সোমবার, ৪ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

পুলিশ যাকে জঙ্গি বলছে তিনি আসলে শেফ

সেই সাইফুলের বাড়িতে শোকের মাতম

শরীয়তপুর প্রতিনিধি

পুলিশ যাকে জঙ্গি বলছে তিনি আসলে শেফ

গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলাকারী হিসেবে যাদের ছবি পুলিশ দিয়েছে, তার মধ্যে একজন ওই ক্যাফের রাঁধুনি বলে তার পরিবারের দাবি। তারা বলছেন, যে পাঁচটি লাশের ছবি গণমাধ্যমে এসেছে, তাদের একজন সাইফুল ইসলাম চৌকিদার দেড় বছর ধরে ওই ক্যাফেটিরই শেফ হিসেবে কাজ করছিলেন। পাঁচজনের মধ্যে সাইফুলের পরনে  যে পোশাক রয়েছে, তা শেফরাই পরে থাকেন। তা দেখে     ফেসবুকেও তাকে নিয়ে পুলিশের দাবির বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা হচ্ছে। পুলিশের পাঠানো ছবি গণমাধ্যমে আসার পর সাদা অ্যাপ্রোন পরা ব্যক্তিকে সাইফুল বলে শনাক্ত করেন শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায় থাকা তার পরিবারের সদস্যরা। গতকাল নড়িয়ার কলুকাঠি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বৃষ্টির মধ্যেই সাইফুলের বাড়িতে প্রতিবেশীসহ শত শত মানুষের ভিড়। দুই মেয়ে সামিয়া ও ইমলিকে নিয়ে বিলাপ করছেন তার স্ত্রী সোনিয়া আক্তার (২৭)। ক্যাফের এক কর্মচারী সাংবাদিকদের বলেন, ‘ক্যাফের পিত্জা  শেফ হিসেবে কাজ করতেন সাইফুল। প্রকাশিত ছবির সঙ্গে তার চেহারার মিল রয়েছে।’ মেয়ের জন্য ঈদের জামাকাপড় কিনে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল রেস্তোরাঁর শেফ সাইফুল ইসলামের। স্ত্রী সোনিয়ার সঙ্গে কথা হয় শুক্রবার বিকালে। তখন সাইফুল বলেছিলেন, রবিবার সকালে ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়ি ফিরে শরীয়তপুরের নড়িয়া বাজার থেকে মেয়েদের সঙ্গে নিয়ে ঈদের নতুন জামা কিনবেন। বাবার পথপানে চেয়ে অপেক্ষায় ছিল তার অবুঝ দুই মেয়ে। কিন্তু সাইফুলের আর ফেরা হয়নি। নৃশংস জঙ্গি হামলায় প্রাণ দিতে হয় তাকেও। জঙ্গি হামলায় নিহত বাবুর্চি সাইফুল ইসলাম চৌকিদারের গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার কোলকাঠি গ্রামে। সেখানে চলছে শোকের মাতম। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছে পুরো পরিবার। শোকে স্তব্ধ পুরো কলুকাঠি গ্রাম। এক বছর আগে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার কলুকাঠি গ্রামের মরহুম হাসেম চৌকিদারের একমাত্র ছেলে সাইফুল ইসলাম চাকরি নেন হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয়। সাইফুল এর আগে জার্মান প্রবাসী ছিলেন। সেখানেও তিনি রেস্তোরাঁয় পিত্জা তৈরির কাজ করতেন। সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা সোনিয়া কান্নাজড়িত কণ্ঠে সাংবাদিকদের বলেন, গত শুক্রবার বিকালে তার সঙ্গে স্বামীর শেষ কথা হয়। এরপর থেকে ফোন বন্ধ পাচ্ছিলেন তারা। শনিবার  টেলিভিশন দেখে তিনি জানতে পারেন, তার স্বামী জঙ্গি হামলায় নিহত হয়েছেন। তার রেস্তোয়াঁয় অনেক মানুষকে মেরে ফেলেছে। সেই সঙ্গে তার স্বামীকেও মেরে ফেলা হয়েছে। তিনি কান্নাকাটি করে বলেন, ‘আমি এখন আমার সন্তানদের নিয়ে কীভাবে চলব। আমার গর্ভের সন্তান কেন তার বাবার মুখটাও দেখতে পারবে না। এ কেমন নিয়তি?’  সাইফুলের মা সত্তরোর্ধ্ব সমেরা বেগমও কাঁদছিলেন আর বলছিলেন, ঈদের ছুটিতে ছেলে বাড়ি আসার কথা বলে গিয়েছিল। সাইফুলের বড় মেয়ে সামিয়া (৯) জানায়, আমার বাবা তো আমার জন্য ও আমার ছোট বোন ইলমির জন্য ঈদের জামা নিয়ে আসবে। আমার বাবাকে কারা যেন কুপিয়ে মেরে ফেলছে। ওরা কেন মারল? কে আমার ঈদের জামা দেবে? বল চাচ্চু আমি কাকে বাবা বলে ডাকব? আমি কেন এতিম হলাম। এরপর ছোট শিশুটির চোখ দিয়ে শুধুই অশ্রু ঝরতে লাগল। ছোট মেয়ে ইলমি (৭) শুধুই চারদিক তাকিয়ে থাকে। মুখে তার কোনো ভাষা নেই। স্বজনরা আহাজারি ও কান্নাকাটি করতে লাগলেন মেয়েদের জড়িয়ে ধরে। সাইফুলকে হারিয়ে বার বার জ্ঞান হারাচ্ছেন মা সমেরা বেগমও। নড়িয়া থানার ওসি একরাম আলী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ‘আমরা শুনেছি সাইফুল জঙ্গি হামলায় মারা গেছেন। কিন্তু আমাদের এ ব্যাপারে কোনো কিছু জানানো হয়নি।

সর্বশেষ খবর