শুক্রবার, ১ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

পছন্দের কলেজে ভর্তি হতে পারেনি অনেক শিক্ষার্থী

আকতারুজ্জামান

একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি নিয়ে বিভিন্ন কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও বাণিজ্য করার অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, শিক্ষার্থীর অনুমতি ছাড়াই ভর্তি নিশ্চায়ন, নির্ধারিত ফির তুলনায় বাড়তি অর্থ আদায়, ভর্তি বাতিল বাণিজ্য, শিক্ষার্থীর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আটকে রাখা ছাড়াও নানা অনিয়ম করেছে কলেজগুলো। ফলে এক কলেজে ভর্তির পর পছন্দের কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েও অনেকে ভর্তি হতে পারেননি।

গতকাল ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে ছিল ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উপচে পড়া ভিড়। ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, শিক্ষার্থী সংকটে থাকা রাজধানীর নামসর্বস্ব কলেজগুলো ছাত্র-ছাত্রীদের অনুমতি ছাড়াই ভর্তি নিশ্চায়ন করে দিচ্ছে। আবদুল্লাহিল বাকী নামে এক ভর্তিচ্ছু অনলাইনে আবেদনের পর রামপুরা রাজধানী আইডিয়াল কলেজে ভর্তির সুযোগ পায়। রামপুরা রাজধানী আইডিয়াল কলেজে খোঁজ নিতে এলে কলেজ অধ্যক্ষ বাকীর রোল নম্বর ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর রেখে দেন। এরপর তার অনুমতি বা কাগজপত্র ছাড়াই ভর্তি নিশ্চায়ন করে রেখে দেন। এতে বিপাকে পড়েছে এই ভর্তিচ্ছু। এখন ভর্তি বাতিলের জন্য বললে রামপুরা রাজধানী আইডিয়াল কলেজ অধ্যক্ষ বিকাশে ৮ হাজার টাকা পরিশোধ করতে বলেন। রাজধানীর মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ, খিলগাঁও মডেল কলেজ, ঢাকা মহানগর মহিলা কলেজের বিরুদ্ধেও রয়েছে ভর্তি বাতিল না করার অভিযোগ। তাহসিন আহমেদ নামে এক ভর্তিচ্ছু অভিযোগ করে জানিয়েছেন, মেধাতালিকায় চান্স পেয়ে মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজে ভর্তি হন তিনি। এরপর অপেক্ষমাণ তালিকার ফলাফলে মিরপুরের শহীদ পুলিশ স্মৃতি কলেজে ভর্তির সুযোগ পান। কিন্তু এতে বাদ সাধে মনিপুর কলেজ কর্তৃপক্ষ। তাহসিন জানান, কলেজটি থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, ভর্তি বাতিল করা যাবে না। একই অভিযোগ করে রাবি আহমেদ নামে আরেক ভর্তিচ্ছু জানান, মনিপুর কলেজে ভর্তি হওয়ার পর অপেক্ষমাণ তালিকার ফলাফলে তেজগাঁওয়ে বিএফ শাহীন কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন তিনি। অথচ মনিপুর কলেজ ছাড়পত্র দিচ্ছে না। আসিফ মোস্তফা নামে আরেক ভর্তিচ্ছু অভিযোগ করে বলেন, খিলগাঁও মডেল কলেজে ভর্তি হওয়ার পর মতিঝিল বালক সরকারি কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন তিনি। অথচ ছাড়পত্র না পাওয়ায় পছন্দের কলেজে ভর্তি হতে পারছেন না আসিফ। একই অভিযোগ করে ঢাকা মহানগর মহিলা কলেজে ভর্তি হওয়া তানজিনা আক্তার ইমার বাবা ইদু মিয়া বলেন, অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে ইমা বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু ঢাকা মহানগর কলেজের ছাড়পত্র না পাওয়ায় পছন্দের কলেজে ভর্তি হতে পারছে না ইমা। একই সঙ্গে আটকে দিয়েছে তার প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও। এ ছাড়া অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে প্রকাশ করা মেধাতালিকায় শূন্য আসনের চেয়ে কয়েকগুণ শিক্ষার্থী রাখায় অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে। ক্রম অনুসারে আসন পূরণ করার কথা থাকলেও ‘আগে আসলে আগে ভর্তি’ ভিত্তিতে কলেজগুলো ছাত্রছাত্রী ভর্তি করেছে। এমন অভিযোগ উঠেছে রাজধানীর উত্তরায় জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান কলেজসহ বেশ কয়েক কলেজের বিরুদ্ধে। ঢাকার কবি নজরুল সরকারি কলেজের বিরুদ্ধেও এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে ভর্তি নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে ঢাকার খিলগাঁও মডেল কলেজ, হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজসহ রাজধানীর বিভিন্ন কলেজে। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আন্তঃ শিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটির সভাপতি মাহাবুবুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, শিক্ষার্থীরা পছন্দের কলেজে ভর্তি হবে। ভর্তি বাতিল না করা, অতিরিক্ত ফি আদায়, শিক্ষার্থীর অনুমতি না নিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ ভর্তি নিশ্চায়ন করে রাখার অভিযোগ পেলে অবশ্যই এমন কলেজগুলোকে শাস্তির আওতায় আনা হবে । উল্লেখ্য, বিলম্ব ফিসহ কলেজে ভর্তি হওয়া যাবে ১০ থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত। একাদশ শ্রেণিতে ক্লাস শুরু হবে ১০ জুলাই।

সর্বশেষ খবর