শুক্রবার, ১ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

অবশেষে মায়ের কোলে সনু

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

অবশেষে মায়ের কোলে সনু

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ কাছে টেনে নেন সনুকে

দীর্ঘ ছয় বছর পর নিজের বাবা-মায়ের কোলে ফিরে এলো দিল্লি থেকে অপহূত বালক সনু (১২)। গতকাল দুপুরের দিকে বাংলাদেশ থেকে তাকে নিয়ে আসা বিমান দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে   অবতরণ করে। লাল টি-শার্ট পরিহিত সনুর সঙ্গে ছিলেন তার বাবা মেহবুব ও মা মুমতাজ। বিমানবন্দরের বাইরে অপেক্ষারত টিভি ও পত্রিকার সাংবাদিকদের দেখে কিছুটা নার্ভাস হয়ে পড়ে ছোট্ট সনু। বাবার হাত ধরে ক্যামেরার সামনে লাজুক মুখে শুধু বলে, ‘ভালো লাগে’। এরপর তার বাবা মেহবুব জানান, ‘আমি আমার ছেলেকে ফিরে পেয়েছি, আমি খুব খুশি। আমি আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।’ ধন্যবাদ জানিয়েছেন সনুকে উদ্ধারকারী ব্যক্তি জামাল ইবনে মুসাকেও। বলেন, ‘তিনি না থাকলে ছেলেকে ফিরে পেতাম না।’ সনুকে দেখার জন্য বিমানবন্দরের বাইরে অপেক্ষা করছিলেন সনুর স্বজন ও প্রতিবেশীরাও। এদিকে বিমানবন্দর থেকে সনুকে নিয়ে তার বাবা-মা সোজা চলে যান দিল্লির জওহরলাল নেহেরু ভবনে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অফিসে। সেখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে দেখা করেন তারা। সুষমার সঙ্গে দেখা করে তার পায়ে হাত দিয়ে দোয়া চান ছোট্ট সনু ও তার মা মুমতাজ। সনুকে আদর করে জড়িয়ে ধরেন সুষমা। জানা যায়, ২০১০ সালে সনুকে ভারতের নয়া দিল্লি থেকে পাচার করে বরগুনার বেতাগী উপজেলার গেরামর্দন গ্রামের হাসি বেগমের হাতে তুলে দেয় পাচারকারীরা। সনুর ওপর হাসি বেগম অত্যাচার চালাতেন। এর প্রতিবাদ করেন একই গ্রামের বাসিন্দা ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা জামাল ইবনে মুসা। জামাল সনুকে তার মা-বাবার কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিলে ক্ষিপ্ত হয়ে তার বিরুদ্ধে চারটি মামলা করেন হাসি বেগম। এসব মামলায় জামাল দুই দফায় ১ মাস ১৯ দিন কারাভোগ করেন। ফলে তার চাকরিও চলে যায়। নির্যাতনের শিকার সনু একপর্যায়ে হাসি বেগমের বাড়ি থেকে পালায়। পরে জামাল তাকে খুঁজে বের করে আদালতে তুলে দেন। আদালত সনুকে কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠায়। নিজ খরচে জামাল গত ১৪ মে দিল্লিতে গিয়ে সনুর মা-বাবার সন্ধান পান। এরপর তিনি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে দেখা করে বিস্তারিত জানান। পরে ভারত ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সনুকে দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এর মধ্যে ভারতীয় হাইকমিশনের উদ্যোগে পরীক্ষা করা হলে সনুর সঙ্গে তার মা-বাবার ডিএনএ মিলে যায়। গত মঙ্গলবার ভারতীয় হাইকমিশনের নিযুক্ত আইনজীবী সঞ্জীব কুমার দাস আবার ওই আদালতে জামানত ছাড়াই সনুকে ফিরিয়ে দেওয়ার আবেদন করেন। আদালত চলমান মামলায় সনুকে হাজির করার শর্তে তাকে ভারতীয় হাইকমিশনের ওই কর্মকর্তার জিম্মায় দেওয়ার আদেশ দেয়। পরে সেদিনই বিকালে আদালত থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সনুকে গ্রহণ করেন ভারতীয় হাইকমিশনের প্রথম সচিব রমাকান্ত গুপ্ত। আদালতের আনুষ্ঠানিকতা শেষে সনুকে বরগুনা জেলা জজ আদালতের সামনের চত্বরে আনা হলে সেখানে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। সনু ও জামাল একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। জামাল বলেন, ‘আমার ওপর দিয়ে অনেক ঝড় গেছে। আজ সেই কষ্ট মুছে গেল। ওকে আমি ওর বাবা-মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিতে পেরেছি। এর চেয়ে খুশি আমার জীবনে আর কী হতে পারে।’ সনু বলে, ‘যেদিন শুনেছি আমাকে বাবা-মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হবে, সেদিন থেকে আমি বাবা-মাকে দেখার জন্য অপেক্ষায় আছি। তাদের কাছে ফিরে যাওয়ার জন্য আমি সবকটি রোজাও রেখেছি।’ গতকাল বাবা-মায়ের কোলে সনুর ফিরে যাওয়ার খবর শোনা পর জামাল বলেন, ‘এটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর