বৃহস্পতিবার, ১৬ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

বন্দীদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে নতুন কারাগারে

আলী আজম

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের মালামাল সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে কেরানীগঞ্জে নবনির্মিত অত্যাধুনিক কারাগারে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু সরঞ্জাম ও জরুরি কাগজপত্র কেরানীগঞ্জ কারাগারে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ঈদের পর পুরোপুরি স্থানান্তর করা হবে। তবে বন্দীদের মধ্যে নারী ও শিশুদের নেওয়া হবে গাজীপুর কাশিমপুর কারাগারে এবং পুরুষদের নেওয়া হবে নবনির্মিত কেরানীগঞ্জ কারাগারে। গতকাল কারা অধিদফতরের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। কারা অধিদফতরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, কেরানীগঞ্জ কারাগার এখনো পুরোপুরি প্রস্তুত হয়নি। এ জন্য ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মালামাল এবং অফিশিয়াল সরঞ্জাম ধীর গতিতে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। কিছু কিছু মালামাল ইতিমধ্যে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বন্দীদের সরিয়ে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে সংকেত পেলে ঈদের পর ১৫-১৬ জুলাইয়ের মধ্যে বন্দীদের স্থানান্তর করা হবে। কেরানীগঞ্জ কারাগার সম্পূর্ণ প্রস্তুত না হওয়ায় কয়েদিদের স্থানান্তরের ক্ষেত্রে সমস্যা পড়তে হবে কারা কর্তৃপক্ষের। নবনির্মিত কারাগারটি গত ১০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করলেও কবে নাগাদ কীভাবে, কতদিনে কয়েদি-হাজতিদের নতুন কারাগারে স্থানান্তর করা হবে সে ব্যাপারে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সংকেত পেলে কয়েদি স্থানান্তর শুরু হবে। এখনো সেখানে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, ড্রেনেজ ব্যবস্থা সম্পন্ন হয়নি। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলছেন, নতুন কারাগারে গ্যাস সংযোগ না থাকায় রান্নার জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে সাত টন লাকড়ি লাগবে। এ নিয়ে কারা কর্তৃপক্ষ চিন্তিত। প্রতিদিন সকালে ৮ হাজারের বেশি বন্দীর জন্য এক হাজার কেজির বেশি আটা রুটি বানাতে হবে। রুটি বানাতে লাগবে এক টন লাকড়ি। দুপুরে ও রাতে ভাত, ডাল, তরকারি রান্নার জন্য লাগবে ৩-৬ টন লাকড়ি। ফলে লাকড়ি জোগাড়ের বিষয় নিয়ে চিন্তা-ভাবনা চলছে। কারা সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কয়েদির সংখ্যা প্রায় ৮ হাজার। এদের মধ্যে যুদ্ধাপরাধী, জঙ্গি, খুনি, ডাকাত, মাদকাসক্ত, ফাঁসি ও যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধী রয়েছে। বিপুলসংখ্যক কয়েদিকে নতুন কারাগারে স্থানান্তরের সময় সার্বিক ব্যবস্থা ও সুষ্ঠু নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টি নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। ৮ হাজার কয়েদিকে স্থানান্তর অনেক ঝক্কি-ঝামেলার কাজ। নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখেই তা করা হবে। সম্প্রতি কাশিমপুর কারাগারের সামনে সাবেক এক কারারক্ষীকে গুলি করে হত্যার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার কথা ভাবতে হচ্ছে। নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে কারা কর্তৃপক্ষের সমন্বয় সভা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সূত্রটি বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিব্রত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ফলে জঙ্গি হামলাসহ বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই কয়েদি স্থানান্তর কিছুদিন বিলম্বিত হচ্ছে। রোজা ও ঈদে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রচণ্ড চাপে থাকে। তাই নিরাপত্তার দিক বিবেচনা করে আপাতত কেরানীগঞ্জে কয়েদি স্থানান্তর হচ্ছে না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েদি স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। কয়েদি স্থানান্তরে বিপুলসংখ্যক প্রিজন ভ্যান প্রয়োজন হবে। কেরানীগঞ্জে যাওয়ার পথে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্যও প্রয়োজন হবে। এ ছাড়া কারাগারের ভিতরে যে কাজগুলো অসমাপ্ত রয়েছে, ওই কাজগুলোও সম্পন্ন করতে হবে। সেগুলো সম্পন্ন করা না হলে কয়েদি ও বন্দীদের রাখা দুষ্কর হয়ে পড়বে।

কারা অধিদফতরের ডিআইজি গোলাম হায়দার বলেন, কিছু কিছু মালামাল সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ঈদের পর পুরোপুরি স্থানান্তর করা হবে। ওখানে গ্যাস সংযোগ নেই। এতগুলো লোকের রান্না করা হবে লাকড়িতে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পেলে আগামী ১৫-১৬ জুনের মধ্যে বন্দীদের স্থানাস্তর সম্পন্ন হবে। প্রসঙ্গত, ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জে ১৯৪ দশমিক ৪১ একর জমির ওপর নতুন কারাগার তৈরি করা হয়েছে। সুরক্ষার জন্য রয়েছে ২৫ ফুট উঁচু সীমানা প্রাচীর। কারাগারের চার কোনায় তৈরি করা হয়েছে ৪০ ফুট উঁচু ওয়াচ টাওয়ার। কারাগারের ধারণ ক্ষমতা ৪ হাজার ৫৯০ জন। তবে ৭-৮ হাজার বন্দী থাকতে পারবেন। এদিকে বন্দী স্থানান্তরের পর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জায়গাটিতে নির্মাণ করা হবে পার্ক, কনভেনশন সেন্টার, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও জাদুঘর।

সর্বশেষ খবর