বুধবার, ১৫ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

পদ্মা সেতু দেশের ভাবমূর্তি পরিবর্তন করেছে : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আইনজীবীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিতে সরকারের পদক্ষেপ সম্পর্কে বলেছেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি, যেন আমাদের বিচার বিভাগ ও আইনজীবীরা প্রত্যেকেই নিজ নিজ কর্মস্থলে ভালোভাবে একটি সুন্দর পরিবেশে কাজ করতে পারেন। তার জন্য যা যা করণীয় আমরা করে যাচ্ছি। ইতিমধ্যে অনেকগুলো প্রকল্পের কাজ চলছে সেগুলোও চলবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি পরিবর্তন করে দিয়েছে।’ গতকাল সুপ্রিমকোর্ট চত্বরে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি আয়োজিত ইফতার মাহফিলে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। ইফতারের আগে দেশ-জাতি এবং সমগ্র মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। সুপ্রিমকোর্ট বারের সভাপতি ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন। পদ্মা সেতুর প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ ছিল। আমরা সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে যাচ্ছি। আর এটিই বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি পরিবর্তন করে দিয়েছে। আজ বিশ্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়নে গতি অব্যাহত রাখার জন্য সবার দোয়া কামনা করে বলেন, ‘আমি আপনাদের কাছে দোয়া চাই। দোয়া করবেন। এই রমজান মাসে যেন আমাদের উন্নয়নের গতিটা অব্যাহত থাকে।’ প্রধানমন্ত্রী আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, এ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, ভোট ও ভাতের আন্দোলনসহ সব গণআন্দোলনেই আমরা দেখেছি আপনাদের একটা বিশাল ভূমিকা রয়েছে। ফলে আজ আমরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি, সুসংহত করতে পেরেছি এবং উন্নয়নের গতিধারা সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি এই গতিধারা অব্যাহত থাকবে, যাতে কখনো কেউ আমাদের হেয় চোখে দেখতে না পারে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে ডিজিটাল পদ্ধতি এসে গেছে। পুরনো আইনগুলোকে আমরা যুগোপযোগী করে পার্লামেন্টে পাস করে যাচ্ছি।’ যুগোপযোগী আইন ছাড়া একটি দেশ এগিয়ে যেতে পারে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী আইনজীবীদের জন্য তার সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরে বলেন, ‘সুপ্রিমকোর্টের অ্যানেক্স ভবন থেকে শুরু করে সারা বাংলাদেশে বিচার বিভাগকে ঢেলে সাজাতে সব ধরনের উদ্যোগের পাশাপাশি আইনজীবীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছি। লক্ষ্য নির্দিষ্ট করে বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে ২১৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু যেহেতু এরপর আমরা পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসতে পারিনি, আমাদের অনেক উন্নয়ন পরিকল্পনার মতো এটির কাজও বিএনপি-জামায়াত সরকার বন্ধ করে দেয়। আবার আমরা ক্ষমতায় আসার পর থেকে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।’

সুপ্রিমকোর্ট চত্বরে বহুবার তিনি এসেছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যখন ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করি তখন এখানে এসেছি। মামলার আসামি হিসেবে তো আসতেই হয়েছে। আর এ ছাড়া বিভিন্ন সময় দেখেছি, আমাদের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবীরা বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন। তাদের একটি বিরাট ভূমিকা সব আন্দোলন-সংগ্রামে রয়েছে। এমনকি আমার মনে পড়ে, ১৯৮৮ সালের ২১ জানুয়ারি যখন আমার ওপর তুমুল গুলি চলছিল চট্টগ্রামে, তখন সেখানকার আইনজীবীরা আমাকে বার ভবনে নিয়ে গিয়ে শেল্টার প্রদান করেছিলেন।’

তিনি আইনজীবীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বহুতল ভবন নির্মাণ প্রসঙ্গে বলেন, ‘বহুতল ভবন তো আমরা বহুই নির্মাণ করেছি। তবে আমাকে বলা হয়েছে বহুতল ভবনের কথা। কিন্তু এটা কিসের জন্য তা পরিষ্কার বলা হয়নি।’ এটাকে প্রধানমন্ত্রী ওকালতির মারপ্যাঁচ উল্লেখ করে ভবন নির্মাণ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ঢাকা বারসহ সারা দেশেই আমরা বহু জায়গায় প্রয়োজনের তাগিদে বহুতল ভবন করে দিয়েছি। এখানেও করে দেব।’ এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় তথ্য তিনি বারের সভাপতির কাছ থেকে জেনে নেবেন বলেও জানান।

সর্বশেষ খবর