শুক্রবার, ১ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

ওয়াসার এমডির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে মন্ত্রণালয়

সংস্থার খরচে ব্যক্তিগত সফর

নিজস্ব প্রতিবেদক

লাগামহীন দুর্নীতি ও অনিয়ম করেও দাপটের সঙ্গে টিকে থাকার এক অন্যতম উদাহরণ তাকসিম এ খান। নাগরিক সেবার সরকারি প্রতিষ্ঠান ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হয়েও তিনি স্থাপন করেছেন স্বেচ্ছাচারিতার ন্যক্কারজনক নজির। সরকারি ছুটির প্রজ্ঞাপনের শর্ত ভঙ্গ করে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা (এমডি) পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান তার ব্যক্তিগত সফরে সরকারি কোষাগার থেকে চার লাখ ছয় হাজার ১৩৯ টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়ের বেশি বিদেশে অবস্থানের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষিত হয়েছে। ছুটিতে অনিয়মের বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে সম্প্রতি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রণালয় থেকে এ ব্যাপারে ওয়াসার এমডিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে এলজিআরডি মন্ত্রী প্রকৌশলী খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিষয়টি আমি জেনেছি। একজন সংস্থাপ্রধানের এ ধরনের কাজ বড় অন্যায়।’ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন কিনা, জানতে চাইলে তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘কেন ব্যবস্থা নেব না? সে কি আমার নাতনিজামাই যে তাকে ছেড়ে দেব?’ ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান। জানা গেছে, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে তিন সপ্তাহের বেশি সময় আমেরিকা সফর করে সম্প্রতি কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান। ১৫ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত ১৮ দিনের ছুটি অনুমোদিত হলেও তিনি যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ২৫ দিন অবস্থান করেন। এমডির ঘোষণা ও ওয়াসার সচিবের স্বাক্ষরিত আদেশ অনুযায়ী, নিজ খরচে তার এ ব্যক্তিগত সফর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের একটি আমন্ত্রণপত্র দেখিয়ে তিনি তুলে নিয়েছেন চার লাখ টাকা। চিঠিতে তিনি আমেরিকায় তার ছুটিকালীন একটি সেমিনারে যোগ দেওয়ার কথা উল্লেখ করেন বলে নথিপত্রে দেখা যায়। কিন্তু ১১ মে ঢাকা ওয়াসার সচিব এস এম রেজাউল মোস্তফা কামালের স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান তিন সপ্তাহের আমেরিকা সফরে বিমান ভাড়াসহ সব খরচ নিজে বহন করবেন। ব্যক্তিগত এই সফরে সরকারি কোনো টাকা নেবেন না তিনি। অনুমোদিত ছুটির বেশি সেখানে অবস্থান করবেন না। অথচ এসব শর্ত ভঙ্গ করে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক চার লাখ ৬ হাজার ১৩৯ টাকা নিয়েছেন। এ ছাড়া যোগদান করেছেন অনুমোদিত ছুটির পাঁচ দিন পর ৭ জুন। ওয়াসার কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অভিযোগ, এমডি তাকসিম এ খান বিশ্বব্যাংকের নামে ভুয়া চিঠি দেখিয়ে সরকারের সঙ্গে প্রতারণা ও সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। তারা স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিবের কাছে তার বিরুদ্ধে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ দিয়েছেন। তাকসিম এ খানকে টাকা দিতে ওয়াসার বিল-ভাউচারে বলা হয়েছে, ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থানের সময় ১৮ মে এমডি তাকসিম ঢাকা ওয়াসা রাজধানীর অধিবাসীদের জন্য পানি সরবরাহ কাজের যে সফলতা অর্জন করেছে তার ওপর একটি কি-নোট উপস্থাপন করবেন। বিলে হোটেল ভাড়া বাবদ ৬৭৮ ডলার, হোটেল টিপস ২৩১ ডলার, ইন ও আউট বাবদ ১৫০ ডলার, বিমান টিকিট বাবদ ৪১০০ ডলারসহ মোট ৫ হাজার ১৪১ মার্কিন ডলার খরচের হিসাব দেখানো হয়। এ বিষয়ে জানতে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

সর্বশেষ খবর