রবিবার, ৩ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা
গুলশানে জঙ্গি হামলা

স্তব্ধ ঢাকার বিদেশিরা

নিহত ৯ ইতালিয়ান, ৭ জাপানি ও ১ ভারতীয়

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

স্তব্ধ ঢাকার বিদেশিরা

গুলশানে জিম্মিদের উদ্ধার অভিযানের আগে হ্যান্ড মাইকে উত্সুক জনতা ও গণমাধ্যম কর্মীদের সরে যেতে অনুরোধ জানানো হয়। সেনাবাহিনীর অভিযানের প্রস্তুতি —বাংলাদেশ প্রতিদিন

গুলশানের ও’কিচেন রেস্টুরেন্ট ও হলি আর্টিসান বেকারিতে কমবেশি যাতায়াত ছিল ঢাকার প্রায় সব বিদেশি নাগরিকের। বেশির ভাগ বিদেশি দূতাবাসের কূটনীতিক, মিশন কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী ও অন্যান্য পেশাজীবীরা প্রায়শই ছুটির দিনে সপরিবারে গিয়ে দীর্ঘ সময় কাটাতেন এ দুই প্রতিষ্ঠানের লনে। শিশুরা খোলা বাগানে ছুটে বেড়ানোর সুযোগ পেত বলে ভিনদেশি দম্পতিগুলোর বিশেষ পছন্দ ছিল লেকপাড়ের এই প্রতিষ্ঠান। আর প্রয়োজনীয় বেকারি পণ্যের গুণগত মানের বিষয়ে বিদেশিদের বিশেষ আস্থা ছিল হলি আর্টিসানের ওপর। এমন জায়গায় লোমহর্ষকভাবে ১৫ বিদেশিকে গলা কেটে হত্যার ঘটনা স্তব্ধ করে দিয়েছে ঢাকায় বসবাসরতদের।

হতবিহ্বল এসব ভিনদেশি গতকাল সারা দিনই ছিলেন লোকচক্ষুর আড়ালে। অবশ্য বেশির ভাগ রাষ্ট্রের রাজধানী থেকে তাদের নাগরিকদের সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন ও প্রকাশ্যে চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে ইন্দোনেশিয়া, সুইডেন, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ফ্রান্স, ইতালি, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দূতাবাসের পক্ষ থেকে। ভ্রমণ সতর্কতা জারি করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে। বাংলাদেশের পাশে থাকার কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে, ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী হুগো সুয়ের।

কূটনৈতিক সূত্রের খবর অনুযায়ী, গতকাল জিম্মি সংকট কেটে যাওয়ার পর বিদেশি দূতাবাসগুলোর পক্ষ থেকে তাদের নাগরিকদের একের পর এক বার্তা দিয়ে সতর্ক করা হয়। আপাতত সংকট কাটলেও ভবিষ্যতের নিরাপত্তা নিয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়। প্রকাশ্যে চলাচল থেকে বিরত থাকতে বলা হয়।

জানা গেছে, রেস্টুরেন্টে হামলায় ৯ জন ইতালীয়, ৭ জন জাপানি এবং ১ জন ভারতীয় নাগরিক নিহত হয়েছেন। ইতালির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ‘বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী নিশ্চিত করেছেন ২০ জন জিম্মি নিহত হয়েছেন এবং ১৩ জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে’। ইউরোপিয়ান কমিশনের হাই রিপ্রেজেন্টিটিভ ফেডেরিকা  মোগেরিনি এক বার্তায় বলেছেন, ‘গতকাল রাতে ঢাকায় কয়েকজন ইউরোপিয়ানসহ বাংলাদেশি ও বিদেশি নাগরিক আহত ও নিহত হন এবং এটি সারা বিশ্বের  জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। সন্ত্রাসবাদ একটি বৈশ্বিক ঝুঁকি এবং আন্তর্জাতিক সমাজকে একসঙ্গে এটি মোকাবিলা করতে হবে।’  তিনি বলেন, ‘আমি ইতালিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাওলো জেন্টিলোনির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি এবং বাংলাদেশে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন দূতাবাসকে ইতালিয়ান দূতাবাসকে সর্বোত সহায়তা করতে বলেছি। আজকে এ দিনে আমরা বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করছি।’ ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে এ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলা হয়েছে, সন্ত্রাসবাদ একটি বৈশ্বিক সমস্যা এবং ফ্রান্স আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে সব জায়গায় এটি মোকাবিলা করতে বদ্ধপরিকর।

লন্ডন থেকে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী হুগো সুয়ের ভিন্ন দুটি টুইট বার্তায় বিবেকহীন হামলার নিন্দা জানিয়ে পাশে থাকার কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমি মর্মাহত। আমরা বাংলাদেশের সরকার ও হতাহতদের পরিবারের সদস্যদের পাশে আছি।’ ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তার  নাগরিকদের ভ্রমণ সতর্কতা পরিবর্তন করে নাগরিকদের সাবধানে চলাফেরা করার জন্য এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষের পরামর্শ মেনে চলতে বলা হয়েছে। আরও বলা হয়, যেসব জায়গায় বিদেশি নাগরিকরা বড় আকারে জমায়েত হন, সেসব জায়গা- যেমন আন্তর্জাতিক হোটেল, ক্লাব, বড় সুপারমার্কেট ও রেস্টুরেন্ট যুক্তরাজ্য নাগরিকদের এড়িয়ে চলতে বলা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী এক টুইট বার্তায় বলেন, ‘ঢাকায় এই হামলা আমাকে বর্ণনাতীত ব্যথিত করেছে। আমি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলে এই কাপুরুষোচিত হত্যার ?তীব্র নিন্দা জানিয়েছি। ভারত বাংলাদেশি ভাইবোনদের পাশে আছে। নিহত ব্যক্তিদের প্রতি সমবেদনা, আহত ব্যক্তিদের দ্রুত সুস্থ হওয়ার জন্য প্রার্থনা করি।’ পরে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ এক টুইট বার্তায় গুলশানের ওই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। ১৮ বছর বয়সী তারুশী জেইন নামের ভারতীয় এক তরুণী নিহত হয়েছেন বলেও টুইট বার্তায় উল্লেখ করেন তিনি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গুলশানে সন্ত্রাসী আক্রমণে ২০ বিদেশি নিহতের ঘটনায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী ইতালি ও জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। গতকাল দুপুর ১২টায় জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলীর সঙ্গে কথা বলে তার উদ্বেগ ও সমবেদনা জানান। ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাওলো জেন্টিলোনি একই সুরে বলেন, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় তাদের পক্ষে যতদূর সম্ভব তারা সহায়তা দেবেন। উভয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলীকে অনুরোধ করেছেন তাদের নাগরিকদের মৃতদেহ যতদ্রুত সম্ভব দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য।

সর্বশেষ খবর