বুধবার, ১৫ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

দিল্লির কাছে শুল্ক বৃদ্ধির তথ্য চাইল ঢাকা

পোশাক খাত

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

ভারতের বাজারে বাংলাদেশি তৈরি পোশাক রপ্তানির ওপর কাউন্টার ভেইলিং ডিউটি (সিভিডি) বাড়ানোর কারণ জানতে চেয়েছে ঢাকা। এজন্য দেশটির স্থানীয় পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্কের হিসাবও চাওয়া হয়েছে। গত সপ্তাহে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় জয়েন্ট ট্রেড কমিশনের (জেটিসি) বৈঠকে ঢাকার পক্ষ থেকে এসব তথ্য চাওয়া হয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা তাদের কাছে সিভিডি বৃদ্ধির কারণ এবং স্থানীয় পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্কের হিসাব সম্পর্কে তথ্য চেয়েছি। সেটি পাওয়ার পর দেখব আমাদের পোশাক খাতের ওপর আরোপিত শুল্কস্তরের সঙ্গে তাদের স্থানীয় শুল্কের সমতা রয়েছে কিনা। এ ক্ষেত্রে যদি প্রমাণিত হয়, আমাদের পোশাক খাতে আরোপিত শুল্ক তাদের স্থানীয় শুল্কের চেয়ে বেশি তবে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নীতি অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে ভারত বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের ওপর সিভিডির ভিত্তিমূল্য বাড়িয়ে দ্বিগুণ করার প্রস্তাব করেছে। বর্তমানে ভারতে পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশি পণ্যের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের ৩০ শতাংশের ওপর নির্দিষ্ট হারে সিভিডি পরিশোধ করতে হয়। এ ভিত্তিমূল্য বাড়িয়ে দ্বিগুণ করার প্রস্তাব পাস হলে পণ্যের খুচরা মূল্যের ৬০ শতাংশের ওপর সিভিডি বা সম্পূরক শুল্ক পরিশোধ করতে হবে। এতে প্রস্তাবিত শুল্কের পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করেছেন সংশ্লিষ্টরা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (এফটিএ) মুনীর চৌধুরী গত সপ্তাহে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত জয়েন্ট ট্রেড কমিশনের বৈঠকে এ বিষয়ে বাংলাদেশের আপত্তি তুলে ধরেন। গতকাল তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ভারতের নতুন বাজেটে সিভিডি বাড়ানোর যে প্রস্তাব রয়েছে তা কার্যকর হলে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিতে এক থেকে দেড় শতাংশ বেশি হারে শুল্ক পরিশোধ করতে হবে। সিভিডি বাবদ বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিতে এখন প্রায় ২ শতাংশ শুল্ক পরিশোধ করতে হয়। নতুন প্রস্তাবের কারণে এটি বেড়ে ৩ শতাংশের ওপরে দাঁড়াবে। তবে সমহারে শুল্ক দেশটির স্থানীয় পণ্যের ওপরও বাড়ানো হয়েছে কিনা সেটিই এখন দেখার বিষয় বলে জানান ওই কর্মকর্তা। বাংলাদেশ রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি সালাম মুর্শেদী বলেন, অধিকাংশ পণ্যে শুল্ক সুবিধার ঘোষণা দিলেও ভারতের বাজারে পণ্য রপ্তানিতে এমনিতেই নানা ধরনের অশুল্ক বাধা রয়েছে। বিভিন্ন প্রদেশে বিভিন্ন হারে আমাদের পণ্য রপ্তানির বিপরীতে স্টেট ডিউটি দিতে হয়। এর ওপর নতুন করে সিভিডি বাড়ানো হলে এতে শুধু দেশের পোশাক রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হবে তাই নয়, দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর জন্য যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল তাও বাধাগ্রস্ত হবে। এর ফলে বাণিজ্য ঘাটতি আরও বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা এই ব্যবসায়ীর। মাদক ও অস্ত্র ছাড়া বাংলাদেশের প্রায় সব পণ্যের শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা দিয়েছে ভারত। তবে ২০১৩ সালে দেশটির বাজেটে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের ওপর সিভিডি আরোপ করে বিল পাস করা হয়। তখন থেকেই ওই সম্পূরক শুল্কারোপের সিদ্ধান্তে আপত্তি জানিয়ে তা প্রত্যাহারের জন্য ঢাকার পক্ষ থেকে একাধিকবার অনুরোধ জানানো হয়। ওই সময় দিল্লির কাছে লেখা এক চিঠিতে ঢাকা জানিয়েছিল, ‘ভারতের নয়া বাজেটে তাদের তৈরি পোশাক শিল্পে আরোপিত সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হলেও বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে আরোপিত সিভিডি বহাল রয়েছে। ফলে এতদিন দুই দেশের তৈরি পোশাক বাণিজ্যে শুল্কারোপে যে সমতা (লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড) ছিল তা নষ্ট হয়েছে। এ বাণিজ্য সমতা নিশ্চিত করার জন্য স্থানীয় শুল্কের অনুরূপ বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির ওপর আরোপিত সিভিডি প্রত্যাহার করা উচিত বলে মনে করে বাংলাদেশ।’ ঢাকার এই চিঠির পরও সিভিডি প্রত্যাহার করেনি দেশটি, বরং তিন বছর পর এবার নতুন বাজেটে তারা সম্পূরক শুল্কের বেইসলাইন বা ভিত্তি দ্বিগুণ করার প্রস্তাব করেছে।

সর্বশেষ খবর