বৃহস্পতিবার, ১৬ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

জাল নোট সিন্ডিকেট ফের সক্রিয়

ঈদকে ঘিরে সারা দেশে অপতৎপরতা

মানিক মুনতাসির

জাল নোট সিন্ডিকেট ফের সক্রিয়

ঈদ সামনে রেখে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে জাল নোটের সিন্ডিকেট। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে জাল নোট। তারা শুধু বাংলাদেশি নোট জাল করছে তা নয়, অন্য দেশের কাগুজে নোটও জাল করে বাজারে ছড়িয়ে দিচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে গত নয় মাসে প্রায় দেড় কোটি টাকা মূল্যের জাল নোট শনাক্ত করেছে প্রতিষ্ঠানটি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। জাল নোটের প্রচলন, ছাপানো, বিস্তার ও বহনের অপরাধে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ৬ হাজারেরও বেশি মামলা হয়েছে। ধরাও পড়েছে সহস্রাধিক অপরাধী। কিন্তু আইনের ফাঁক গলে তারা জামিনে বেরিয়ে পড়ছে। আর জেলের বাইরে এসে আবার জাল নোটের সিন্ডিকেটের সঙ্গে কাজ করছে বলে জানা গেছে। সঠিক তথ্য-প্রমাণ আর সাক্ষীর অভাবে এসব মামলা বছরের পর বছর ঝুলে আছে। জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শুভংকর সাহা বলেন, জাল নোটের সিন্ডিকেট ধরতে সারা বছরই অভিযান চলে। কিন্তু ঈদের আগে অপরাধীরা একটু বেশি তত্পর হয়ে ওঠে। এজন্য প্রতি বছর ঈদের আগে জাল নোট প্রতিরোধে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়। মামলার নিষ্পত্তি না হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, সেগুলো তো আদালতের বিষয়। সূত্র জানায়, ঈদ সামনে রেখে রাজধানীতে অন্তত অর্ধশত সিন্ডিকেট তত্পর হয়ে উঠেছে। তারা বিভিন্ন মার্কেট, শপিং মল, দোকানে জাল নোট ছড়িয়ে দিচ্ছে। এদের প্রতিরোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও এফবিসিসিআইর পক্ষ থেকে বিভিন্ন শপিং মল এবং মার্কেটে জাল নোট শনাক্তকারী যন্ত্র সরবরাহ করা হয়েছে। পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ছাড়া রাজধানীর গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ী, নিউমার্কেট, ফার্মগেট, টঙ্গী, সায়েদাবাদসহ কয়েকটি পয়েন্টকে জাল নোট সরবরাহের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব পয়েন্টে পুলিশ, র‌্যাবসহ গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিদের টহল বাড়ানো হয়েছে। জাল নোট বহন বা প্রচলনকারীদের ধরতে বিভিন্ন মার্কেট ও শপিং মলে আকস্মিক টহলও দিচ্ছে আইনশৃৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত এপ্রিল পর্যন্ত সারা দেশে জাল নোট-সংক্রান্ত মামলা রয়েছে ৬ হাজার ২৫৭টি। আগের বছরের একই সময়ে মামলার সংখ্যা ছিল ৫ হাজার ৯৩৩। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চার মাসে জাল নোট বিষয়ে মামলা হয়েছে ১০৪টি। আগের বছরের একই সময়ে মামলার সংখ্যা ছিল ১৪৫টি। এসব মামলা বছরের পর বছর ঝুলে আছে। সঠিক তথ্য-প্রমাণ বা সাক্ষী না থাকায় মামলাগুলো নিষ্পত্তি করা যাচ্ছে না। ফলে অপরাধীরাও পার পেয়ে যাচ্ছে। উপযুক্ত শাস্তিও দেওয়া যাচ্ছে না জাল নোটের হোতাদের।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি জাল করা হয় ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট। প্রতিষ্ঠানটির তথ্যমতে, ২০১৫ সালের ৯ আগস্ট থেকে ২০১৬ সালের ৬ জুন পর্যন্ত ১ কোটি ৬১ লাখ ৩১ হাজার ২০০ টাকার জাল নোট ধরা পড়েছে। এ সময়ে মোট ১১১টি কেস জমা পড়েছে। এর মধ্যে ১০০ টাকার নোট ১ হাজার ১৩২টি, ৫০০ টাকার নোট ৩ হাজার ৫৫২টি ও ১০০০ টাকার নোট রয়েছে ১৪ হাজার ২৪২টি। সব মিলিয়ে ১০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকার মোট জাল নোট ধরা পড়েছে ১৮ হাজার ৯২৬টি। এদিকে বাজারে জাল নোটের বিস্তার ঠেকাতে এবং এ-সংক্রান্ত মামলার বিচারিক কার্যক্রম দ্রুত শেষ করতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের আওতায় আনার ঘোষণা দিলেও গত তিন বছরেও তা করতে পারেনি সরকার। এ অপরাধের শাস্তি ও জেল-জরিমানা বৃদ্ধির সুপারিশ করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তিন বছর আগে তৎকালীন গভর্নর ড. আতিউর রহমানের পাঠানো এ-সংক্রান্ত এক প্রস্তাবনা নিয়ে আবারও কাজ শুরু করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। প্রস্তাবনাটি অধিক যাচাই ও বিচার-বিবেচনার জন্য স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এতে জাল টাকার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির বিধান বাড়িয়ে ১০ বছর করা হতে পারে। আর এ-সংক্রান্ত অপরাধীদের মামলা ও বিচারিক কার্যক্রম ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে করার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে সরকার। সূত্রমতে, জাল নোট ছাপানো, সরবরাহ, বিস্তারের সঙ্গে জড়িতদের তাত্ক্ষণিক বিচার করতে এ প্রক্রিয়াকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের আওতায় আনতে সুপারিশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেননা জাল নোটের মামলা বছরের পর বছর ঝুলে থাকে। নিষ্পত্তির আগেই আসামিরা জামিনে বেরিয়ে এসে আবার এ ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ড চালাতে থাকে। ফলে একদিকে জাল নোটের বিস্তার ঠেকানো যায় না, অন্যদিকে এর সঙ্গে জড়িতদেরও বিচার হয় না বলে মনে করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

সর্বশেষ খবর