শনিবার, ২ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

সতর্ক প্রশাসন, পাড়ায় মহল্লায় পুলিশ

নয় দিন ছুটি

নিজস্ব প্রতিবেদক

রমজানের ঈদে টানা নয় দিনের ছুটিতে ফাঁকা রাজধানীতে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। বাসাবাড়ি, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এবং মার্কেটগুলোয় ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি ঠেকাতে এবং নগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নেওয়া হচ্ছে বিশেষ নিরাপত্তা কৌশল। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিতে পোশাকে এবং সাদা পোশাকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের টহলের পাশাপাশি বাসাবাড়ি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরাপত্তাব্যবস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে সাজানো হচ্ছে বিশেষ এ নিরাপত্তা। এরই মধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের পক্ষ থেকে প্রতিটি বিভাগের উপকমিশনার থেকে তদূর্ধ্ব কর্মকর্তাদের এ-সংক্রান্ত বিশেষ নির্দেশনাও পাঠানো হয়েছে। অন্য যে কোনো বছরের তুলনায় এবার লম্বা ছুটি হওয়ায় এমনই আয়োজন বলে নিশ্চিত করেছে সূত্র।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর বনানীতে ঈদবস্ত্র বিতরণকালে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, রাজধানীতে তল্লাশি, টহল বাড়ানো এবং বেশিসংখ্যক চেকপোস্ট বসানো হবে। পুলিশ বিভিন্ন বাসাবাড়ি, দোকান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে গার্ড বা নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে নগরবাসীর নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে। নির্বিঘ্ন নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশ সদস্য ও বাড়িওয়ালারা সমন্বয় করে কাজ করবেন। এর বাইরে লঞ্চ-বাস টার্মিনাল ও রেলওয়ে স্টেশনগুলোয় পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কমিশনার বলেন, ঈদে ঢাকার বেশির ভাগ মানুষ গ্রামে চলে যায়। এ সময় ফাঁকা রাজধানীতে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড যাতে না ঘটে, সেজন্য কয়েকটি স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ কারণে রোজা শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো অঘটন ঘটেনি বলে তিনি উল্লেখ করেন। ডাকাতি, ছিনতাই, অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। রাজধানীতে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও নৈরাজ্য কোনোভাবে বরদাস্ত করা হবে না বলেও কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।

সূত্র বলছে, র‍্যাব এরই মধ্যে কারা অপরাধ সংঘটিত করতে পারে তাদের একটি তালিকা করে সংশ্লিষ্ট ব্যাটালিয়নগুলোয় সরবরাহ করেছে। একই ব্যবস্থা নিয়েছে ডিএমপিও। এরই মধ্যে কয়েকজনকে গ্রেফতার করে আইনে সোপর্দ করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রাজধানীতে থাকবে র‍্যাব ও পুলিশের ১০ হাজার সদস্য। ডিএমপির ৮টি বিভাগ ও কূটনৈতিক এলাকায় চেনসারি জোনে বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশের ৭ হাজার সদস্য এবং র‍্যাবের পাঁচটি ব্যাটালিয়নের প্রায় ৩ হাজার সদস্য মোতায়েন থাকবে। এ ছাড়াও থাকছে বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, স্ট্রাইকিং ফোর্স, পুলিশের বিশেষ টিম সোয়াত, মোটরসাইকেলে টহল, ফুট পেট্রল, তল্লাশি চৌকি, সাদা পোশাকের গোয়েন্দা ইউনিট ও ডগ স্কোয়াড। গতকাল ২৫ রমজানের পর থেকেই পূর্ণশক্তি নিয়ে মাঠে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

ঈদের সময় নগরবাসী যাতে নির্বিঘ্নে ঈদ উদ্যাপন করতে পারে, এজন্য প্রথাগত কালো পোশাকের বাইরেও সাদা পোশাকে র‍্যাব সদস্যরা নগরীর বিভিন্ন মার্কেট, আবাসিক এলাকা, কূটনৈতিক পাড়াসহ রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় টহল দেবে। চাঁদাবাজি, ছিনতাই, চুরি, ডাকাতির মতো অপরাধ যাতে না ঘটতে পারে সেজন্য সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। রাজধানীর বিভিন্ন প্রবেশপথে নিরাপত্তা চৌকি বসিয়ে তল্লাশি করা হবে। ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমান বলেন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ফুট পেট্রল, মোবাইল পেট্রল এবং স্থানীয় নিরাপত্তাব্যবস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপত্তাব্যবস্থা সাজানো হয়েছে। এর বাইরে পোশাকে এবং সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্যরা টহল দেবে। এর বাইরে নগরবাসীর সচেতনতা সৃষ্টিতেও প্রচার চালানো হচ্ছে। তাত্ক্ষণিক অভিযোগ বা সমস্যা জানানোর জন্য পুলিশের নিয়ন্ত্রণকক্ষ খোলা হবে।

র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ঈদের ছুটিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে র‍্যাবের ৮ হাজার সদস্য প্রস্তুত থাকবে। কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যাতে ঘটতে না পারে সেজন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর