শুক্রবার, ২৪ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

দেশের বৃহত্তম প্রাণী জাদুঘর হচ্ছে মুন্সীগঞ্জে

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি

দেশের বৃহত্তম প্রাণী জাদুঘর হচ্ছে মুন্সীগঞ্জে

পদ্মা সেতু সংলগ্ন এলাকাতেই নির্মিত হতে যাচ্ছে বৃহত্তর প্রাণী জাদুঘর —বাংলাদেশ প্রতিদিন

বর্ষার আগমনে খরস্রোতা পদ্মায় বাড়তি স্রোত আর রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে পদ্মা বহুমুখী সেতুর কাজ। প্রকল্প এলাকায় ভাঙন রক্ষায় চলছে নদীশাসনের নানা কর্মকাণ্ড। পাশাপাশি এ সেতু ঘিরে প্রকল্প এলাকায় চলছে নানামুখী উন্নয়নের কাজ। সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগে হাতে নেওয়া হয়েছে উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা। ইতিমধ্যে সরকারিভাবে ঘোষণা করা হয়েছে পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে প্রকল্প এলাকায় হংকং সিটির আদলে অত্যাধুনিক শহর, পদ্মার চরে অলিম্পিক ভিলেজ এবং প্রকল্প এলাকায় দেশের সর্ববৃহৎ প্রাণী জাদুঘর ও প্রজাপতি পার্ক গড়ে তোলার মহাপরিকল্পনা। পদ্মা সেতুর সার্বিক কাজের ৩৪ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। ৪২টি মূল পিলারের মধ্যে ৩টিতে ১১টি মূল পাইল বসানো হয়েছে। স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন দেশি-বিদেশি প্রকৌশলীসহ প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য দ্বিতল এ সেতু দেশের দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার উন্নয়নের পাশাপাশি গোটা দেশের ভাগ্য বদলে দেবে। খুলে দেবে ওই অঞ্চলের জেলাগুলোয় আধুনিক শিল্পকারখানা গড়ে তোলার অপার সম্ভাবনার দুয়ার। পদ্মা সেতু নির্মাণকাজ ২০১৮ সালের ২৫ নভেম্বর নাগাদ শেষ হবে বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ। ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ের পদ্মা বহুমুখী সেতু ঘিরে নতুন নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এ সেতুর পাশেই পদ্মার চরে অলিম্পিক ভিলেজ করার পরিকল্পনা এগিয়ে চলছে। আন্তর্জাতিক মানের এ ভিলেজে সিঙ্গাপুর ও হংকং সিটির আদলে শহর তৈরির পরিকল্পনা চলছে। প্রকল্প এলাকায় দেশের সর্ববৃহৎ প্রাণী জাদুঘর এবং প্রজাপতি পার্ক গড়ে তোলা হবে। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকার জীববৈচিত্র্য ঠিক রাখতে এবং প্রকল্প এলাকার পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য প্রাণী জাদুঘর স্থাপনের কাজ চলছে। এ জাদুঘরের পাশাপাশি একটি প্রজাপতি পার্কও স্থাপন করা হবে এবং ওই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ। এরই মধ্যে সেতু কর্তৃপক্ষ ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের মধ্যে এ সম্পর্কিত একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। জানা গেছে, প্রাণী জাদুঘর ও প্রজাপতি পার্ক স্থাপনে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩০ কোটি টাকা। পর্যটক আকর্ষণের লক্ষ্যে এ প্রাণী জাদুঘর ও পার্কটি হবে দৃষ্টিনন্দন। এটি পদ্মা সেতু প্রকল্পেরই একটি অংশ। এর বাস্তবায়নে সময় ধরা হয়েছে পাঁচ বছর।

জাদুঘর ও প্রজাপতি পার্কের জন্য ইতিমধ্যে স্থান নির্ধারণ হয়েছে। এদিকে বর্ষার শুরুতে পদ্মায় স্রোত বেড়ে যাওয়ায় কাজের গতি বাড়ানো হয়েছে। ঝড়-ঝাপটা আর রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে দেশি-বিদেশি কয়েক হাজার শ্রমিক দিনরাত শিফটওয়াইজ কাজ করে চলেছেন। পদ্মা ভাঙনপ্রবণ হওয়ায় ভাঙন রোধে নেওয়া হচ্ছে নানা সতর্কতা। মাওয়া প্রান্তের উজান এলাকায় স্রোতের কারণে নদী ভাঙনের শঙ্কা থাকায় মাওয়া পুরান ফেরিঘাট থেকে কান্দিপাড়া পর্যন্ত প্রায় ১৩০০ মিটার এলাকা জুড়ে নদী ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলার প্রস্তুতি নিয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষ। এজন্য ব্যয় হবে ৩৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে ৫০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে এ এলাকায় ভাঙন রোধে প্রায় ১ লাখ জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তাই প্রয়োজনে অন্য কোনো প্রকল্পের মাধ্যমে হলেও নদী ভাঙন রোধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া দরকার বলে দায়িত্বশীল একাধিক প্রকৌশলী মনে করছেন। মাওয়া থেকে জসলদিয়া, কান্দিপাড়া হয়ে কবুতরখোলা পর্যন্ত পদ্মার নদীশাসন জরুরি হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে জসলদিয়া বাজারের সামনে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে জসলদিয়া গ্রামের মাঝিবাড়ির একাংশ বিলীন হয়েছে। হুমকির মুখে রয়েছে জসলদিয়া গ্রামের মসজিদ, জসলদিয়া উচ্চবিদ্যালয় ও প্রাথমিক বিদ্যালয়, ডাকঘর, কমিউনিটি ক্লিনিক, জসলদিয়া পদ্মা সেতু পুনর্বাসন কেন্দ্র, জসলদিয়া পানি শোধনাগারসহ শত শত বাড়িঘর ও শত শত একর ফসলি জমি। এলাকাবাসীর দাবি, এ এলাকায় ভাঙন প্রতিরোধে আরও দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেবে সরকার।

সর্বশেষ খবর