মঙ্গলবার, ২১ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

সাদা সিংহশাবক বুশ-হিটলারকে মা দুধ দেয় না

মোস্তফা কাজল

সাদা সিংহশাবক বুশ-হিটলারকে মা দুধ দেয় না

মায়ের আদর-যত্ন না পাওয়া বুশ আর হিটলারকে গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের চিকিৎসা কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। এ বুশ ও হিটলার আর কেউ নয়, তারা হলো সাফারি পার্কে জন্ম নেয়া বিরল প্রজাতির দুটি সাদা সিংহশাবক। সিংহশাবকগুলো ধীরে ধীরে বড় হয়ে উঠছে। এ ছাড়া আরও ১২টি সিংহশাবক কাছাকাছি সময়ে জন্মেছে এ সাফারি পার্কে। তাদের বয়স তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে। বুশ আর হিটলারের জন্ম এ বছরের ২৬ জানুয়ারি,  জানিয়েছেন পার্কের দায়িত্বরত কর্মকর্তা শিবপ্রসাদ ভট্টাচার্য। জন্মের পর দেখতে সাদা ও ব্যতিক্রম হওয়ায় মা সিংহ তাদের দুধ খেতে দিত না। এতে তারা শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে যাচ্ছিল। এরপর পার্কের অ্যানিমল কিপার নূরুন নবী মিন্টু তাদের যত্ন নেওয়া শুরু করেন। নিজেই ফিডার দিয়ে থাইল্যান্ড থেকে আনা কুকুকেট নামের বিশেষ দুধ দৈনিক আটবার খাওয়াতেন। এখনো তাদের দিনে দুবার করে দুধ খাওয়ানো হয়। এ ছাড়া অন্য সিংহশাবকদের মতো প্রতিদিন কিছু মাংস খেতে দেওয়া হয়। কর্তৃপক্ষ বলছে, পশু-পাখির তুলনায় পার্কে জনবল কম হলেও তাদের যত্ন ও চিকিৎসায় অবহেলা হয় না। অন্যদিকে যতই দিন যাচ্ছে ততই পার্কে দর্শনার্থীর চাপ বাড়ছে বলে জানায় সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে এ পর্যন্ত ১৪টি সিংহশাবকের জন্ম হয়েছে। এর মধ্যে বিরল প্রজাতির সাদা শাবক দুটির নাম রাখা হয়েছে হিটলার ও বুশ। অ্যানিমল কিপার নূরুন নবী মিন্টু শুরু থেকেই পার্কের পশু-পাখির যত্ন নেওয়া ও খাবার খাওয়ানোর দায়িত্ব পালন করে আসছেন। সাদা সিংহশাবক দুটি অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি নিজেই সুস্থ করে তোলার দায়িত্ব নেন। নূরুন নবী জানান, শাবক দুটি এখন সুস্থ, দৌড়াতে পারে। বাইরে ছেড়ে দিলে চলাফেরা করতে পারে। কাউকে কিছু বলে না। যে কেউ এখন তাদের কোলে তুলে নিতে পারেন। পার্কের চিকিৎসা কেন্দ্রে একটি সুরক্ষিত কক্ষে রাখা হয়েছে সাদা সিংহশাবক হিটলার ও বুশকে। তাদের পরিচর্যা করা হচ্ছে। নূরুন নবী জানান, সিংহের শাবক দুটিকে ছয় মাস পর্যন্ত হাসপাতালের ওই কক্ষেই রাখা হবে। পরে তাদের অন্য সিংহের দলে দেওয়া হবে। পার্কের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. নিজাম উদ্দিন চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পুরুষ সিংহ চার বছর আর নারী সিংহ তিন বছর হলেই প্রাপ্তবয়স্ক হয়। সিংহী একসঙ্গে দু-তিনটি বাচ্চা প্রসব করে। সাফারি পার্কের বন্যপ্রাণী সুপারভাইজার মো. আনিসুর রহমান বলেন, সাধারণত দুই ধরনের সিংহ দেখা যায়। যার একটি এশিয়ান ও অন্যটি আফ্রিকান। পার্কে থাকা আফ্রিকান লাল সিংহের জন্ম নেওয়া শাবকদের গায়ের রং সাদা হয়েছে। জিনগত কারণে শাবকদের রং সাদা হয়েছে। এমনটি যে কোনো প্রাণীর ক্ষেত্রেই হতে পারে। জেনেটিক কারণেই মা-বাবা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা রং পেয়েছে শাবক দুটি, যার কারণে মা-বাবা শাবক দুটিকে মেনে নিতে পারছে না। পার্কের ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা শিবপ্রসাদ ভট্টাচার্য জানান, সাদা দুটি সিংহশাবকসহ অন্য শাবকদের অনেক যত্ন নেওয়া ও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ সাফারি পার্কে বর্তমানে বড় ও ছোট মিলিয়ে সিংহ রয়েছে ৩৯টি। এ ছাড়া বাঘ রয়েছে ১০টি, ভাল্লুক ১৫টি, ক্যাঙ্গারু ৩টি, জিরাফ ১০টি, জেব্রা ১৪টি ও বনগরু ১২টি। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দেড় বছর বয়সী ১৮টি সিংহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে আনা হয়। সেই থেকে সব কটি সিংহকে একত্রে পার্কের কোর সাফারি জোনের সিংহ বেষ্টনীতে উন্মুক্ত করে রাখা হয়েছে। বসবাস-উপযোগী পরিবেশ পেয়ে বেড়ে ওঠে সিংহগুলো।

সর্বশেষ খবর