মঙ্গলবার, ১২ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

লিফট নিয়ে নতুন আতঙ্ক

ধোলাইখালে তৈরি হচ্ছে ক্লোন, বিদেশ থেকেও আসছে নিম্নমানের, বাড়ছে দুর্ঘটনা

সাঈদুর রহমান রিমন

লিফট নিয়ে নতুন আতঙ্ক

দেশে লিফট দুর্ঘটনা এখন নতুন আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ধোলাইখালে ক্লোন লিফট তৈরি হচ্ছে, আবার আমদানিও হচ্ছে নিম্নমানের লিফট। অপেক্ষাকৃত নিম্নমানের যন্ত্রাংশ সংযোজন করার মাধ্যমে কম দামে লিফট তৈরির অর্ডার দেওয়া হচ্ছে বিদেশে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আমদানিকারকরা চীন থেকে লিফট সংগ্রহ করলেও তাতে মেড ইন কোরিয়া, জার্মানি কিংবা ফ্রান্স লেখা স্টিকার লাগিয়েই দেশে আনা হচ্ছে। মেয়াদ থেকে শুরু করে যেসব স্পেসিফিকেশন দেওয়া হয় তার সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল থাকছে না। ধোলাইখালে তৈরি হচ্ছে ক্লোন লিফট। বিদেশ থেকেও নিম্নমানের লিফট আমদানি করে দেশে এনে বিখ্যাত কোম্পানির সিল মারা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে আমদানিকারকরা খুচরা যন্ত্রাংশ এনে চট্টগ্রাম, ঢাকার ধোলাইখাল ও মিরপুরে নিজস্ব মেরামত কারখানায় অদক্ষ কারিগরদের দিয়ে লিফট ফিটিংস করাচ্ছেন।

সরকারি-বেসরকারি ভবনে ব্যবহৃত এসব লিফটই হয়ে উঠছে মৃত্যুফাঁদ। নিম্নমানের লিফট সরবরাহ দেওয়া, ফিটিংয়ে দুর্বলতা, নিয়মিত মনিটরিং না থাকাসহ নানা কারণেই ‘লিফট দুর্ঘটনা’ নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রবিবার রাতে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন হাসপাতালের লিফট ছিঁড়ে আহত হন সাতজন। ঈদের আগে উত্তরার আলাউদ্দিন সুপার মার্কেটের লিফট ছিঁড়ে প্রাণ হারিয়েছেন আটজন। আগের দিনই বেসরকারি একটি টেলিভিশন ভবনে দুজন মন্ত্রী এবং এক সাংবাদিক আহত হয়েছেন লিফট দুর্ঘটনায়। লিফট কেটে তাদের মুক্ত করার ঘটনা ঘটে। বিভিন্ন হাসপাতালে গুরুতর রোগী-স্বজনসহ লিফট ছিঁড়ে হতাহতের একাধিক নজির রয়েছে। একের পর এক লিফট দুর্ঘটনা জনমনে রীতিমতো আতঙ্ক ছড়িয়ে দিচ্ছে। লিফট অপারেটররা বলছেন, লিফট আমদানিকারকদের অতিমাত্রায় মুনাফার প্রবণতা আর সংশ্লিষ্টদের পর্যবেক্ষণহীনতাই লিফট দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। জানা যায়, দেশে কোনো প্রতিষ্ঠান লিফট নির্মাণ করে না। তাই বহুতল ভবনে লিফটের চাহিদা মেটানো হয় আমদানির মাধ্যমে। আর এ সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ লিফট ক্লোন করছেন। প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী যে প্রতিষ্ঠান কোনো ভবনে লিফট ফিটিংস করে দেয় তারাই রুটিনমাফিক লিফট পর্যবেক্ষণ ও প্রয়োজনীয় সংস্কার করে। কিন্তু এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের চরম দায়িত্বহীনতার কারণে বছরের পর বছর লিফটগুলোর কোনো খোঁজখবর নেওয়া হয় না। যে কোনো দুর্ঘটনা বা হতাহতের পরই কেবল লিফট পর্যবেক্ষণ করার কথা স্মরণ হয় প্রতিষ্ঠানগুলোর। ব্যবসায়ীরা স্বীকার করছেন, লিফট ফিটিংস ও পরিচালনার বিষয়ে সরকারি কোনো তদারকি নেই। লিফট ব্যবহারযোগ্য কিনা সেই মর্মে কোনো ছাড়পত্র দেওয়ারও কেউ নেই। তবে রাজউকের নিয়ম অনুযায়ী ভবনের উচ্চতা ছয় তলার বেশি হলে লিফট স্থাপনে বাধ্যবাধকতা রয়েছে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বলছে, বিল্ডিং কোড থাকলেও লিফট তদারকিতে আলাদা বিভাগ না থাকায় ভবন মালিক আর লিফট কোম্পানির সততা ও সতর্কতার ওপর এ বিষয়টি নির্ভর করতে হয়।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর