মঙ্গলবার, ১২ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা
হোশি কোনিও হত্যা মামলা

পুলিশই আসামি বানিয়ে এখন বলছে নির্দোষ

শাহজাদা মিয়া আজাদ, রংপুর

পুলিশই আসামি বানিয়ে এখন বলছে নির্দোষ

জাপানি নাগরিক হোশি কোনিও হত্যা মামলায় কাউকে আসামি করেনি পুলিশ। তবে পাঁচজনকে গ্রেফতারের পর ওই মামলায় আসামি দেখিয়ে পুলিশ দফায় দফায় রিমান্ডে নিয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়ার দাবি করে গণমাধ্যম কর্মীদের তা আনুষ্ঠানিকভাবে জানায় পুলিশ। কিন্তু আদালতে দাখিল করা মামলার অভিযোগপত্রে ওই পাঁচজনের নাম নেই। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বলছেন, এ হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততা না থাকায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়নি। ওই পাঁচজনের মধ্যে দুজন সাড়ে আট মাস আর তিনজন সাড়ে সাত মাস ধরে কারাগারে আছেন। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, এদের সামাজিক মর্যাদা ও সুনাম ক্ষুণ্ন করার দায় কে নেবে।

গত বছর ৩ অক্টোবর রংপুর নগরীর মুন্সীপাড়ার ভাড়া বাসা থেকে রিকশায় করে কাউনিয়া উপজেলার সারাই ইউনিয়নের আলুটারি গ্রামে নিজের  জাপানি কোয়েল ঘাসের খামারে যাওয়ার পথে ৬৬ বছরের কোনিওকে গুলি করে হত্যার পর পালিয়ে যায় তিনজন মুখোশধারী মোটরসাইকেল আরোহী। এ ঘটনায় কাউনিয়া থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ বি এম জাহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় তিনজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। ঘটনার পরপর আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএস দায় স্বীকার করে। অবশ্য আইএসের এ দাবি প্রত্যাখ্যান করে পুলিশ। ওই দিনই কোনিওর ব্যবসায়িক সহযোগী হুমায়ুন কবীর হীরা ও রংপুর মহানগর বিএনপির সদস্য রাশেদ-উন-নবী খান বিপ্লবকে গ্রেফতার করে ওই মামলায় আসামি দেখানো হয়। বিপ্লব ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব হাবীব-উন-নবী খান সোহেলের সহোদর। বিপ্লবকে ১০ দিন ও হীরাকে তিন দফায় ২৫ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। হীরাকে আদালতে হাজির করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও নেওয়া হয়। জবানবন্দিতে তিনি কী বলেছেন তা এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। তবে পুলিশের রংপুর রেঞ্জের তৎকালীন ডিআইজি হুমায়ুন কবীর তার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিলেন, কোনিও রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের শিকার। বিপ্লব ও হীরার কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়ার দাবি করেন তিনি। এদিকে নিখোঁজের এক মাস পর একই বছরের ১২ নভেম্বর মধ্য রাতে রংপুর মহানগর যুবদলের সদস্য রাজীব হাসান সুমন ওরফে মেরিল সুমন, নওশাদ হোসেন রুবেল ওরফে ব্ল্যাক রুবেল এবং নগরীর শালবন মিস্ত্রিপাড়ার কাজল চন্দ্র বর্মণ ওরফে ভরসা কাজলকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর থেকে আটক করে র‌্যাব। ১৪ নভেম্বর এ তিনজনকেও কোনিও হত্যা মামলায় আসামি দেখিয়ে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। কিন্তু কোনিও হত্যা মামলার তদন্তে নতুন মোড় নেয় ওই বছরের ৭ ডিসেম্বর জেএমবির রংপুর অঞ্চলের কমান্ডার মাসুদ রানাকে (৪০) গ্রেফতারের পর। মাসুদ রানা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে কোনিও হত্যার কথা স্বীকার করেন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। এরপর জেএমবির সদস্য ইছাহাক আলী (৩৪), লিটন মিয়া (৩২) ও আবু সাঈদকে (২৮) গ্রেফতার করে পুলিশ। ৩ জুলাই কোনিও হত্যা মামলায় জেএমবির আট সদস্যের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ, যেখানে আগে গ্রেফতার পাঁচজনের নাম নেই। অভিযোপত্রভুক্ত জেএমবির অপর চার সদস্য সাদ্দাম হোসেন (৩২), আহসান উল্লাহ আনসারী (৩১), নজরুল ইসলাম (৩২) ও সাখাওয়াত হোসেনকে (৩০) পুলিশ এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি। জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাউনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল কাদের জিলানী বলেন, জেএমবির আট সদস্য ছাড়া গ্রেফতার অপর পাঁচজন এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় বলেই তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়নি। তাহলে তাদের মামলায় আসামি করে দীর্ঘদিন কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে কেন, এমন প্রশ্ন তিনি এড়িয়ে যান। তবে মামলা থেকে তাদের অব্যাহতির আবেদন করা হয়েছে বলে জানান তিনি। জানতে চাইলে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম রংপুর শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফতাব উদ্দিন বলেন, কোনো ঘটনা ঘটলে প্রাথমিক তদন্তে সম্পৃক্ততা নিশ্চিত হওয়ার পর পুলিশ গ্রেফতার করতে পারে। কিন্তু কোনিও হত্যায় ভুলভাবে পাঁচজনকে গ্রেফতার কারায় তারা সামাজিক, রাজনৈতিক, আর্থিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এখন তারা চাইলে ক্ষতিপূরণ আদায়ের মামলা করতে পারেন।

সর্বশেষ খবর