শুক্রবার, ১ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

ভারতের সাত রাজ্যে পণ্য রপ্তানির অপার সম্ভাবনা

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

ভারতের সাত রাজ্যে পণ্য রপ্তানির অপার সম্ভাবনা

ভৌগোলিক কারণে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ‘সেভেন সিস্টারস’ খ্যাত সাতটি রাজ্য অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল এবং সেখানকার যোগাযোগব্যবস্থাও ভঙ্গুর। আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়, মিজোরাম, মণিপুর, নাগাল্যান্ড ও অরুণাচল— এ সাত রাজ্যের সঙ্গে ভারতের মূল ভূখণ্ডের যোগাযোগ যতটা  কঠিন, বাংলাদেশের সিলেটের সঙ্গে ওই রাজ্যগুলোর যোগাযোগব্যবস্থা ততটাই সহজ। অন্যদিকে দেশটির মূল ভূখণ্ড থেকে ওই সাত অঙ্গরাজ্যে পণ্য পরিবহন খুবই ব্যয়বহুল। ভারতের গুরুত্বপূর্ণ ওই সাত রাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের স্থল যোগাযোগ সহজ হওয়ায় এবং পণ্য পরিবহনে ব্যয় অনেকটা কম হওয়ায় এসব রাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক খুবই নিবিড় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এসব রাজ্যে সব ধরনের পণ্য রপ্তানির অপার সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশের। এদিকে সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজারের শেরপুরে স্পেশাল ইকোনমিক জোন স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ জোন স্থাপন হলে ভারতের ওই সাত রাজ্যের ব্যবসা-বাণিজ্য প্রায় পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করার সক্ষমতা অর্জন করবে বাংলাদেশ— এমনটা মনে করছেন এখানকার রপ্তানিকারকরা।

বৃহত্তর সিলেটের তিন দিক জুড়ে রয়েছে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের এ সাত রাজ্য। এ সাত রাজ্যে প্রায় সাড়ে চার কোটি জনসংখ্যা এবং ২০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি বাজার রয়েছে। সমীক্ষা অনুসারে, ভারতের অন্যান্য রাজ্য থেকে এ সাত রাজ্যে পণ্য পরিবহনে অতিরিক্ত ৫০ শতাংশ ব্যয় হয়। এ তুলনায় এসব রাজ্যে বাংলাদেশ থেকে পণ্য পরিবহন সহজতর এবং ব্যয়ও কম। যে কারণে সেখানকার ব্যবসা-বাণিজ্য চলে বাংলাদেশ থেকে আমদানিকৃত পণ্যে। বাংলাদেশের বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে তামাবিল, শ্যাওলা, জকিগঞ্জসহ সিলেটের অন্যান্য শুল্ক স্টেশন দিয়ে পণ্য পরিবহন করে ভারতের ওই সাত রাজ্যে। তবে ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে ওই রাজ্যগুলোয় পণ্য পরিবহনে ব্যয় কিছুটা বেড়ে যায়। তবে সিলেট স্পেশাল ইকোনমিক জোন গড়ার যে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার, তা বাস্তবায়ন হলে পরিবহন ব্যয় আরও অনেকটাই কমে আসবে। রপ্তানিকারকরা জানান, ভারতের ওই সাত রাজ্যে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক, সিমেন্ট, ইট, আসবাবপত্র, চানাচুর, মেলামাইন, জামদানি শাড়ি, লুঙ্গি, ইলিশ মাছ, ওষুধসামগ্রী, বাইসাইকেল, ব্যাটারি, ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক পণ্য, সিরামিক পণ্য, টাইলস, টয়লেট ফিটিংস, প্লাস্টিক পণ্য, প্যাকেটজাত ফলের রস, আইসক্রিম, মিনারেল ওয়াটার, সাবান, বিস্কুট, পিতলজাত পণ্য, টিন, এমএস রড, পাথর, চিপস, গোল আলু, ডাল, শুঁটকি, পিভিসি পাইপ, মশারি, কয়েল, শোপিস, সয়াবিন তেল প্রভৃতি রপ্তানি হয়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সিলেটে ইকোনমিক জোন স্থাপিত হলে এসব পণ্য আরও বেশি করে সেখানে রপ্তানি করা সম্ভব হবে। ইকোনমিক জোন গড়ে উঠলে ঢাকা বা চট্টগ্রাম থেকে তখন পণ্য পরিবহন করতে হবে না। এ ক্ষেত্রে পরিবহন ব্যয়ও অনেকটা কমে যাবে। বর্তমানে ভারতের অন্যান্য রাজ্য থেকে যেসব পণ্য ওই সাত রাজ্যে প্রবেশ করে, সিলেটে ইকোনমিক জোন স্থাপনের কাজ শেষ হলে সেসব পণ্যের বাজারও বাংলাদেশ দখল করতে পারবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। এ ক্ষেত্রে ওই রাজ্যগুলোর গোটা ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণকারী হয়ে উঠবে বাংলাদেশ। এ প্রসঙ্গে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স কালাম ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী আবুল কালাম বলেন, সেভেন সিস্টারস হিসেবে খ্যাত ভারতের ওই সাত রাজ্যে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির অপার সম্ভাবনা রয়েছে। সিলেটে ইকোনমিক জোন গড়ে উঠলে একদিকে পরিবহন ব্যয় কমবে, অন্যদিকে আরও বেশি পণ্য সেখানে রপ্তানি করে ব্যবসা-বাণিজ্যের পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে বাংলাদেশ। তখন ভারতের অন্যান্য অঞ্চল থেকে ওই রাজ্যগুলোয় যেসব পণ্য আসে, তাও বন্ধ হবে। সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক প্রশাসক ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সিলেটে স্পেশাল ইকোনমিক জোন গড়ে উঠলে এবং ভারতের ব্যবসায়ীদের সুযোগ দেওয়া হলে তারাও এই জোনে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হবেন। যেসব বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ভারতের বিভিন্ন স্থানে কারখানা স্থাপন করে ওই সাত অঙ্গরাজ্যে পণ্য রপ্তানি করে, সিলেটে ইকোনমিক জোন স্থাপন হলে তারা এখানেই কারখানা স্থাপন করবে। কারণ, বাংলাদেশে একদিকে সহজলভ্য শ্রমিক, অন্যদিকে পণ্য পরিবহন ব্যয়ও কম। এতে বেশি লাভবান হবে বাংলাদেশ।

সর্বশেষ খবর