মঙ্গলবার, ২৮ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

ঈদে মাঠে ১২ অপরাধী চক্র

সাঈদুর রহমান রিমন

ঈদে মাঠে ১২ অপরাধী চক্র

ঈদ ঘিরে অপরাধ তত্পরতার কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে মানুষজন। ঘর থেকে বের হলেই পদে পদে বিপদ। আছে শতেক প্রতারণার বেড়াজাল। চাঁদাবাজি, ধান্দাবাজি, অপরাধ-প্রতারণার ‘ঈদ ধান্দা’য় অনেকেই সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। চলতি পথে, মার্কেট-বাজারে অজ্ঞান পার্টি, থুথু পার্টি, ধাক্কা পার্টির সীমাহীন দৌরাত্ম্য। সক্রিয় রয়েছে পকেটমার চক্রের কয়েকশ সদস্য। হাজারো পয়েন্টে ওতপেতে আছে চাঁদাবাজ, ছিনতাইকারী চক্র। এসব চক্রের নানা অপরাধ আর অভিনব সব কৌশলের কাছে সাধারণ মানুষ ধরাশায়ী হচ্ছেন। সব খুইয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন। ঈদ সামনে রেখে মৌসুমি অপরাধীদের পাশাপাশি নিত্যনতুন অপরাধ কর্মকাণ্ডে নারীদের অংশগ্রহণ তুলনামূলকভাবে বেড়েই চলেছে। নানা প্রলোভনে নতুন কৌশলে অপহরণ-মুক্তিপণ আদায় ও ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটাচ্ছে দুর্ধর্ষ নারী অপরাধী চক্র। কখনো কখনো গায়ে পড়েই কারও সঙ্গে বিবাদ সৃষ্টি করছে। ‘কুপ্রস্তাব’ দেওয়ার মিথ্যা কথা বলেও পথে-ঘাটে জিম্মি করে টাকা আদায় করছে এ চক্রের সদস্যরা। চক্রগুলো উত্তরা, গুলশান, ধানমন্ডি ও বারিধারার মতো অভিজাত এলাকায় সক্রিয়। চন্দ্রিমা উদ্যান, শ্যামলীর শিশুমেলা, মিরপুর চিড়িয়াখানা, বোটানিক্যাল গার্ডেন, বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড, শাহবাগের শহীদ জিয়া শিশুপার্ক, রমনা পার্ক, গুলিস্তান, মতিঝিলসহ আরও কিছু স্থানে এসব নারী অপরাধী সিন্ডিকেটের তত্পরতা রয়েছে। টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে কৌশলে বাসা কিংবা নির্জন স্থানে নিয়ে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনাও ঘটছে অহরহ। এ ধরনের কয়েকটি চক্রকে ডিবি গ্রেফতার করলেও তাদের দৌরাত্ম্য পুরোপুরি বন্ধ করা যাচ্ছে না। রমজান মাসের শুরু থেকেই তত্পর হয়ে উঠেছে মৌসুমি অপরাধীরা। বেড়েছে ছিনতাইয়ের ঘটনাও। এ ছাড়া পকেটমার, মলম পার্টি, টানা পার্টি, অজ্ঞান পার্টি চক্রের সদস্যরাও বসে নেই। তাদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে নাগরিক জীবন। মাঝেমধ্যে পুলিশের হাতে চক্রের কিছু সদস্য ধরা পড়লেও অধিকাংশই থাকে অধরা। যাদের আটক করা হয় তারা আইনের ফাঁক গলিয়ে বাইরে এসে আবারও একই কাজ করতে থাকে। জানা গেছে, রাজধানীর বাস ও লঞ্চ টার্মিনাল এবং রেলস্টেশনসহ অর্ধশত স্পটে ছদ্মবেশে এসব চক্রের সদস্যরা সক্রিয়। প্রায় প্রতিদিনই তাদের কবলে পড়ে টাকা-পয়সা, মোবাইল, মানিব্যাগসহ অন্যান্য জিনিসপত্র খুইয়ে মুমূর্ষু হয়ে হাসপাতালে যাচ্ছেন অনেকেই। অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব খুইয়েও নিস্তার মিলছে না। অনেক ক্ষেত্রে জীবনটাও হারাতে হচ্ছে। অন্যান্য ‘অপরাধ প্রতারণাও’ ইদানীং ডিজিটাল রূপ পেতে শুরু করেছে। এখন ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি করে যেমন অন্যের অ্যাকাউন্ট খালি করা হচ্ছে, তেমনি গলাকাটা পাসপোর্ট তৈরি, বিদেশি ভুয়া ওয়ার্ক পারমিট ও নিয়োগপত্র প্রস্তুত করলেও সহজে তা জাল প্রমাণের উপায় থাকে না। জাল টাকার ছড়াছড়ি তো বাজারজুড়েই আছে। ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট উল্টেপাল্টে দেখেও বিশ্বাস করতে চাইছেন না দোকানিরা। ব্যাংকিং সেক্টরেও অভিনব সব অপরাধ ঘটে চলেছে। গুলশান-বনানীতে চেক জালিয়াতির মাধ্যমে যে-কারও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফাঁকা করে দেওয়ার সংঘবদ্ধ চক্র তত্পর। তারা কারও অ্যাকাউন্টের একটি চেক পেলে একই আদলের ও স্বাক্ষরের শত শত চেক তৈরি করতে সক্ষম। সেই চেক ব্যবহার করে টাকা উত্তোলনসহ নানা রকম প্রতারণার ফাঁদ পাতলেও কারও কিছু করার থাকছে না।

রাজধানীর বিভিন্ন মহল্লায় স্থানীয় বখাটে মাস্তানদের সহায়তায় একদল তরুণী বসাচ্ছে নিত্য প্রতারণার আসর। তাদের পেছনে স্থানীয় থানার দুর্নীতিপরায়ণ পুলিশের সাহায্যের হাতও রয়েছে। বিভিন্ন ম্যারেজ মিডিয়ার সহযোগিতায় প্রতারণার ফাঁদ এখনো চলছে বহাল তবিয়তে। সুন্দরী নারীদের সঙ্গে নিয়ে ম্যারেজ মিডিয়ার ছদ্মাবরণে গড়ে তোলা প্রতারক চক্রের মূল টার্গেট হচ্ছে ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী ও সরকারি প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। সমাজে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচিত পর্যায়ের লোকজন প্রতারণার শিকার হলে অনেকেই সামাজিক সম্মানের কারণে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চান না। ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রতিনিয়তই ছড়ানো হচ্ছে নানা বিকৃত ছবি, পর্নোগ্রাফি আর যত অরুচিকর ভার্চুয়াল সামগ্রী। চলছে আরও নানা রকম প্রতারণা, অপরাধকর্ম। প্রায়ই সংবাদমাধ্যমে ইন্টারনেটকেন্দ্রিক প্রতারণা ও অপরাধের খবর পাওয়া যাচ্ছে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ-সংক্রান্ত অপরাধের মাত্রা আরও বেশি, অনেক অপরাধের খবরই সংবাদমাধ্যমে আসছে না। মানসম্মানের ভয়ে অনেকে এমন অপরাধের শিকার হয়েও থানা-পুলিশ কিংবা অন্য কোনো সংস্থার কাছে অভিযোগ করছেন না।

ঈদ সামনে রেখে ভেজাল আর নকল পণ্যসামগ্রীতে ভরে উঠেছে রাজধানীর বাজারগুলো। গড়ে উঠেছে অবৈধ প্রসাধন তৈরির অসংখ্য কারখানা। তারা দেশি-বিদেশি মোড়কে বিভিন্ন ক্রিম, লোশন, বিউটি সোপ, ফেসওয়াশ, শ্যাম্পুসহ হরেক রকম প্রসাধন উৎপাদন করে তা ব্যাপকভাবে বাজারজাত করে চলেছে। এ ছাড়া পুলিশ মার্কেট, শপিং মল-কেন্দ্রিক টহল ও সাদা পোশাকে অবস্থান বাড়ালেও রাস্তাঘাটে অপেক্ষাকৃত নির্জন সড়কে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে অহরহ। সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্যরা রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় চড়ে রিকশাযাত্রীদের ব্যাগ ছিনিয়ে নেয় এবং নির্জন এলাকায় ছোরার ভয় দেখিয়ে পথচারী, রিকশা ও ট্যাক্সিযাত্রীদের কাছ থেকে ছিনতাই করে থাকে। ইদানীং ভাটারা থানার নতুনবাজার থেকে নর্দা বাসস্ট্যান্ড ঝাপটাবাজ চক্রের চারণভূমিতে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিনই সেখানে মোটরসাইকেল ব্যবহারকারী দুর্বৃত্তরা চলন্ত অবস্থায় ছিনতাই-রাহাজানি ঘটাচ্ছে নির্বিঘ্নে। মাঝেমধ্যে রাতে গুলশান থানার চেকপোস্ট বসানো হলেও রাস্তাটুকুতে কোনো টহল টিম না থাকায় ছিনতাই-ঝাপটাবাজি বন্ধ হচ্ছে না কোনোভাবেই।

সক্রিয় অজ্ঞান পার্টি : ঈদ কেন্দ্র করে রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা। রাস্তায়, পথে, যানবাহনে চলতে-ফিরতে ইসবগুলের ভুসি মিশ্রিত পানীয়, আখের রস, সেক্স, ডায়াবেটিস বা গ্যাস্ট্রিক ‘নিরাময়’ হালুয়া খাইয়ে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে তারা। রমজান ও ঈদ কেন্দ্র করে রাজধানীতে অজ্ঞান ও মলম পার্টির কমপক্ষে ১০টি চক্র সক্রিয় রয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার দিদার আহমেদ বলেন, রমজান ও ঈদ কেন্দ্র করে রাজধানীতে এই ১০টি চক্রের অন্তত ১০০ জন অজ্ঞান ও মলম পার্টির সদস্য কাজ করছে। তারা চা-কফিতে চেতনানাশক ওষুধ মিশিয়ে কৌশলে চা-কফি বা অন্যান্য পানীয় খাবারের সঙ্গে ব্যবহার করে যাত্রীদের খাইয়ে অজ্ঞান করে সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে। এর আগে রাজধানীর গাবতলী বাসস্ট্যান্ড ও ভাটারা থেকে অজ্ঞান, মলম ও ছিনতাই চক্রের আট সদস্যকে গ্রেফতার করে ডিবি। আসামিরা দীর্ঘদিন ধরে চলতি বাসে হকার সেজে ভ্রমণরত যাত্রীদের কৌশলে অজ্ঞান করে ছিনতাই করে আসছিল বলে স্বীকার করে। ঈদ সামনে রেখে সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন ব্যবসায়ীকে টার্গেট করে অভিনব কায়দায় চাঁদাবাজি শুরু করেছে। চাঁদা আদায় করতে ব্যবসায়ীদের স্ত্রী-সন্তানদের ফোন নম্বর সংগ্রহ করে তাদের হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

জাল নোট চক্র তত্পর : গত এক বছরে ডিবির সদস্যরা জাল টাকা প্রস্তুতকারী, সরবরাহকারী চক্রের ৪৭ জন সদস্যকে গ্রেফতার করেও জাল নোট উৎপাদন ও বাজারজাত ব্যবস্থা বন্ধ করতে পারেননি। গ্রেফতার ব্যক্তিরা জেল থেকে ছাড়া পেয়েই ফের পুরনো পেশায় নেমে পড়ছে। তারা পাল্লা দিয়ে আরও বেশিসংখ্যক জাল নোট বাজারে ছাড়ছে। গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার শেখ নাজমুল আলম বলেন, জাল টাকা চক্রের সদস্যরা সাধারণত তিনটি গ্রুপে কাজ করে। প্রথম গ্রুপটি নিরাপত্তাসুতা সংগ্রহ করে। দ্বিতীয় গ্রুপটি জাল টাকা তৈরি করে। তৃতীয় গ্রুপটি তৈরিকৃত জাল টাকা সারা দেশে সরবরাহ করে। জাল টাকার প্রস্তুতকারীরা বড় ধরনের উৎসবকে কেন্দ্র করেই জাল টাকা প্রস্তুত ও সরবরাহ করে থাকে। রমজানকে কেন্দ্র করে তারা চার থেকে পাঁচ কোটি টাকা তৈরি করে বাজারজাত করার মিশনে নামে বলেও মন্তব্য করেন ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা। জাল টাকার প্রস্তুতকারীরা প্রতি লাখ জাল টাকা মাত্র ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে থাকে। আর অন্য গ্রুপটি ওই জাল টাকা কিনে প্রতি লাখ ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করে থাকে। ইতিমধ্যে ডিবি সদস্যরা একাধিক অভিযান চালিয়ে অন্তত ১৩ জন জাল নোট প্রস্তুতকারীকে গ্রেফতারে সক্ষম হয়েছেন। ডিবি কর্মকর্তা দাবি করেন, আগেভাগে অভিযান চালানোর কারণে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার জাল নোট প্রস্তুতকারী চক্রের দৌরাত্ম্য তুলনামূলক অনেক কম।

বিকাশে বাড়ছে প্রতারণা : বিকাশের মাধ্যমে প্রতারণা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঈদ সামনে রেখে বিকাশ প্রতারণা আকাশচুম্বী হয়ে উঠেছে। একের পর এক সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র ভুয়া এসএমএসের মাধ্যমে কৌশলে গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তবে যারা বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে ব্যালেন্স চেক করছেন তারা প্রতারণা থেকে বেঁচে যাচ্ছেন। প্রতিদিন প্রতারক চক্রের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে অনেকেই খোয়াচ্ছেন তাদের সর্বস্ব। এ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন গ্রাহকরা। এদিকে বিকাশের ক্যাশ আউট ও ক্যাশ ইনের এসএমএসের সঙ্গে ভুয়া এসএমএসের হুবহু মিল থাকায় প্রতারক চক্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশ থাকার অভিযোগ উঠেছে।

ফুটপাথ নিয়ে মহাবাণিজ্য : মিরপুরে সাড়ে তিন ফুট বাই চার ফুট আয়তনের ফুটপাথ জায়গার বরাদ্দ পেতে এককালীন ৫০-৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে হচ্ছে। ওই জায়গাটুকুতে কয়েক ঘণ্টা দোকান বসানোর বিপরীতে প্রতিদিন ভাড়া বাবদ ৫০০ টাকা আর নানা খাতে দিতে হচ্ছে ২০০ টাকা চাঁদা। অভিযোগ উঠেছে, দখলবাজরা এবার মিরপুর ১০ নম্বর, ১১ নম্বর, পূরবী মোড়সহ আটটি স্থানে ফুটপাথ বাজার বসাতে এবার ১০ লাখ টাকা তুলে নিয়েছে। অভিন্ন পরিস্থিতি চলছে খিলগাঁও তালতলা ডিসিসি মার্কেট এলাকাতেও। সেখানে প্রতি বছর ফুটপাথ-রাস্তায় দুই সহস্রাধিক হকার বসিয়ে কোটি টাকার বাণিজ্য চালাত আজাদ-জুয়েল গ্রুপ। কিন্তু তিন মাস আগেই ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র সেখানে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে অবৈধ দখলদারদের হটিয়ে দেন। কঠোর ভূমিকায় নামেন স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর। ফলে হকার উচ্ছেদ আর দখলদারি নিয়ে লড়াই চললেও শেষ মুহূর্তে সাত লাখ টাকা লেনদেনের মাধ্যমে সমঝোতা হয়েছে। ফলে চাঁদাবাজির এ বাড়তি টাকার ধকল পোহাতে হচ্ছে ফুটপাথ দোকানিদের। আগে তিন ফুট বাই তিন ফুট আয়তনের যে দোকানটি বসাতে সব মিলিয়ে ২৫ হাজার টাকা খরচ হতো, তা বসাতে এখন ব্যয় হচ্ছে অর্ধলক্ষাধিক টাকা। এসব কারণে খুদে ব্যবসায়ীরা এবার চরম বিপাকে পড়েছেন। মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবসা পরিচালনা করে পুঁজি হারানোর আশঙ্কা করছেন তারা।

সর্বশেষ খবর