সোমবার, ২০ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

রসাল কুমিল্লার রসমালাই

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

রসাল কুমিল্লার রসমালাই

ইফতারির টেবিলে কুমিল্লার রসমালাইয়ের উপস্থিতি অন্য রকম আবহ প্রকাশ করে। তাই ইফতারিতে রসমালাইয়ের চাহিদা ঠিক রাখতে কুমিল্লা নগরীর মনোহরপুরের রসমালাইয়ের দোকানগুলোতে বিকাল থেকে ক্রেতাদের লাইন চোখে পড়ার মতো। দুধ, চিনি আর অল্প ময়দার সমন্বয়ে তৈরি হয় রসমালাই। বাংলাদেশে বিদেশি অতিথি আপ্যায়নের মেন্যুতেও থাকে কুমিল্লার রসমালাই। সাবেক মন্ত্রী আকবর হোসেন যখন সংসদে, সমাবেশে কথা বলতেন তখন অনেকে বলতেন রসমালাইয়ের এলাকার লোক, তাই তার কথায় এতো রস! মিষ্টির ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে রসমালাইয়ের ইতিহাস। বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিক থেকে রসমালাই তার রসে মাতোয়ারা করে রেখেছে সবাইকে। প্রথমে নাম ছিল ক্ষীর ভোগ। পূর্ব পাকিস্তান হওয়ার পর অবাঙালিরা কুমিল্লায় এসে ক্ষীর ভোগকে রসমালাই বলতে শুরু করে। উৎসব-আনন্দে রসমালাই ছাড়া কুমিল্লাবাসীর যেন চলেই না। প্রথম দিকে মাটির হাঁড়িতে বিক্রি হতো রসমালাই। এরপর পলিথিনের ঠোঙ্গা আর বর্তমানে প্লাস্টিকের কৌটা।  যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে কুমিল্লার রসমালাই এখন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। বহির্বিশ্বে বিশেষ করে যেসব দেশে বাংলাদেশের মানুষের আধিক্য রয়েছে সেখানেও প্রবাসীদের মাঝে কুমিল্লার রসমালাইর অনন্য কদর। রসমালাইয়ের কারিগররা জানান, কুমিল্লার বাইরে ‘কুমিল্লার রসমালাই’ বলে বিক্রি করা হলেও কুমিল্লার মতো ভালো কারিগর না থাকায় আসল রসমালাইয়ের স্বাদ পাওয়া যায় না। কুমিল্লা শহরের বাইরে, বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে রয়েছে অসংখ্য রসমালাইয়ের দোকান। দোকানগুলো ব্যবহার করছে কুমিল্লার আসল রসমালাইয়ের দোকান মাতৃভাণ্ডার, ভগবতী পেড়া ভাণ্ডার ও শীতল ভাণ্ডারের নাম। অথচ তাদের কোনো শাখা অন্য কোথাও নেই। শহরের মনোহরপুর কালীবাড়ীর সামনে মাতৃভাণ্ডার, ভগবতী পেড়া ভাণ্ডার ও শীতল ভাণ্ডারের অবস্থান। এ ছাড়া শহরে পোড়াবাড়ী সুইটস, জলযোগ, জেনিস সুইটস ভালো মানের রসমালাই তৈরি করছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার পদুয়ার বাজার ও ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় রয়েছে অনেক নকল রসমালাইয়ের দোকান। তারা মাতৃভাণ্ডারের নাম ব্যবহার করছে কৌশলে। কোনোটার নাম আদি মাতৃভাণ্ডার, কোনোটার নাম নিউ মাতৃভাণ্ডার। তারা ভেজাল দিয়ে কম দামে রসমালাই বিক্রি করছে। ভগবতী পেড়া ভাণ্ডারের স্বত্বাধিকারী অ্যাডভোকেট কিরণময় দত্ত জানান, কুমিল্লার রসমালাই বিদেশেও যাচ্ছে। গুণগত মান ঠিক রাখলে ৩৬ ঘণ্টায় রসমালাই নষ্ট হয় না। ভেজাল ব্যবসায়ীরা নিম্নমানের গুঁড়ো দুধ আর ময়দা দিয়ে রসমালাই তৈরি করে গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। গরুর খাঁটি দুধ ছাড়া রসমালাই তৈরি করা সম্ভব নয়। মাতৃভাণ্ডারের ম্যানেজার তপন জানান, মান ঠিক রেখে কেজি ২৬০ টাকার কমে রসমালাই বিক্রি করা সম্ভব নয়। চিনি আর গরুর দুধের দাম বাড়ছে, তাই বাড়ছে রসমালাইয়ের দামও।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর