বুধবার, ২২ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা
মানুষ মানুষের জন্য

শিল্পী মুন্না কিডনি দিলেন, দেবেন দুই চোখও

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

শিল্পী মুন্না কিডনি দিলেন, দেবেন দুই চোখও

তিনি এরই মধ্যে তার বাম কিডনি দান করেছেন এক কিশোরকে। নিজের দুটি চোখও দিয়ে দেবেন। তার মৃত্যুর পর অন্ধ কল্যাণ সমিতি চোখ তুলে নিয়ে যাবে জীবিত মানুষের দৃষ্টিশক্তি তৈরির জন্য। তিনি কুমিল্লা নগরীর নতুন চৌধুরীপাড়া এলাকার বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম মুন্না। পেশায় আলপনা শিল্পী। বয়স ৩৩। তিনি এ পর্যন্ত ৪১ বার রক্তদান করেছেন। মৃত আহসানুল ইসলাম ও আনোয়ারা বেগমের পাঁচ ছেলেমেয়ের মধ্যে মুন্না একমাত্র ছেলে। তার এ দানে মুগ্ধ বন্ধু ও প্রতিবেশীরা। নগরীর রেসকোর্সের ফজলুল হকের ছেলে নাজমুল হাসান সুমনকে (১৬) কিডনি দান করেন মুন্না। সুমন বর্তমানে কুমিল্লা সরকারি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। মুন্না জানান, সুমন তার বন্ধু রনির শ্যালক। সুমনের বাবাকেও মুন্না রক্ত দিয়েছিলেন। এক সময় জানতে পারেন সুমনের দুটি কিডনি নষ্ট। মুন্না তাকে একটি কিডনি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। বাকি শুধু মাকে রাজি করানো। এক ছেলে বলে তিনি রাজি হচ্ছিলেন না। মুন্না মাকে বুঝান— মানুষের নিঃশ্বাসের বিশ্বাস নেই। যে কোনো সময় আমিও মারা যেতে পারি। তাই তার অঙ্গ দিয়ে তিনি আরেকটি মানুষের মাঝে বেঁচে থাকতে চান। ২০১৫ সালের ৪ সেপ্টেম্বর দিল্লির পুষ্পিতা সিংহানিয়া হসপিটালে তার কিডনি নিয়ে সুমনের দেহে সংযোজন করা হয়। মুন্নাকে এ দানের বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করেন জাকির হোসেন নামের একজন সাইকেল মিস্ত্রি। তিনি কুমিল্লা জিলা স্কুলের দ্বিতীয় গেটে বসতেন। সেখানে মুন্না আড্ডা দিতে এসে তার সঙ্গে পরিচয় হয়। জাকির হোসেন অনেকের জীবন পাল্টিয়ে দিয়েছেন বলে মুন্নার দাবি। তিন বছর আগে তিনি মারা গেছেন। মুন্না মানুষের কল্যাণে এগিয়ে আসার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান।

কিডনি গ্রহীতা নাজমুল হাসান সুমন বলেন, দুই ভাই তিন বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। মুন্না তার জীবনে ফেরেশতা হিসেবে এসেছেন। তাকে নতুন জীবন দিয়েছেন। তিনি মুন্নার কাছে কৃতজ্ঞ। মুন্নার প্রতিবেশী সিটি কাউন্সিলর জমির উদ্দিন খান জম্পি বলেন, এখন অনেকে কিডনি বিক্রি করেন। আমিও মুন্নার ক্ষেত্রে প্রথমে তাই ভেবেছিলাম। কিন্তু খোঁজ নিয়ে দেখলাম তিনি সত্যিকারের দাতা। তার অন্তরে মানুষের জন্য গভীর মমতা রয়েছে। তিনি বিপদে ছুটে গিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ান। তার কিডনি, রক্ত ও চক্ষু দান আমার দেখা এক অসাধারণ ঘটনা।

সর্বশেষ খবর