বৃহস্পতিবার, ১৬ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

হাইকোর্ট মাজারের ইফতারে হাজারো মানুষের ঢল

বাদল নূর

হাইকোর্ট মাজারের ইফতারে হাজারো মানুষের ঢল

পবিত্র রমজান মাসের প্রতিদিনই হাইকোর্ট মাজারে ইফতার জমে উঠছে। যাতে শামিল হচ্ছেন চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, দিনমজুর, ভিক্ষুক, পথচারী, পাগল-ফকির, মিসকিন, নারী, বৃদ্ধ, শিশু এবং মসজিদের ইমাম, খাদেম থেকে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। হাজারও মানুষের ঢল নামছে প্রতিদিন।

মঙ্গলবার সরেজমিনে মাজারে গিয়ে দেখা যায়, আছরের নামাজ শেষে সারি সারি মানুষ বসেছেন ইফতার করতে। তাদের সামনে প্রায় সাড়ে ৪০০ বড় বড় প্লেটে সাজানো মুড়ি, পেঁয়াজু, বেগুনী, খেজুর, জিলাপি, সরবত, আম ও আপেল। প্রতি প্লেটে চারজনের ইফতারির ব্যবস্থা। সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার মানুষ ইফতারে শামিল হন। পুরুষের পাশাপাশি রয়েছে নারীদের জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা। প্রায় ৫০০ মহিলা এখানে ইফতারে অংশ নেন। এ জন্য দুই থেকে আড়াই হাজার গ্লাস রয়েছে। ইফতার সামগ্রীরও কমতি থাকে না।  মাজার ভক্তরাই পাঠান এসব ইফতার। সূত্র জানায়, হাইকোর্ট মাজারের আশপাশে অসংখ্য পাগল-ফকির রয়েছেন। রমজান মাসে পাগল-ফকিরের সংখ্যা বেড়ে যায়। পাগল-ফকির আর ভবঘুরদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করা হয় হাইকোর্ট মাজারে। মাজারে ইফতারের পাশাপাশি রয়েছে নঙ্গরখানায় ফকির-গরিব-কাঙ্গালদের খাবারের ব্যবস্থা। ইফতারির আগে মোনাজাতে অংশ নেন মাওলানা আহমেদ রেজা ফারুকি। সবাই একসঙ্গে আল্লাহর দরবারে হাত তুলে মোনাজাত করেন। এখানে ধনী-গরিবের কোনো ভেদাভেদ নেই।  ইফতার শেষে এ মসজিদে রাত ৯টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত তারাবির নামাজ হয়। এভাবে সুপ্রিমকোর্ট মাজার প্রশাসন কমিটির তত্ত্বাবধানে আবহমানকাল থেকে ইফতার চলছে। এটি হজরত শাহ খাজা শরফুদ্দিন চিশতী (রা.)-এর মাজার নামে পরিচিত। মো. শহীদুল্লাহ, তার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরে। প্রায় ২৫ বছর ধরে হাইকোর্ট মাজারে থাকেন। বাড়ি-ঘর, সংসার-সন্তান কিছুই নেই তার। মাজার মসজিদকে ঘিরে তার দিন কাটছে। ইফতার শেষে এখানেই কোনো এক জায়গায় রাত্রিযাপন করেন। তার মতো আরও অনেকে দীর্ঘদিন পড়ে আছেন হাইকোর্ট মসজিদে। যেমন আব্দুল করিম, বাড়ি কুড়িগ্রামে। কাওরান বাজারে কাজ করেন। বিশেষ মোনাজাতের বরকতের আশায় তিনি আসেন ইফতার করতে হাইকোর্ট মসজিদে। মো. হাসান আলী, তার গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনায়।

 তিনি প্রায় ৪৪ বছর ধরে হাইকোর্ট মাজার মসজিদকে আঁকড়ে ধরে আছেন। মনের টানেই এ মসজিদে আসেন তিনি। সবার সঙ্গে ইফতার করতে তার বেশ ভালো লাগে। মায়া ছাড়তে পারেন না বলেই এ মসজিদকে আঁকড়ে আছেন।

আর্থিক সংস্থান সম্পর্কে মসজিদের অফিস সহকারী এবং হেফজ খানার শিক্ষক হোসাইন মুহাম্মদ ফারুক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশি-বিদেশি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের আর্থিক সাহায্য-সহযোগিতায় ইফতারের টাকা সংগ্রহ হয়। ব্যক্তি উদ্যোগেও অনেকে এ মসজিদে ইফতার নিয়ে আসেন।

সর্বশেষ খবর