেটের ভিতর আরেকজন লাগানো।’ শিশু সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. রুহুল আমিন বলেন, ‘প্যারাসাইটিক টুইন শিশু থাকে একটি পূর্ণাঙ্গ, আরেকটি অপূর্ণাঙ্গ। একটির মাথা এবং বুকের অংশ থাকে না। এটি বেঁচে থাকে পূর্ণাঙ্গ শিশুর ওপর নির্ভর করে। এ ধরনের জোড়া পৃথকের অপারেশন আমাদের দেশে প্রথম। এক্ষেত্রে অপূর্ণাঙ্গ শিশুটিকে বাঁচানোর কোনো সুযোগ নেই। আশা করছি আমরা অপারেশনে সফল হব।’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান বলেন, ‘এই জোড়া শিশুর মাথা একটি, দুটি নয়। এক্ষেত্রে আমাদের একটি সেক্রিফাইস করতেই হবে। এক্সপার্টদের নিয়ে অপারেশনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সব ধরনের সাপোর্ট থাকবে।’

সর্বশেষ খবর