বৃহস্পতিবার, ২৩ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

আগাম কর ও ভ্যাটে উৎকণ্ঠা

ভার বহনে অক্ষমতা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী অর্থমন্ত্রী ও এনবিআরে ব্যবসায়ীদের চিঠি

রুহুল আমিন রাসেল

২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্য সংযোজন কর— মূসক বা ভ্যাট ও অগ্রিম আয়করের ভার বহন করা ব্যবসায়ীদের পক্ষে সম্ভব নয়। এতে দ্রব্যমূল্য ও মূল্যস্ফীতি ব্যাপকহারে বাড়বে বলে সরকারকে সাফ জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ভ্যাট আপিলব্যবস্থায় ব্যবসায়ীরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত ও হয়রানির শিকার হবেন। করদাতারা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ থেকে হবেন বঞ্চিত। ফলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতসহ সম্পূর্ণ শিল্পায়ন প্রক্রিয়া ভেঙে পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই।

গত ১৯ জুন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড—এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানের কাছে প্রস্তাবিত বাজেট-পরবর্তী আমদানি শুল্ক, ভ্যাট ও আয়করসংক্রান্ত প্রস্তাব এবং সুপারিশ পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়ে দেওয়া পত্রে এসব কথা বলেছেন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন—এফবিসিসিআই সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ। তার দাবি শিল্পায়ন ও বিনিয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন কার্যক্রমকে এগিয়ে নেওয়ার স্বার্থে এফবিসিসিআইর প্রস্তাব পুনর্বিবেচনা করা হবে।

জানা গেছে, এনবিআর চেয়ারম্যানকে দেওয়া প্রস্তাব এবং সুপারিশমালার প্রায় অনুরূপ কপি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকেও দিয়েছে এফবিসিসিআই। এ নিয়ে দু-এক দিনের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এফবিসিসিআই নেতাদের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

এর আগে ২ জুন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত নতুন অর্থবছরের বাজেট উত্থাপনের পরই নিজেদের পর্যালোচনায় হতাশা প্রকাশ করেছে এফবিসিসিআই। সংগঠনটি ১১ জুন তাদের সংবাদ সম্মেলনে বলেছে, প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যবসায়ীদের পেটের খবর নিয়ে এনবিআর ছুরি চালিয়েছে। এনবিআরকে এফবিসিসিআই ৪৪৭টি প্রস্তাব দিলেও বাজেটে ৯০ শতাংশই গৃহীত হয়নি। তবে আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ৫৩টি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে বলে দাবি করে এফবিসিসিআই সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেন, এ বাজেট নিয়ে আমি লজ্জাবোধ করছি। তার অভিযোগ, রাজস্ব কর্মকর্তারা চান না দেশে রাজস্ব বাড়ুক। এনবিআর কর্মকর্তারাই ব্যবসায়ীদের বলেন, সরকারকে কেন রাজস্ব দেবেন, আমাদের দিন। নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সুপারিশ পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়ে দেওয়া ওই প্রস্তাবনায় এফবিসিসিআই সভাপতি আয়কর প্রসঙ্গে বলেন, পোশাকশিল্পের রপ্তানি আয়ের ওপর করহার কমিয়ে ১০ শতাংশ করা না হলে এ খাতে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান হবে না। পোশাকশিল্পসহ সকল প্রকার রপ্তানির ওপর উেস কর কর্তনের হার বর্তমানে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ বহাল রাখা হোক। হিমাগারশিল্পের ক্ষেত্রে আয়কর ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হোক। এতে কৃষক ও হিমাগার মালিকরা উপকৃত হবেন। কম ভাড়ায় আলু সংরক্ষণে সক্ষম হবেন এবং ভোক্তাসাধারণও আরও সুলভ মূল্যে আলু খেতে সক্ষম হবেন। অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রতিবন্ধক আমদানি পর্যায়ে মূলধনী যন্ত্রপাতি, মৌলিক কাঁচামাল, মধ্যবর্তী কাঁচামাল ও উপকরণের ওপর আরোপিত অগ্রিম আয়কর (এআইটি) প্রত্যাহার করা হোক। ভ্যাটসংক্রান্ত সুপারিশ পুনর্বিবেচনা প্রসঙ্গে এফবিসিসিআই বলেছে, ভ্যাট কমিশনার (আপিল) এবং আপিল ট্রাইব্যুনাল বরাবর আপিল দাখিলের আগে দাবি করা করের জমাকরণের পরিমাণ ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করা হয়েছে। এর ফলে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ট্যারিফ নিউট্রাল বিরোধ-নিষ্পত্তি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণরূপে ভেঙে পড়বে। এতে বিতর্কিতভাবে করদায়গ্রস্ত করদাতারা কর দাবির ৫০ শতাংশ পরিশোধে স্বাভাবিকভাবে অপারগতার কারণে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত ও ব্যাপক হয়রানির শিকার হবেন।

আমদানি শুল্ক প্রসঙ্গে এফবিসিসিআই বলেছে, পণ্যের শুল্কায়ন মূল্য নির্ধারণের লক্ষ্যে বেশ কিছু পণ্যের ওপর মাত্রাতিরিক্ত হারে ট্যারিফ ভ্যালু এবং মিনিমাম ভ্যালু নির্ধারণ করা হয়েছে। এটা এনবিআরের শুল্ক মূল্যায়ন বিধিমালা অনুযায়ী সংগতিপূর্ণ নয়। ট্যারিফ ভ্যালু বা মিনিমাম ভ্যালুর পরিবর্তে নির্দিষ্ট শুল্ক নির্ধারণ করা হোক। অন্যথায় শুল্ক আদায়ের ক্ষেত্রে করদাতাদের ওপর অহেতুক চাপ সৃষ্টি হবে এবং হয়রানি বাড়বে। কাঁচামাল আমদানিতে অধিক হারে শুল্ক ও অন্যান্য কর প্রদান করতে হয়, যা কোনো অবস্থাতেই যৌক্তিক হতে পারে না। অধিক হারে শুল্ক ও অন্যান্য কর বিদ্যমান থাকায় নতুন নতুন বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর