দেশের মোট প্রাণীর ১৯ শতাংশই ‘বিলুপ্তির হুমকিতে’ থাকার শঙ্কার কথা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ক সংস্থা আইইউসিএন-বাংলাদেশ। সংস্থাটি এক প্রতিবেদনে বলেছে, স্তন্যপায়ী, পাখি, সরীসৃপ, উভচর, স্বাদু পানির মাছ, চিংড়ি ও প্রজাপতির ১৬১৯টি প্রজাতির মধ্যে ৩৯০টিই কোনো না কোনোভাবে হুমকির মুখে আছে। গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আনুষ্ঠানিভাবে আইইউসিএন-বাংলাদেশ প্রকাশিত প্রাণিকুলের ‘হালনাগাদ প্রজাতির লাল তালিকা, ২০১৫’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ শঙ্কার তথ্য ফুটে ওঠে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পের তত্ত্বাবধানে আইইউসিএনের হালনাগাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করেন পরিবেশ ও বন সচিব কামাল উদ্দিন আহমেদ। অনুষ্ঠানে পরিবেশ ও বন উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব প্রাণী সংরক্ষণে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে অধ্যাপক মোস্তফা ফিরোজ, ইনাম আল হক, ফরিদ আহসান, মনিরুল এইচ খান, অধ্যাপক শাহাদত আলী, মোস্তফা আলী রেজা হাসান ও মনোয়ার হোসেন সাতটি আলাদা গ্রুপের তথ্য সংগ্রহ ও পর্যালোচনা কাজে তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রধান বন সংরক্ষক ইউনুছ আলী, প্রধান জাতীয় কারিগরি বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ আলী রেজা খান ও প্রকল্প ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ শাহাদ মাহবুব চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে আইইউসিএনের আবাসিক প্রতিনিধি ইশতিয়াক উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘প্রাণিকুল রক্ষায় নীতিগত সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন আনতে হবে। বিভিন্ন প্রজাতির আবাসস্থল রক্ষায় অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। আজকের পর থেকে আমরা আশা করব, যথাযথ উদ্যোগের মাধ্যমে আগামীতে আর কোনো প্রজাতিই বিলুপ্ত হবে না।’ ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, যেসব প্রজাতির তথ্য পর্যালোচনা করা হয়েছে এর মধ্যে আছে ১৩৮ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৫৬৬ প্রজাতির পাখি, ১৬৭ প্রজাতির সরীসৃপ, ৪৯ প্রজাতির উভচর, ২৫৩ প্রজাতির মাছ, ১৪১ প্রজাতির চিংড়ি ও ৩০৫ প্রজাতির প্রজাপতি। এর মধ্যে অতি বিপন্ন অবস্থায় রয়েছে ৫৬টি প্রজাতি, বিপন্ন ১৮১ প্রজাতি আর সংকটাপন্ন অবস্থায় আছে ১৫৩টি প্রজাতি। সাত ক্যাটাগরির ৩১ প্রজাতি এরই মধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এ ছাড়া সংকটাপন্ন ৩০৯ প্রজাতি বিলোপের হুমকিতে রয়েছে। ৮০২ প্রজাতি ঝুঁকিতে নেই। এর আগে ২০০০ সালে প্রথমবার প্রাণিকুলের অবস্থা নিয়ে ‘লাল তালিকা’ করা হয়।১৫ বছর পর করা এ তালিকা বিলুপ্তির হুমকি ও ঝুঁকিতে থাকা প্রাণীদের রক্ষায় ভূমিকা রাখবে বলে মন্তব্য করেন পরিবেশ ও বন সচিব। তিনি বলেন, ‘২০০০ সালের পর এবার গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদিত হয়েছে। সাতটি গ্রুপের মধ্যে দুঃখজনকভাবে আমরা জানতে পারছি কত প্রজাতি বিলুপ্তির হুমকিতে রয়েছে। এর মাধ্যমে সরকারি-বেসরকারি সব পর্যায়ে পরিকল্পনা নেওয়া ও বাস্তবায়নের কাজ সহজ হবে।’