মঙ্গলবার, ১২ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

মুখরিত সোনারগাঁ

মো. আল আমিন, সোনারগাঁ

মুখরিত সোনারগাঁ

ঈদের দীর্ঘ ছুটি শেষ হলেও নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত। এবার রেকর্ড সংখ্যক বিনোদন পিপাসু ছুটে এসেছেন (সুবর্ণগ্রাম) সোনারগাঁয়ে। গতকালও মানুষের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। নবনির্মিত বাংলার তাজমহল, বাংলাদেশ লোকও কারুশিল্প জাদুঘরসহ বিভিন্ন স্থানে পর্যটকদের ব্যাপক উপস্থিতি সোনারগাঁয়ে পর্যটন শিল্পের বিশেষ সম্ভাবনার কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে, এশিয়ান হাইওয়ে সড়ক সংলগ্ন এবং মেঘনা, ব্রহ্মপুত্র ও মারীখালী-এ তিন নদীবেষ্টিত সোনারগাঁয়ে যে কোনো বাহনে পর্যটকরা নির্বিঘ্নে চলে আসে। প্রাচীন বাংলার ঈশা খাঁর রাজধানী সোনারগাঁয়ের অতীত ঐতিহ্য, আভিজাত্যকে সংরক্ষণ করার লক্ষ্যে ১৭ বিঘা জমির ওপর নির্মাণ করা হয় বাংলার তাজমহল। উপজেলার পেরাবে বাংলার তাজমহল বাংলাদেশকে বিশ্ব মানচিত্রে তারকা চিহ্নিত করেছে। আগত দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ভিড় লেগেই আছে দিনভর। ভোর থেকে রাত্রি পর্যন্ত হাজার হাজার পর্যটকের আগমনে তাজমহল, জাদুঘরসহ বিনোদন কেন্দ্রগুলো জমজমাট থাকে। ইতিমধ্যেই সোনারগাঁকে পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করতে এলাকাবাসীর উদ্যোগে তাজমহলের পাশে ২০ বিঘা জমির ওপর নির্মিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি ভাস্কর্য, আইফেল টাওয়ার, ঈশা খাঁ ফিল্ম সিটির দ্বিতীয় প্রজেক্ট, মিসরের পিরামিড, পাঁচটি শুটিং ফ্লোর, দুটি ডিজিটাল সিনেমা হল, বিভিন্ন প্রজাতির মাছের অ্যাকুরিয়াম, একটি ফাইভ স্টার মানের আবাসিক হোটেল এবং সুপার মার্কেটসহ নানা আয়োজন। এ ছাড়া বাংলাদেশ লোকজ কারুশিল্প জাদুঘর, পর্যটন স্পট পানামও আনন্দ মুখর ছিল ঈদ আনন্দে। শিল্পচার্য জয়নুল আবেদিন এদেশের প্রাচীন শিল্প সংস্কৃতিকে ধরে রাখার জন্য এখানে প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ লোকজ কারুশিল্প ফাউন্ডেশন (সোনারগাঁ জাদুঘর)। এ জাদুঘরে দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে মোট ১১টি গ্যালারি। দুর্লভ সব ঐতিহ্যের নিদর্শন সংরক্ষিত রয়েছে প্রতিটি গ্যালারিতে। চারু শিল্পীদের সুনিপুণ হাতের ছোঁয়ায় তৈরি বিভিন্ন সংরক্ষিত জিনিসপত্রের মধ্যে কাঠে খোঁদাই নকশী গ্যালারি, মুখোশ গ্যালারি, আদিবাসী গ্যালারি, নৌকার মডেল গ্যালারি, সংস্কৃতি চর্চার লোকজ বাদ্যযন্ত্র ও পোড়া মাটির তৈরি নিদর্শন গ্যালারি, আদিবাসী পাহাড়ি উপজাতি ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের আদিবাসী গ্যালারি, তামা কাঁসা, পিতলের তৈজস পত্রের গ্যালারি, লোকজ অলঙ্কার গ্যালারি, বাঁশ, বেত শীতল পাটি গ্যালারি ও বিভিন্ন মৃগনীয় গোষ্ঠীর বিশেষ প্রদর্শনী গ্যালারি প্রদর্শনের পাশাপাশি প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের বস্ত্র তৈরির প্রক্রিয়া প্রদর্শন করা হয়েছে। সম্প্রতি প্রশাসনিক ভবনের সামনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি ভাস্কর্য, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের স্মৃতি ভাস্কর্য ও শেখ রাসেল ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের গ্রামীণ জীবন ধারার আলোকে কারুপল্লী গ্রামে নির্মাণ করা হয় ৩৫টি ঘর। প্রতিটি ঘরে স্থান পায় অঞ্চল ভিত্তিক মৃৎ শিল্প, কাঠে খোঁদাই করা আসবাবপত্র, হস্ত নির্মিত কাগজ, শাখা ঝিনুক, জামদানি শাড়ি, তাঁতবস্ত্র, রেশম বস্ত্র, পাটজাত শিল্প, বাঁশ-বেতের এবং তামা-কাঁসা লোহার তৈরি শিল্পে আরও ফুটে উঠেছে বাংলার বৈচিত্র্যময় রূপ। এখানে রয়েছে পানাম নগরীতে মোগল আমলের নির্মিত স্থাপনা ও পুরাকীর্তির নিদর্শন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর