শনিবার, ২ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

ভোগান্তি নেই তবুও ভিড়

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভোগান্তি নেই তবুও ভিড়

কমলাপুরে ট্রেনের জানালায় ঈদ যাত্রার আনন্দে দুই শিশু। গাবতলীতে গতকাল বাসের অপেক্ষায় যাত্রীরা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে নাড়ির টানে গ্রামে ছুটছেন মানুষ। সবার মাঝে উৎসবের আমেজ। স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করবেন বলে ঢাকা ছাড়ছেন তারা। বাস ও ট্রেনের জন্য ঘরমুখী মানুষের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা, ভোগান্তি অনেকটাই কমেছে। গত কয়েক বছর ঈদযাত্রায় দুর্ভোগ-ভোগান্তি যাত্রীদের নিত্য সঙ্গী হলেও এবার একটু ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে।

ঈদের ছুটির শুরুতে গতকাল রাজধানীর বাস টার্মিনাল ও রেল স্টেশনে ভিড় থাকলেও তেমন ভোগান্তি পোহাতে হয়নি যাত্রীদের। ঈদযাত্রায় স্বস্তির কথা শোনা গেছে সবার মুখে। এমনকি গতকাল কোনো কোনো কাউন্টারে পাওয়া গেছে ঈদের টিকিট। অবশ্য ‘কিছুটা দেরিতে’ গাড়ি ছাড়ার অভিযোগ করেছেন কেউ কেউ। এ ছাড়া ট্রেন ছাড়ার সময় নিয়ে যাত্রীদের কিছু অভিযোগ ছিল। সিডিউল বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হয়েছে অনেক ট্রেনযাত্রীকে। প্রায় এক ঘণ্টা পরে অনেক ট্রেন ছেড়ে গেছে গন্তব্যে। রোজা আর তীব্র গরম উপেক্ষা করেও ট্রেনের অপেক্ষায় দীর্ঘ সময় ধরে প্লাটফর্মে বসে থাকতে হয়েছে যাত্রীদের। তারপরেও অন্য বছরের তুলনায় এবার ঝামেলা কম ছিল বলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন সবাই।  গতকাল শুরু হয়েছে টানা নয় দিনের ঈদের ছুটি। ৯ জুলাই ছুটি শেষে আগামী ১০ জুলাই কাজে যোগ দেবেন সরকারি চাকরিজীবীরা। তবে ঈদের ছুটি শুক্রবার শুরু হলেও বৃহস্পতিবার শেষ অফিস সেরেই ঢাকা ছেড়েছেন অনেকে। গাবতলীতে শ্যামলী পরিবহনের মহাব্যবস্থাপক পারভেজ বলেন, ৪০ শতাংশ মানুষ বৃহস্পতিবার ঢাকা ছাড়ায় শুক্রবার তেমন ভিড় নেই। ২৭ রোজার দিন ভিড় হতে পারে।

ভুক্তভোগীদের কথা : দিনাজপুরে যাবেন আমিনুল। গ্রামের বাড়ি ঈদ করতে গাবতলী থেকে হানিফ পরিবহনের গতকাল সকাল ৯টার বাসের টিকিট কেটেছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, সোয়া ১০টায়ও সে গাড়ি টার্মিনালে আসেনি। আর একজন বলেন, গ্রামের বাড়ি দিনাজপুর যেতে হানিফ পরিবহনের টিকিট কেটেছিলেন। সকাল ৯টায় গাড়ি ছাড়ার কথা থাকলেও ১০টায়ও ছাড়েনি। তবে হানিফ পরিবহনের মহাব্যবস্থাপক মোশাররফ হোসেন দাবি করেন, ঘড়ি ধরেই গাড়ি ছাড়ছেন তারা। অবশ্য গাড়ি ছাড়তে ‘যেটুকু দেরি হচ্ছে’ সেজন্য ‘হালকা যানজটকে’ দায়ী করেন তিনি। গাবতলীতে গোল্ডেন লাইন পরিবহনের কাউন্টার ব্যবস্থাপক সোহেল হাওলাদার বলেন, তাদের সকাল ৮টার গাড়িতে সাতটি সিট ফাঁকা গেছে। জানা গেছে, প্রতি গাড়িতে ৮ থেকে ১০টি করে আসন ফাঁকা যাচ্ছে। উত্তরবঙ্গের যাত্রী থাকলেও খুলনা-বরিশাল রুটের যাত্রী কম; লম্বা ছুটির জন্য এই অবস্থা। অন্যদিকে অনেকে ভাড়া বেশি নেওয়ার অভিযোগ করেন। এক যাত্রী বলেন, নির্ধারিত ভাড়ায় চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা আসতে পারলেও ঢাকা থেকে মাগুরা যেতে ৪০০ টাকার টিকিট ৫৫০ টাকায় কিনতে হয়েছে। টিকিটের জন্য একটু ঘুরতে হলেও টিকিট পেয়েছি— এটাই স্বস্তির কথা।

ট্রেনের সময় এলোমেলো : রোজা আর তীব্র গরম উপেক্ষা করেও ট্রেনের অপেক্ষায় দীর্ঘ সময় ধরে প্লাটফর্মে বসে আছেন অনেক যাত্রী। সবার হাতে ব্যাগ, কারও সঙ্গে স্ত্রী-সন্তান, বন্ধু-বান্ধব, প্রিয়জন অথবা কেউ কেউ একা বসে আছেন। প্লাটফর্মে প্রবেশ মাত্রই যাত্রীদের হাতে আইনি সহায়তা সংক্রান্ত বিভিন্ন সচেতনতামূলক তথ্য সংবলিত লিফলেট ধরিয়ে দিচ্ছেন রেলওয়ে পুলিশের সদস্যরা। দূরপাল্লার যাত্রায় ভোগান্তি আর দুর্ভোগ থাকলেও স্বজনদের সঙ্গে ঈদের খুশি ভাগাভাগি করতে পারার আনন্দটাই যেন তাদের কাছে প্রধান লক্ষ্য। ঘরে ফেরা মানুষগুলোর চোখে-মুখে ছিল বাড়ি ফেরার উচ্ছ্বাস ও আনন্দ। ট্রেন ছাড়ার সময় হতে বাকি প্রায় চার ঘণ্টা। এরই মধ্যে কমলাপুর রেল স্টেশনের ৩ নম্বর প্লাটফর্মে এসে উপস্থিত হয়েছেন ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেসের যাত্রী এনায়েত করিম। তিনি জানান, আমার বন্ধু সকালে রাজশাহীতে গেছে ধূমকেতু এক্সপ্রেসে করে। সে সময় যাত্রীর ভিড় ছিল। নিজের সিটে গিয়ে বসতেও অনেক কষ্ট। তাই একটু আগেই এসেছি যেন ভোগান্তিতে না পড়তে হয়।  সরকারি ছুটির প্রথম দিনে কমলাপুর স্টেশনের ৩৩টি ট্রেনের মধ্যে দুপুর পর্যন্ত ছেড়ে গেছে ২৩টি। সুন্দরবন ও ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেন দুটি ছেড়ে গেছে নির্ধারিত সময়ের পরে। দুপুরের পরে রাজশাহীগামী সিল্কসিটি ২টা ৪০ মিনিটে স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। সময় পেরিয়ে সাড়ে ৩টা বাজলেও প্লাটফর্মে এসে পৌঁছায়নি ট্রেনটি। নোয়াখালীগামী উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেন ছাড়ার নির্ধারিত সময় ছিল ৩টা ২০ মিনিট। সেটিও কখন আসবে কিংবা কখন ছেড়ে যাবে, তারও কোনো ঘোষণা দেননি রেলের কর্মকর্তারা।

গতকাল বেলা ৩টায় ঈদ যাত্রার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য স্টেশনে আসেন রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘সাধারণ মানুষ যেন সুন্দরভাবে নির্বিঘ্নে ঈদ করতে পারেন, সেই সেবা দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য। নিরাপদে সাশ্রয়ীভাবে সমগ্র বাংলাদেশে আমাদের ট্রেন চলাচল করছে। আর সচেতন মানুষ সবাই এতে ভ্রমণ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।’ এখন পর্যন্ত কোনো সিডিউল বিপর্যয় হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এবার সিডিউল বিপর্যয়ের কোনো সম্ভাবনা নেই। প্রায় দুই লাখ ষাট হাজার যাত্রী পরিবহনের মতো ক্ষমতা আমাদের আছে। যেন যথাসময়ে ট্রেনগুলো স্টেশন ছেড়ে যেতে পারে সে লক্ষ্যে আমাদের স্টেশনের কর্মকর্তারা কাজ করছেন এবং বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছেন। গতবারের চেয়ে এবার অনেক যাত্রী বেড়েছে। একই সঙ্গে কালোবাজারি ও মলম পার্টির তত্পরতা রুখতে আইনশৃঙ্খলার বিভিন্ন সংস্থার লোকজন সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন।’

জানা গেছে, প্রতিদিন ১৩২টি ট্রেন কমলাপুর থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে আসা-যাওয়া করে। আর ঈদের আগের ৩ দিন থেকে আরও ৩ জোড়া স্পেশাল ট্রেন সার্ভিস চালু রাখা হবে। সেগুলো পার্বতীপুর, খুলনা ও দেওয়াগঞ্জ পর্যন্ত যাবে।

সদরঘাটে একটু বেশি ভিড় : ঈদের ছুটিতে সদরঘাটেও ছিল দক্ষিণাঞ্চলের মানুষদের ভিড়। সকাল থেকে বাড়ি ফেরা মানুষের ঢল নামে লঞ্চ টার্মিনালে। রাতে ফেরা লঞ্চের ডেকে বেডসিট বিছিয়ে দখল করে রাখেন নিজের জায়গাটুকু। মানুষের ভিড়ে ঘাট, পন্টুন, লঞ্চের ডেক আর করিডোর পরিপূর্ণ হয়ে যায়। স্বাচ্ছন্দ্যে সহজে গ্রামে ফিরে ছুটি কাটাতে বাড়ির উদ্দেশ্যে দলে দলে মানুষ ঢাকা ত্যাগ করতে শুরু করেন। দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে নৌ যোগাযোগের বৃহৎ নদী বন্দর এই সদরঘাট। এখান থেকে পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, ঝালকাঠি, চাঁদপুর, হাটুরিয়া, ভাণ্ডারিয়াসহ দেশের ৪১টি নৌ-পথের বিভিন্ন গন্তব্যে প্রতিদিন প্রায় ১৮৩টি লঞ্চ ছেড়ে যায়। ঢাকা-বরিশাল রুটের সুন্দরবন-৬, সুন্দরবন-৯, সুন্দরবন-১০ ও সুরভী-৯, ঢাকা-পটুয়াখালী রুটের দ্বীপরাজ-২ ও এমভি ঈগল এবং ঢাকা-ভোলা রুটের এমভি দিঘলদী, কর্ণফুলী-১০ ও এমভি ইয়াদ, ঢাকা-চাঁদপুর রুটের এমভি মধুমতি ও নিউ আল বোরাক, ভাষানচরের সম্রাট-২ লঞ্চগুলোর ডেকে ছিল না তিল ধারণের ঠাঁই। লঞ্চের কেবিন ও বারান্দা এমনকি ছাদেও মানুষের উপচেপড়া ভিড় ছিল।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর