মঙ্গলবার, ২৮ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

ট্রাফিক পুলিশের ইফতার যেভাবে

বাদল নূর

পুরানা পল্টন মোড় ট্রাফিক পুলিশ বক্স ও গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট ট্রাফিক পুলিশ বক্স। ইফতারির কিছুক্ষণ আগে ডিসি দক্ষিণ ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে ইফতারির প্যাকেট চলে আসে। তাতে থাকে মুড়ি, ছোলা, পিয়াজু, বেগুনি, কলা, পানি, খেজুর, জিলাপি, শসা ও আলুর চপ।

গতকাল গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে  দায়িত্বরত ছিলেন টি আই ইলতাজ। তার সঙ্গে সার্জেন্ট শফিকুর রহমান ও মশিউর এবং এএসআই আবু হানিফসহ ট্রাফিকের ৮ সদস্য। ওয়াকিটকি হাতে চারপাশে কঠোর নজরদারি। পুরো এলাকাজুড়ে তীব্র যানজট। নিরসনের জন্য ব্যস্ত সবাই। ঠিক এ সময় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ইফতার করার ইচ্ছা নিয়ে ছুটছিলেন ঘরমুখো মানুষ। চালকদের চোখে-মুখে ছিল দ্রুত বাসায় ফেরার তাড়া। আজানের শব্দে চলন্ত গাড়ি দ্রুতই থেমে যায়। জিরো পয়েন্টের পুলিশ বক্সে ইফতারে যোগ দিয়েছেন সবাই। সারা দিন পরিশ্রম করার পরে ইফতারি হাতে নিয়ে একটু শাস্তি বা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়েন তারা। কিছুই করার নেই ট্রাফিক পুলিশদের। এভাবেই প্রতিদিন চলছে তাদের ইফতারি। সার্জেন্ট মশিউর বলেন, ‘প্রায় প্রতিদিনই তীব্র যানজট লেগে থাকে। বসে ইফতারি করার সুযোগ খুব কমই হয়। কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। তবে এখন এ বিষয়টি সহ্য হয়ে গেছে। তেমন কোনো সমস্যা হয় না।’ ট্রাফিক পুলিশের টি আই ইলতাজ বলেন, ‘সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ডিউটি করি। যানবাহনের চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ট্রাফিক পুলিশের প্রায় সবাই রোজা রাখেন। সারা দিন রোদে দাঁড়িয়ে থেকে মুখ শুকিয়ে যায় তাদের। ফলে ইফতারির সময় প্রচুর পানি ও শরবতের দরকার। পরিবারের সঙ্গে ইফতার করার সুযোগ কম ট্রাফিক পুলিশের। অনেক সময় রাস্তায় দাঁড়িয়েই ইফতার করতে হয়।’

পুরানা পল্টন মোড়ে পুলিশ বক্সের দায়িত্বে ছিলেন সার্জেন্ট আহসান হাবিব টুকু ও সার্জেন্ট সুমন কুমার রায়। তাদের সঙ্গে মো. আলমাস, মহিউদ্দিন খান, হাফিজুর রহমান, শফিকুল ইসলাম, রবিউল মোল্লাসহ ট্রাফিকের নয়জন সদস্য। ওয়াকিটকি হাতে তীক্ষ নজরদারি। সার্জেন্ট আহসান হাবিব টুকু জানান, বিকাল থেকে ইফতারের আগ পর্যন্ত রাস্তায় যানবাহনের চাপ বেশি থাকে। এতে মাঝেমধ্যে যানজটের সৃষ্টি হয়। অনেক সময় কিছু যানবাহন উল্টোপথে এসে ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ‘পুলিশের চাকরি কেমন লাগছে’— জানতে চাইলে একই স্থানে সার্জেন্ট সুমন কুমার রায় বলেন, ‘ডিউটি বাদ দিয়ে বাসায় ইফতারি করতে যাওয়ার সুযোগ নেই। এসব মেনেই পুলিশের চাকরি করছি। রমজান মাসে এভাবেই প্রতিদিন ইফতার করতে হয় ট্রাফিক পুলিশদের। কখনো পুলিশ বক্সে দল বেঁধে, কখনো সড়কে দাঁড়িয়ে। পাঠানো ইফতারির সঙ্গে দেওয়া হয় এক বোতল মিনারেল ওয়াটার। কিন্তু থাকে না কোনো জুস কিংবা শরবত। তাই অনেকেই নিজেরা টাকা তুলে বানিয়ে নেই শরবত।’ ট্রাফিক পুলিশের একজন সদস্য বলেন, ‘ইফতারির সঙ্গে শরবত ও জুস থাকা খুবই জরুরি। না পেয়ে নিজেরাই শরবতের ব্যবস্থা করতে হয়। ট্রাফিক পুলিশের অনেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীই রোজা রাখেন। এ অবস্থায় তাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে বেলা ২টা ও বেলা ২টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত দুই পালায় দায়িত্ব পালন করে ট্রাফিক পুলিশ। বেলা ২টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশদের জন্যই মূলত সরবরাহ করা হয় ইফতারি।’ ট্রাফিক পুলিশের একজন সদস্য বলেন, ‘প্রায় সময় এক হাতে ইফতারি খাই। আরেক হাত দিয়ে বাঁশি বাজাই। রাস্তায় ইফতারি করতে কষ্ট হয়। তবে সবাই মিলে ইফতারি করি, এতেই আনন্দ।’

সর্বশেষ খবর