সোমবার, ৪ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনীতে ঢাকা, সারা দেশে সতর্কতা

এখনো আতঙ্ক কাটেনি

নিজস্ব প্রতিবেদক

গুলশানের রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার পর রাজধানীজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করতে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ। নেওয়া হয়েছে কয়েক স্তরের বিশেষ নিরাপত্তামূলক পদক্ষেপ। বাড়ানো হয়েছে তল্লাশি চৌকি ও টহল।

সরেজমিন দেখা গেছে, রাজধানীর অভিজাত আবাসিক এলাকা ও প্রধান প্রধান সড়কে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিশেষ করে গুলশান-২ এলাকায় বাসিন্দাদের বাসায় যেতে ও বের হতেও তল্লাশি করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। একইভাবে রাজধানীর বিভিন্ন আবাসিক এলাকার প্রবেশপথেও তল্লাশি করা হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, বিমানবন্দর, ট্রেন, বাসস্টেশন ও লঞ্চঘাটেও বাড়ানো হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, গুলশানের হামলা ও ঈদের কারণে রাজধানীতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এ ছাড়া সারা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতেও কাজ করছেন তারা।   শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে গুলশান-২ নম্বরে হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পর রাজধানীতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ভয়াবহ ওই জঙ্গি হামলার দুই দিন পরও আতঙ্ক কাটেনি বাসিন্দাদের মধ্যে। গুলশানসহ অন্যান্য এলাকার বাসিন্দারাও আতঙ্কে দিনাতিপাত করছেন। বিশেষ করে গুলশানের পুরো এলাকা এখন নীরব, নিস্তব্ধ। গুলশানে ঢোকার সবগুলো প্রবেশদ্বারেই বসানো হয়েছে পুলিশের চেকপোস্ট। বাড়তি নিরাপত্তা জোরদারে গাড়ি চলাচলও সীমিত করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকেই গুলশানের বাসিন্দাদের তল্লাশির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় যেতেও ভয় পাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এদিকে জঙ্গি হামলার ঘটনায় রাজধানীর গুলশান, বিমানবন্দর এলাকাসহ ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশপথে বিশেষ নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। গতকাল ওই এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গুলশানের ভিতর দিয়ে যাওয়া বড় সড়কে সীমিত আকারে গাড়ি চলাচল রয়েছে। এগুলোকেও ব্যাপক তল্লাশির মুখে পড়তে হচ্ছে। প্রত্যেক মোড়েই রয়েছে পুলিশের টহল। প্রবেশদ্বারগুলো থেকে ঢুকতে গেলেই সব ব্যক্তি, যানবাহনকে ব্যাপকভাবে তল্লাশি করা হচ্ছে। দিনের বেলা গাড়ি চলাচল কিছুটা থাকলেও সন্ধ্যার পর নির্দিষ্ট পরিচয় ছাড়া কোনো ব্যক্তি বা গাড়ি ওই এলাকায় ঢুকতে পারছেন না। রাত ১২টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত সব ধরনের ভারী যান চলাচল একেবারে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য গাড়িকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে ব্যাপক তল্লাশির পর। বিশেষ করে মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার ও সিএনজিচালিত অটোরিকশাকেই বেশি তল্লাশির মুখে পড়তে হচ্ছে। সন্দেহজনক ব্যক্তিদের দেহ তল্লাশি করা হচ্ছে। নতুন বাজার, বনানী, হাতিরঝিলসহ সবগুলো প্রবেশদ্বারে পুলিশ পাহারা সার্বক্ষণিক রয়েছে। এ ছাড়া পুরো এলাকায় পুলিশের টহল অন্যান্য সময়ের চেয়ে অনেক বেশি চোখে পড়েছে। নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মোহাম্মদ হাফিজুর জানান, গুলশানের সবগুলো প্রবেশদ্বারেই নিরাপত্তা চৌকি বসানো হয়েছে। এখানে রাত-দিন মোট ১৬টি চেকপোস্টে কাজ করছেন পুলিশ সদস্যরা। এ অবস্থা অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত চলবে। এদিকে গাবতলী, আবদুল্লাহপুর, বিমানবন্দর, যাত্রাবাড়ীসহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। এসব স্থানে পুলিশ মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার ও সিএনজিচালিত অটোরিকশাকে তল্লাশি করছে। এ ছাড়া উত্তরা থেকে বিমানবন্দর রাস্তায় চলাচলকারীদেরও নানা তল্লাশির মুখোমুখি হতে হচ্ছে বলে জানা গেছে। এসব চেকপোস্টে সাধারণ মানুষকে নানা হয়রানি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ঈদের সময় রাজধানীর বিশেষ নিরাপত্তায় নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ। নেওয়া হয়েছে কয়েক স্তরের বিশেষ নিরাপত্তা। বাড়ানো হয়েছে তল্লাশি চৌকি ও টহল। তারপরও বাসা-বাড়ির নিরাপত্তায় নগরবাসীকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, পুরো রাজধানী এবার নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশে গুপ্তহত্যা, টার্গেট কিলিং ও জঙ্গি তত্পরতা বেড়ে যাওয়ার কারণেই মূলত পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। মার্কেট, বিপণি বিতান ও ব্যাংকপাড়ায় নিয়মিত পুলিশের পাশাপাশি আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) এবং র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে। নিয়মিত পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও সার্বক্ষণিক নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকছে পুলিশ। বাস ও লঞ্চ টার্মিনালগুলোতে থাকছে পুলিশ ও র‌্যাবের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ।

সর্বশেষ খবর