ইফতারির সময় ঘনিয়ে এলে তীর্থের কাকের মতো পথ চেয়ে বসে থাকেন রাজধানীর আজিমপুর কবরস্থান, হাইকোর্ট মাজার, বায়তুল মোকাররম ও সেকশন পুলিশ ফাঁড়ির ফকির-মিসকিনরা। তাদের ধারণা, কোনো হূদয়বান ব্যক্তি খাবার দিয়ে যাবেন। এ প্রতীক্ষায় বসে থেকে কোনো কোনো দিন তারা পর্যাপ্ত খাবার পান।
আবার কোনো দিন সামান্য খাবার জোটে তাদের ভাগ্যে। সারা দিনের ক্লান্তি ও হতাশা দূর হয় ইফতারি হাতে পেলে। মানুষের সাহায্যই এদের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। এমনই এক অসহায় জীবনের শেষপ্রান্তে এসে বেঁচে থাকার জন্য বেছে নিয়েছেন ভিক্ষাবৃত্তিকে। শেখ ইকলাস উদ্দীন তার নাম। গতকাল সাহায্যের অপেক্ষায় বসে ছিলেন রাজধানীর সেকশন পুলিশ ফাঁড়িতে। চার বছর ধরে অসুস্থ। হুইল চেয়ারে চলাফেরা করেন তিনি। শারীরিক এ অবস্থার মধ্যেও যথারীতি রোজা রাখেন তিনি। স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন নবাবগঞ্জের একটি জীর্ণ কুটিরে। তার গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জে। বর্তমানে বাড়ি-ঘর বলতে কিছুই নেই। ১৯৭৩ সাল থেকে ঢাকায় অবস্থান করছেন পরিবার নিয়ে। ৪ ছেলেমেয়ের জনক। কিন্তু ছেলেমেয়েরা নিজেদের সংসার নিয়েই ব্যস্ত। তাদের খবর কেউ রাখে না। বৃদ্ধ বয়সে বড় অসহায় অবস্থার মধ্য দিয়ে দিন কাটছে তাদের। মানুষের সাহায্য নিয়ে বেঁচে থাকতে হচ্ছে। সাহায্য পেলে খাওয়া হয়, না পেলে উপোস থাকতে হয়। শেখ ইকলাস উদ্দীনের মতো চরম অসহায় অবস্থার মধ্য দিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে দিন কাটাচ্ছেন নরসিংদীর মো. জালাল। প্রায় ১০ বছর ধরে আজিমপুর কবরস্থানের সামনে ভিক্ষা করে জীবন কাটছে তার। ভিক্ষাই জীবনধারণের একমাত্র উপায়। মো. জালালের সঙ্গে কথা বলার সময় ভিক্ষুক আমেনা, ফুলজান, সূর্যবানু, ফজিলা, জাহানারা, জহুরা, ফুলমতি, জামিলা, আয়শা, রিয়া, রহিমা, ফুলি, অছিয়া ও ফজিলা ছুটে আসেন। তারা একে একে ব্যস্ত হয়ে পড়েন কার আগে কে নাম লেখাবেন। কেউ কেউ জানতে চান জাকাতের কাপড় দেওয়ার জন্য নাম লিখছি কিনা। যখন জানতে পারেন জাকাতের কাপড় বা টাকা-পয়সা কিছুই দেওয়া হবে না, পত্রিকায় রিপোর্ট হবে, তখন তাদের চেহারা মলিন হয়ে যায়। ফরিদপুর থেকে প্রায় ১২ বছর আগে আজিমপুর কবরস্থানে আসেন ফজিলা। কয়েক বছর আগে তার স্বামী মারা যান। স্বামীকে নিয়েই আশ্রয় নিয়েছিলেন আজিমপুর কবরস্থানে। জীবনের শেষপ্রান্তে এসে স্বামীর স্মৃতি নিয়েই পড়ে আছেন এই কবরস্থানে। মানুষের সাহায্য নিয়েই দিন কাটে তার। ইফতারির সময় হলে পর্যাপ্ত খাবার পান বলে জানান তিনি। রোজার মাসে বিশেষ করে ইফতারির সময় আজিমপুর কবরস্থানের ফকির-মিসকিনদের খাবারের সমস্যা হয় না। বছরের অন্যান্য দিনগুলোতে তাদের সমস্যা হয় বলে জানান তারা।