শুক্রবার, ১ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

ফোর লেন যুগ শুরু কাল

ঢাকা-চট্টগ্রাম ও জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়ক উদ্বোধনে প্রস্তুতি সম্পন্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফোর লেন যুগ শুরু কাল

বহুল প্রতীক্ষিত ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ চার লেন মহাসড়ক যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে। আগামীকাল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ দুই মহাসড়কের নবনির্মিত চার লেন প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

চার লেন প্রকল্পের উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটবে এ দুই মহাসড়ক ব্যবহারকারীদের। এখন ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পৌঁছতে লাগবে মাত্র সাড়ে ৪ ঘণ্টা। জয়দেবপুর থেকে ময়মনসিংহ পৌঁছতে লাগবে মাত্র ১ ঘণ্টা। দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন হিসেবে পরিচিত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চার লেন প্রকল্পের কাজ শেষ হতে লেগেছে প্রায় ছয় বছর। ১৯২ কিলোমিটার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল ২০১০ সালের জানুয়ারিতে। এতে ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে ময়মনসিংহের সড়ক যোগাযোগ নির্বিঘ্ন ও নিরবচ্ছিন্ন করতে জয়দেবপুর থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত সড়ককে চার লেনে উন্নীত করতে প্রকল্প নেয় সরকার। ২০১০ সালের জুলাইয়ে এ প্রকল্পটি একনেক অনুমোদন দেয়। ৮৭ দশমিক ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয় ৯৯২ কোটি টাকা। অবশ্য পরবর্তীতে একাধিকবার ব্যয় বেড়ে গিয়ে সংশোধিত প্রাক্কলিত ব্যয় গিয়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৮১৫ কোটি ১২ লাখ টাকা।

শুরুতে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত। কিন্তু নানা জটিলতায় নির্ধারিত সময়ে অনেক প্যাকেজের কাজ শুরুই করা যায়নি। পরবর্তীতে প্রকল্পের তিনটি প্যাকেজের কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে সরকার। প্রকল্পের এ প্যাকেজগুলোর কাজ দেওয়া হয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে। একই সঙ্গে কাজের মেয়াদও বাড়িয়ে দেওয়া হয়। নতুন মেয়াদ অনুযায়ী গত বছরের জুনের মধ্যেই এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়ার্কস অর্গানাইজেশন (পশ্চিম)-এর আওতায় ১৭ ইসিব অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ প্রকল্পের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিয়ে যায় এবং গত বছরের নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সিংহভাগ কাজ শেষ করে। আর প্যাকেজ-৪ ও ৩-এর আংশিক কাজ সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্ত্বাবধানে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হয়। ইতিমধ্যে এ প্রকল্পের শতভাগ কাজ শেষ হয়েছে। এ মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করার ফলে জয়দেবপুর থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত সড়কে যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে কোনোরকম যানজট কিংবা প্রতিবন্ধকতা থাকবে না। এখন থেকে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহে যাতায়াতের ক্ষেত্রে সময়ও আগের চেয়ে অনেক কমে যাবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন : জাপান ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন চার লেন প্রকল্পের কাজ ১০টি প্যাকেজে ভাগ করে তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়। এর মধ্যে দেশীয় প্রতিষ্ঠান রেজা কনস্ট্রাকশনকে দুটি ও টিবিএল-এসিএলকে দেওয়া হয় একটি প্যাকেজ। বাকি সাত প্যাকেজের কাজ দেওয়া হয় চীনের সিনোহাইড্রো করপোরেশনকে। প্রথম প্রকল্প প্রস্তাবনা অনুযায়ী এ প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে শেষ না হওয়ায় সময় বাড়ানো হয় দ্বিতীয় দফা ডিপিপিতে। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে ব্যয়ের পরিমাণও। কিন্তু নতুন সময়সূচি অনুযায়ীও শেষ করা যায়নি এ প্রকল্পের কাজ। সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প হলেও বিভিন্ন সময়ে নানা সমস্যা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে কাজ বার বার বাধাগ্রস্ত হয়। তৃতীয় দফায় সময় বাড়ানো হয় ডিসেম্বর ২০১৫ পর্যন্ত। এই সময়ে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। পরে আরও এক দফা সময় এবং ব্যয় বাড়ে এ প্রকল্পের। তাতে রক্ষণাবেক্ষণ ও অন্যান্য কাজের জন্য ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। আর সর্বশেষ অনুমোদিত ডিপিপি অনুযায়ী এ প্রকল্পের ব্যয় হচ্ছে ৩ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় একদিকে জনদুর্ভোগ ও ভোগান্তি যেমন বেড়েছে তেমন প্রকল্পের ব্যয়ও বেড়েছে গাণিতিক হারে; যার ফলে তিন বছরের কাজ শেষ হতে লেগেছে পাঁচ বছরেরও বেশি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ প্রকল্পের উদ্বোধন হলেও কিছু কিছু কাজ এখনো বাকি। তবে যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে এগুলো কোনো বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। এ কারণেই সড়কটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করতে প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে উদ্বোধন করানো হচ্ছে।

জানতে চাইলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেন প্রকল্পের অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক আবদুস সবুর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ইতিমধ্যে চার লেন প্রকল্পের মূল সড়কের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। তিনি জানান, এর পরও এ প্রকল্পের যেসব কাজ বাকি থাকবে তার মধ্যে রয়েছে রোড সাইন, সিগন্যাল, রোড মার্কিং, শোল্ডারে মাটি ভরাটের আংশিক কাজ। তবে যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে এগুলো তেমন বাধা হবে না। সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পের অন্যতম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করার কাজ উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গে এ মহাসড়ক দিয়ে চলাচলকারী যানবাহন ও সাধারণ মানুষের ভোগান্তিরও অবসান ঘটতে যাচ্ছে। এটি চার লেনে উন্নীত করার ফলে ঢাকা ও চট্টগ্রামের মধ্যে যাতায়াতের সময় কিছুটা কমবে। একই সঙ্গে দুর্ঘটনাও কমে আসবে বহুলাংশে।

সর্বশেষ খবর