মঙ্গলবার, ২১ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

ফের ঢাকা ঘেরাও করবে হেফাজত

শিক্ষানীতি ও শিক্ষা আইন বাতিলের দাবি

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

শিক্ষানীতি ও শিক্ষা আইন বাতিলের দাবি নিয়ে ফের মাঠে নামছে দেশের আলোচিত অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। ২০১৩ সালের মতো সারা দেশ থেকে ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ করে ঢাকা ঘেরাওয়ের চিন্তাভাবনা করছেন তারা। এ আন্দোলন দুর্বার করতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় কর্মীদের সুসংগঠিত করতে চলছে ইফতার মাহফিল ও আলোচনা সভার নামে দৌড়ঝাঁপ। আগামী মাসের শুরুতেই কেন্দ্রীয় শূরা কমিটির বৈঠকে আন্দোলনের রূপরেখা নির্ধারণ করে ঘোষণা দেওয়া হবে ঢাকা ঘেরাও কর্মসূচি।

হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মঈনুদ্দীন রুহী বলেন, শিক্ষানীতি ও শিক্ষা আইন বাতিলের দাবিতে দেশের প্রত্যেক জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিয়েছি। পরে বিক্ষোভ সমাবেশ ও সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিবাদ জানিয়েছি। তার পরও সরকার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেনি। তাই দাবি আদায়ের জন্য আমরা আবারও ঢাকা ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি ঘোষণা দিতে যাচ্ছি। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে শূরা বৈঠক শেষে কর্মসূচির ঘোষণা আসবে।

হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, কর্মীদের চাঙ্গা ও দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে দেশের বিভিন্ন জায়গার নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পরামর্শ সভা করা হচ্ছে। এসব সভায় কর্মীদের আন্দোলনের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। ঈদের পরই শিক্ষানীতি ও শিক্ষা আইনের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত আন্দোলনে নামবে হেফাজতে ইসলাম। বিগত সময়ের মতো সারা দেশ থেকে ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ এবং ঢাকা ঘেরাওয়ের চিন্তাভাবনা রয়েছে।

জানা যায়, শিক্ষানীতি ২০১০ ও শিক্ষা আইন ২০১৬ বাতিল এবং প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তকগুলোয় ইসলামী ভাবধারা সংযোজনের দাবিতে মাঠে নেমেছে হেফাজতে  ইসলাম। সম্প্রতি হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা আহমদ শফী দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে কয়েকজন শীর্ষ নেতার সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে আন্দোলন গড়ে তুলতে সারা দেশের নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরপর দেশের জেলা কমিটির নেতারা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্মারকলিপি প্রদান করেন। পরে সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশ এবং সর্বশেষ গত শুক্রবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে শিক্ষানীতি বাতিলের দাবি জানান তারা। হেফাজতে ইসলামের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আন্দোলন চাঙ্গা করতে গত দুই মাসে দেশের প্রায় ৩০ জেলা কমিটির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় নেতারা। বৈঠকে ঈদের পর আন্দোলনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। বাকি জেলা নেতৃবৃন্দের সঙ্গে রমজানের মধ্যে বৈঠকে বসা হবে। জেলা নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষ করে ঈদের প্রথম সপ্তাহে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কার্যালয় চট্টগ্রামের দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসায় বৈঠকে বসবেন শূরা কমিটির সদস্যরা। ওই বৈঠক থেকেই ঢাকা অভিমুখে যাত্রা এবং ঢাকা ঘেরা কর্মসূচির তারিখ ঘোষণা করা হবে। হেফাজতে ইসলামের মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের দাবি, হেফাজত আমিরের ছেলে মাওলানা আনাস মাদানী, কেন্দ্রীয় নেতা কাতেব ইলিয়াছ ওসমানী, জুনায়েদ আল হাবিব, নূর হোসাইন কাসেমীসহ কয়েকজন নেতা আলোচিত এ সংগঠনকে কার্যত ‘পকেট’ সংগঠনে পরিণত করেছেন। তাদের আগ্রহ না থাকার কারণে এতদিন কোনো কর্মসূচি দেওয়া হয়নি। এই নেতাদের অনাগ্রহের কারণে মূলত হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা আদায় আন্দোলন থমকে আছে। এমনকি হেফাজত আমিরের ছেলের বিরাগভাজন হওয়ার ভয়ে এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের কেউ গণমাধ্যমে মুখ খুলছেন না। হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ২০১৩ সালের ৫ মে সারা দেশ থেকে ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ করে এবং ঢাকার মতিঝিল শাপলা চত্বরে সমাবেশ করে আলোচনায় আসে। পরে পুলিশি অভিযান ও কেন্দ্রীয় নেতাদের নামে মামলা দায়েরের পর আত্মগোপনে চলে যান হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতারা। দেশের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক হয়ে যায় হেফাজতের কার্যক্রম। পরে প্রকাশ্যে আসেন নেতা-কর্মীরা। এ সময় হেফাজতের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকবার ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় মহাসমাবেশ, বিক্ষোভ, ওলামা-মাশায়েখ সম্মেলনসহ নানা কর্মসূচি ঘোষণা দিলেও বিভিন্ন অজুহাতে তা স্থগিত করা হয়।

সর্বশেষ খবর