সোমবার, ১১ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

এখনো সচল দেশের প্রথম বিদ্যুিবহীন প্রাকৃতিক হিমাগার

মো. রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর

এখনো সচল দেশের প্রথম বিদ্যুিবহীন প্রাকৃতিক হিমাগার

দেশে এক সময় বিদ্যুৎ নিয়ে হাহাকার ছিল। আলুসহ বিভিন্ন সবজি, ফল রক্ষণাবেক্ষণ হুমকির মুখে পড়ে। তখন কৃষকের উৎপাদিত পচনশীল ফসল সংরক্ষণে বিকল্প পদ্ধতির বিষয়ে চিন্তা করে বাংলাদেশে প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে স্থাপিত হয় বিদ্যুিবহীন প্রাকৃতিক হিমাগারটি। যা এখনো সচল রয়েছে। বদলে দিতে শুরু করেছে গ্রামীণ জনপদে সাধারণ কৃষকদের ভাগ্যের চাকা। প্রাকৃতিক হিমাগারটি জাতীয় অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। তবে সরকারিভাবে আর্থিক সহযোগিতা পেলে ২০ থেকে ২০০ টন ক্ষমতাসম্পন্ন প্রাকৃতিক হিমাগার নির্মাণ করা সম্ভব। প্রতি মার্চ মাস থেকে কৃষকরা এখানে ৬ মাস পর্যন্ত আলুসহ বিভিন্ন কাঁচামাল সংরক্ষণ করতে পারবেন। হিমাগারে পরীক্ষামূলক ২৮ দিন পর্যন্ত ফুলকপি ও ৭৫ দিন পর্যন্ত পাতা কপি সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সফলতা পাওয়া গেছে। দিনাজপুরের বীরগঞ্জের কৃষিবিদ মো. তৌহিদুল ইসলাম বকুল প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে স্থাপন করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছে। এটির নির্মাণ শুরু হয় ২০১১ সালের অক্টোবর মাসে এবং আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হয় ২০১২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি।

জানা যায়, কাহারোল উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়নের কমলপুর গ্রামের মৃত আলহাজ ডা. শমসের আলী শাহের পুত্র মীম সীড-এর স্বত্বাধিকারী কৃষিবিদ মো. তৌহিদুল ইসলাম বকুল বীরগঞ্জ পৌর শহরের দিনাজপুর-পঞ্চগড় মহাসড়কের জগদল মৌজায় ১১০ টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি বিদ্যুিবহীন প্রাকৃতিক হিমাগার নির্মাণ করেন। এর নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৫ লাখ ৬২ হাজার টাকা। বেসরকারি সংস্থা ক্যাটালিস্ট ও জিমার্ক-এর আর্থিক সহযোগিতায় এবং কমপিটিবল টেকনোলজি ইনস্টোলেশনের (সিটিআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে হিমাগারটি নির্মাণ করা হয়েছে। এ পদ্ধতি অনুসরণ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে এ ধরনের হিমাগার নির্মিত হয়েছে। তা এখনো সচল রয়েছে বলে জানান কৃষিবিদ মো. তৌহিদুল ইসলাম।

কৃষিবিদ মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, বেসরকারি সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে এবং জিমার্কের সহযোগিতায় খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলায় একটি, বান্দরবনের সদর উপজেলায় একটি ও আলীকদম উপজেলায় একটি, জাপানের অর্থায়নে এবং জিমার্ক এর সহযোগিতায় বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলায় সাতটি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থায়নে রাজশাহীতে একটি প্রাকৃতিক হিমাগার নির্মাণ করা হয়েছে। তিনি জানান, দীর্ঘদিন সচল রাখার ক্ষেত্রে প্রথম নির্মিত প্রাকৃতিক হিমাগারটির বর্তমানে পদ্ধতিগত কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। যেমন ভেতরে আলো-বাতাস সঞ্চালন বৃদ্ধি এবং হিমাগারে রক্ষিত আলুতে যেন গাছ না গজায় সে বিষয়ে কিছু পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে। তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে কিছু পদ্ধতিগত পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন নতুন পদ্ধতি ব্যবহার করে হিমাগারটিকে আধুনিকায়ন করা হয়েছে। যাতে আবহাওয়ার পরিবর্তনে বিভিন্ন কাঁচামাল অক্ষত অবস্থায় সংরক্ষণ করা যায়। হিমাগারটি ঠান্ডা রাখার জন্য তলদেশে পানি সংরক্ষণ করে রাখা হয়। এ পানির মধ্যে মাছ চাষ করা সম্ভব। পানি ১৫ দিন পর পর পরিবর্তন করা হয়। বিদ্যুত্চালিত হিমাগারের বিকল্প হিসেবে এ বিদ্যুিবহীন প্রাকৃতিক হিমাগারটি আমাদের গ্রামীণ অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে। প্রাকৃতিক হিমাগার নির্মাণের ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারিভাবে গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে হিমাগারগুলো সময়োপযোগী হিসেবে গড়ে তুলতে পারলে একদিকে কৃষকেরা লাভবান হবেন। পাশাপাশি দেশের কৃষি ক্ষেত্রে বিপ্লব সাধিত হবে বলে তিনি মনে করেন। স্থানীয় কৃষক পুরেন চন্দ্র রায় জানান, ইতিপূর্বে হিমাগারে আলু সংরক্ষণের জন্য কেজি প্রতি ৫/৬ টাকা খরচ হয়। কোনো কারণে আলু পচে গেলে অনেক ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ পাওয়ায় যেত না। অথচ প্রাকৃতিক হিমাগারে আলু সংরক্ষণের জন্য ব্যয় হয় কেজি প্রতি মাত্র ১ টাকা। এখানে আলুসহ সব ধরনের সবজি পচে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে না। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের প্রশিক্ষণ অফিসার নিখিল চন্দ্র বিশ্বাস জানান, বীরগঞ্জ উপজেলায় এই প্রাকৃতিক হিমাগারটি স্থাপন করা হয়। যদিও এটি পরীক্ষামূলকভাবে স্থাপন করা হয়েছে। তবে এর সফলতা আশার আলো জাগিয়ে তুলেছে। হিমাগারটির আরও কিছু পরিবর্তন এবং আধুনিকায়ন করা হলে এটি শুধু দেশে নয়, বিশ্বে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।

সর্বশেষ খবর