বুধবার, ২৯ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

ছড়িয়ে পড়ছে অ্যানথ্রাক্স

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছড়িয়ে পড়ছে অ্যানথ্রাক্স

টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার কৃষক মিনহাজ সম্প্রতি একটি গাভী কেনেন। গত ১৪ জুন গাভীটি বাড়িতে আনার পর জ্বর হয়েছে ধারণা করে চিকিৎসকের কাছে নেন। কিন্তু গাভীর অসুস্থতা বাড়তেই থাকে। পরিস্থিতি থেকে গাভী জবাই করে এলাকার সবার মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। ৪২ পরিবার কেনেন সেই মাংস। পরে মাংস কেনা মিনহাজের ভাই হেলালের হাতে দুটি ফোসকা দেখা দেয়। পরে আরও কয়েকজনের শরীরে একই ধরনের ফোসকা দেখা দেয়। আক্রান্তদের কয়েকজন গোপালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে চিকিৎসক জানান, অ্যানথ্রাক্স হয়েছে। কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. মতিউর রহমান জানান, গরু জবাই, মাংস বণ্টন এবং মাংস ধোয়ামোছার সঙ্গে জড়িতদের সবাই আক্রান্ত হয়েছেন। প্রথমে হাত ও পরে অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়েছে। আক্রান্ত ২৩ জনের মধ্যে ১ বছরের শিশুও আছে।

এর আগে গত মে মাসের শুরুতে সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ এবং শাহজাদপুর উপজেলা ৩৪ জন রোগী অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত বলে সন্দেহ করা হয়। এর মধ্যে কামারখন্দের ২১ জন এবং শাহজাদপুরের ১৩ জন। এই রোগীদের নমুনা ঢাকায় রোগতত্ত্ব, রোগনির্ণয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআরে নিয়ে গবেষণা চলছে। কামারখন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ শরিফুল ইসলাম বলেছেন, গরু-ছাগল-মহিষ এসব পশু সাধারণত অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্তরা শুধু চামড়ায় ঘা-এর উপসর্গ নিয়ে রোগীরা এসেছিলেন। পরে আনথ্রাক্স বলে সন্দেহ করা হয়। শুধু কামারখন্দই নয় উল্লাপাড়া ও শাহজাদপুরেও বাড়ছে আনথ্রাক্স রোগীর সংখ্যা। পরে মে মাসে শেষ নাগাদ সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার নন্দলালপুর গ্রামে আবারও নয়জন অ্যানথ্রাক্স রোগী শনাক্ত হয়। অসুস্থ গরু জবাই করে মাংস বিক্রির অভিযোগে গরুর মালিককে ভ্রাম্যমাণ আদালত ৬ হাজার টাকা জরিমানাও করে। শাহজাদপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আবদুল হাই জানান, উপজেলার পোরজনা ইউনিয়নের নন্দলালপুর গ্রামে ময়েন উদ্দিনের একটি গাভী ১৫ মে অসুস্থ হলে সেই গরু জবাই করে এলাকায় মাংস বিক্রি করা হয়। এই মাংস কাটা, ধোয়া ও রান্নার কাজে জড়িত ব্যক্তিরা অ্যানথ্রাক্স রোগে আক্রান্ত হন। শরীরে ক্ষত দেখা দিলে উল্লিখিত শিশুসহ নয়জনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসকেরা এসব মানুষের অ্যানথ্রাক্স রোগ হয়েছে বলে শনাক্ত করেন। এর আগে উপজেলার চর  কৈজুরীতে অসুস্থ গরুর মাংস কাটা ও নাড়াচাড়া করায় ৩১ জন অ্যানথ্রাক্স রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তখন অসুস্থ গরু জবাই না করে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে খবর দেওয়ার জন্য মাইকিং করা হয়েছিল। বিষয়টি তাদের না জানানোটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদের মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড হাইজিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. কে. এইচ. এম. নাজমুল হুসাইন নাজির বলেছেন, গরু থেকে অ্যানথ্রাক্স মানুষে ছড়িয়ে পড়ে। কারণ যখন একটি গরু ঘাস খায় তখন ঘাসের সঙ্গে কিছু মাটিও খায়। সেখানে প্রতি গ্রাম মাটিতেই অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু রয়েছে। ফলে সহজেই গরুতে অ্যানথ্রাক্স ছড়িয়ে পড়ে। তাই অ্যানথ্রাক্স নির্মূলের জন্য সব গবাদিপশুকে বাধ্যতামূলক বর্ষা মৌসুমের আগেই ভ্যাকসিনের আওতায় আনতে হবে। তিনি বলেন, গবাদিপশু থেকে মানুষের চামড়া, ফুসফুস ও নাড়ি-ভুঁড়িতে অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত হয়। তবে এ নিয়ে বাংলাদেশে উদ্বেগের কিছু নেই। কারণ বাংলাদেশে সাধারণত মানুষের চামড়ায় অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত হয়। আর এতে মানুষের মৃত্যুর রেকর্ড নেই। উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রসমূহে চিকিৎসা নিলেই অ্যানথ্রাক্স থেকে নিরাময় সম্ভব। এ রোগে আক্রান্ত মানুষকে নিয়মিত অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হবে। সিপ্রোফ্লোক্সাসিন ট্যাবলেট (১০ মিলি গ্রাম) ১২ ঘণ্টা পর পর টানা ৭ দিন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করতে হবে এবং অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত গবাদিপশু ১০ ফিট মাটির নিচে পুঁতে ফেলতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর