মঙ্গলবার, ৫ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা
গুলশানে জঙ্গি হামলা

চলাফেরা সীমিত বিদেশিদের

কেনাকাটা থেকেও বিরত থাকার নির্দেশ যৌথ গোয়েন্দা তত্পরতায় জাপান ও ইতালি

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলার সেদিনের ঘটনা নিজ দেশের পররাষ্ট্র দফতরকে জানাতে গিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার একটি দেশের কূটনীতিক উল্লেখ করেছেন, ‘বিদেশি নাগরিকদের আর্টিজান বেকারিতে উপস্থিত থাকা মোটেও অস্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়। তাদের কাছে এটি নিজের বাসায় থাকার মতোই একটি ঘটনা। ঢাকায় এমন পারিবারিক পরিবেশের জায়গা খুব নেই। হাতে গোনা কয়েকটি স্থানের একটি এটি। নয়াদিল্লির খান মার্কেটের জায়গাগুলোর মতোই এটা। আমরা যে কেউ সেখানে থাকতে পারতাম। কারণ, হরহামেশাই আমরা সেখানে যাই। অগণিত অনানুষ্ঠানিক বৈঠক আমি এবং আমার সহকর্মীরা এই রেস্টুরেন্টে কফি খেতে খেতে করেছি। এর চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে কূটনৈতিক মিশন ও রাষ্ট্রদূতদের বাসভবন। শুধু তাই নয়, গুলশান-বারিধারা নিয়ে ঢাকার কূটনৈতিক পল্লীর মধ্যে উত্তর গুলশানের এই স্থানটিই নিরাপদতম।’

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, ঢাকার থাকা সব মিশনের কূটনীতিক ও অন্যান্য পেশার নাগরিকদের কাছেও যখন-তখন যাতায়াতের স্থান ছিল হলি আর্টিজান। নানান পুলিশি নিরাপত্তার বেড়ার আড়ালে অত্যন্ত সুরক্ষিত এই স্থানে আক্রমণে তাই বিদেশিরা হয়ে যায় হতবাক ও বিস্মিত। কিন্তু ১৭ বিদেশির লাশ বেরিয়ে আসার পর তারা আতঙ্কিত। এমন পরিস্থিতিতে রবিবার ও সোমবার পরপর দুই দিন নিজেদের মধ্যে ইউরোপের রাষ্ট্রদূতদের বৈঠকে উঠে এসেছে নিরাপত্তা সংশয়ের কথা। এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের ইইউ রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদুন বলেছেন, ‘গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর গুলশানে তাভেলা সিজার হত্যার পর আমরা (কূটনীতিকরা) সরকারকে কূটনৈতিক এলাকার নিরাপত্তা বৃদ্ধি করতে বলেছিলাম। সরকার নিরাপত্তা বৃদ্ধি করেও ছিল। কিন্তু হলি আর্টিজান বেকারি অ্যান্ড ও’কিচেন রেস্টুরেন্টের বিয়োগান্তক ঘটনার পর এটা স্পষ্ট হলো যে, নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলে কিছু নেই। নিরাপত্তা ব্যবস্থা আবার পর্যালোচনা করতে হবে। বিদেশি নাগরিকদের যারা বাংলাদেশে বাস করছেন তাদের নিরাপত্তা নিয়ে আমরা খুবই সিরিয়াস। তাই ঢেলে সাজাতে হবে পুরো ব্যবস্থা। ইতিমধ্যেই সরকারকে জানানো হয়েছে। চলতি সপ্তাহেই আমরা কূটনৈতিক পুলিশের প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করব।’ জানা যায়, আর্টিজান বেকারি হামলার পরের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান তাদের নাগরিকদের কর্মস্থল ও আবাসস্থলে থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন। জরুরি কেনাকাটা থেকেও আপাতত বিরত থাকার নির্দেশনা দিয়ে দেশগুলোর পক্ষ থেকে নাগরিকদের বলা হয়েছে, মিশনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। বর্তমান নিরাপত্তা ব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়ে ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ সরকারের কাছে সংশয়ের কথা বলেছেন বিদেশি মিশনগুলোর প্রতিনিধিরা। পরিস্থিতি নিয়ে তাই সরকারের কাছে ব্রিফিং চেয়েছিল বিদেশি মিশনগুলো। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আজ রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সরকারের পক্ষ থেকে সব রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার, আবাসিক প্রতিনিধি ও মিশনপ্রধানদের ব্রিফিংয়ের জন্য ডাকা হয়েছে। আগামীকাল (বুধবার) কূটনৈতিক পুলিশের সঙ্গে হতে পারে বিশেষ বৈঠক। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে জাপান ও ইতালির নিরাপত্তা বিষয়ক প্রতিনিধি দল ইতিমধ্যেই ঢাকায় এসেছেন। চলতি সপ্তাহেই আসছেন ইইউ, যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার নিরাপত্তা দল। জাপান টাইমসের খবরে বলা হয়, ঘটনার পর পরই বাংলাদেশে কাজ করে এমন কয়েকটি কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তারা জাপানের বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলেন। এরপর ঢাকার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে জাপানের টোকিওতে জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের বিশেষ বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে পুরো পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়। সেই বৈঠক থেকে বাংলাদেশে অবস্থানরত জাপানি নাগরিকদের জন্য একটি বিশেষ বার্তা পাঠানোর সুপারিশ করা হয়। ঢাকাসহ সারা দেশে কর্মরত জাপানি নাগরিকদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তার শর্ত মেনে চলতে বলা হয়েছে। নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত কর্মস্থল ও আবাসস্থলে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এমনকি জরুরি কেনাকাটা থেকেও বিরত থাকতে বলা হয়েছে। বিশেষ প্রয়োজনে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সহায়তা নিতে বলা হয়।

যৌথ গোয়েন্দা তত্পরতা : বাংলাদেশে সমন্বিত কূটনৈতিক ও গোয়েন্দা তত্পরতা পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইতালি ও জাপান। ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাওলো জেনতিলিনি ও জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফুমো কিসিদার টেলিফোন আলাপ করে এ সিদ্ধান্ত নেন। গতকাল ইতালির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, ৪ জুলাই সকালেই ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ফোন করেন। টেলিফোনে তারা গত ১ জুলাই ঢাকায় হলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার প্রসঙ্গ নিয়ে আলাপ করেন। ওই হামলায় ইতালির ৯ এবং জাপানের ৭ নাগরিক নিহত হওয়ার ঘটনায় তারা উদ্বেগে প্রকাশ করেন। আলাপে তারা সিদ্ধান্ত নেন, ঢাকায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ইতালি ও জাপান বাংলাদেশে সমন্বিত কূটনৈতিক ও গোয়েন্দা তত্পরতা চালাবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর