সোমবার, ১১ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

স্বর্ণজাদী মন্দিরে ঢুকতে দেওয়া হয় না পর্যটকদের

মানিক মুনতাসির, পার্বত্যাঞ্চল থেকে ফিরে

স্বর্ণজাদী মন্দিরে ঢুকতে দেওয়া হয় না পর্যটকদের

২৩ জুন, ২০১৬। সময় বেলা ২টা। স্থান বান্দরবান জেলার সদর উপজেলার পুরপাড়াস্থ স্বর্ণজাদী মন্দির এলাকা। ৮ থেকে ১০ জনের একটি বিদেশি পর্যটক দল এলেন মন্দিরের সামনে। এদের একজন সুশান থাপা। এসেছেন শ্রীলঙ্কা থেকে। তিনি বললেন, মন্দিরটি দেখার জন্য তিনি সপরিবারে এসেছেন। কিন্তু তাদের কেউই ভেতরে যেতে পারলেন না। এমনকি মন্দিরের আশপাশেও না। ব্যারিকেডের এ পাড়ে থাকা সাধারণ পোশাক পরিহিত এক সন্ন্যাসী তাদের ফিরিয়ে দিলেন। সুউচ্চ পাহাড়ের চূড়ায় মন্দির অবস্থিত। সেখান থেকে প্রায় ২০০ মিটার দূরে বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেড সৃষ্টি করা হয়েছে। নোটিস টানিয়ে দেওয়া হয়েছে ‘সকল দর্শনার্থীদের জন্য ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্বর্ণজাদী বন্ধ রাখা হয়েছে’। এরপর ১০ মিনিট পর আরও দুটি মাইক্রোবাস এসে দাঁড়ালো মন্দির এলাকায়। দুটি গাড়ি থেকে এক এক করে ১০ জন পর্যটক বেরিয়ে এলেন। এদের সবাই বাংলাদেশি। তারা প্রথম ঢুকতে চাইলে ওই সন্ন্যাসী বাধা দিলেন। পরে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি হলো।

ওই সন্ন্যাসী তাত্ক্ষণিক মোবাইল ফোনে কোনো একজনের সঙ্গে কথা বললেন। এবার মন্দির থেকে এক দল শিশু বেরিয়ে এলো। সঙ্গে একটি পোষা কুকুর। এর কিছুক্ষণ পর এলেন আরেকজন সন্ন্যাসী। তিনি পর্যটকদের কোনো কথা না শুনেই তাদের চলে যেতে বললেন। এক পর্যায়ে উভয়পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হলে শিশুরা তাদের স্থানীয় ভাষায় পর্যটকদের গালাগাল করল। সেই সঙ্গে কুকুরটি তেড়ে আসতে লাগল। অগত্যা পর্যটকরা গাড়িতে উঠে ফিরে গেল। এভাবেই প্রতিদিন শত শত পর্যটককে ফিরে যেতে হচ্ছে স্বর্ণজাদী না দেখেই। জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, দর্শনার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা প্রবেশ ফি হিসেবে দৈনিক কমপক্ষে ২০ হাজার টাকা পেত সরকার। যা সরকারের কোষাগারে জমা হতো। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় এ আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। শুধু তাই নয়, মন্দিরের আশপাশের অন্তত শ’খানেক বিভিন্ন রকম দোকান বন্ধ হয়ে গেছে মন্দিরের সঙ্গে। এ স্থাপনাকে ঘিরে ছোট ছোট যেসব ব্যবসায়ী ছিলেন তারা সবাই বেকার হয়ে গেছে। এদের মধ্যে সুনীতি বড়ুয়া নামের এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বলেন, তিনি এখন বেকার। মাঝে মাঝে দিনমজুরি দিয়ে পরিবার চালানোর চেষ্টা করছেন। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মন্দিরের ভেতরে কি হয় সেটা এখন রীতিমতো রহস্য। কেননা এখানে সরকারি কোনো কর্মকর্তাও ঢুকতে পারেন না। গত মে মাসে বান্দরবান জেলার প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক মন্দির দর্শনে এসেছিলেন। তাকেও ফিরিয়ে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে পুলিশ ফোর্সের সহায়তায় তিনি ভেতরে প্রবেশ করেন। এলাকাবাসীর কৌতূহল এই স্থাপনার ভেতরে কি হয়। কেন সাধারণ মানুষকে ঢুকতে দেওয়া হয় না। তাদের মতে দেশের আর কোনো মন্দির, বৌদ্ধ বিহার, মঠ বা যে কোনো ধরনের ধর্মীয় উপাসনালয়ে সাধারণের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা নেই। তাহলে স্বর্ণজাদী কেন বন্ধ থাকবে। স্থানীয়রা বলছেন, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ছাড়া অন্য কাউকেই ঢুকতে দেওয়া হয় না স্বর্ণজাদীতে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বান্দরবান জেলার অতিরিক্ত প্রশাসক (সার্বিক) মো. আবু জাফর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সেটা সন্ন্যাসীরাই (ভান্তে) দেখাশোনা করেন। তাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যার কথা বলে বন্ধ রাখা হয়েছে। কবে খোলা হতে পারে এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসন কিছু জানে না বলে জানান তিনি। জানা গেছে, অন্যতম দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয় স্থাপনা স্বর্ণজাদী মন্দির। এর ভেতরে বর্তমানে কি হচ্ছে কেউ জানে না। এমন কি সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনও জানে না সেখানে কি হয়। গত ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে মন্দিরে সর্ব সাধারণের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন মন্দিরের দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা ভান্তেরা (সন্ন্যাসী)। বান্দারবানের একটি অন্যতম দর্শনীয় স্থান হচ্ছে এটি। ৯০’র দশকে নয়নাভিরাম বান্দরবানে পাহাড়ের কোল ঘেঁষে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের তীর্থ স্থান হিসেবে গড়ে তোলা হয় এই স্বর্ণমন্দির। মিয়ানমার ও ভুটানের স্বর্ণমন্দিরের আদলে তৈরি হওয়ায় অল্প সময়ে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের নজর কাড়ে মন্দিরটি। এর পরই সবার জন্য এটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। কিন্তু কারণ ছাড়াই এটি দর্শনার্থীদের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর