শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১২ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

নালিতাবাড়ীতে বকের অভয়াশ্রম

নালিতাবাড়ী প্রতিনিধি

নালিতাবাড়ীতে বকের অভয়াশ্রম

প্রতিদিন বিকাল হলেই ঝাঁকে ঝাঁকে সাদা সাদা বক ও পানকৌড়ি ছুটে আসে গ্রামটিতে। বিকালে ওই গ্রামে নীল আকাশ যেন সাদা হয়ে যায়। সাদা বকের এ দৃশ্য এক নজর দেখার জন্য বিভিন্ন এলাকার লোকজন ছুটে আসে। সারা দিন খাবারের খোঁজে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ছুটে আসে আশ্রয়স্থলে। সন্ধ্যার আগেই মুখরিত হয়ে উঠে এলাকা। অন্ধকার নেমে এলে থেমে যায় কোলাহল। আবার ভোর হলেই গ্রামের মানুষের ঘুম ভাঙে বকের ডাকে। রোদ ওঠার আগেই দল বেঁধে বেরিয়ে পড়ে খাদ্যের সন্ধানে। বকের ডিম, ছানা, পরিত্যক্ত মাছ খাওয়ার লোভে পার্শ্ববর্তী পুকুর জঙ্গল থেকে বাঁশ ঝাড়ের নিচে জড়ো হয় সাপ, গুইসাপ ও বেজি। আর এ দৃশ্য দেখতে দূর থেকে ছুটে আসছে মানুষ। প্রতিবছর এপ্রিল থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ছয় মাস এ গ্রামে পাখিরা থাকে। উপজেলা সদর থেকে পাঁচ মাইল দূরে ব্রজেন্দ্র মাস্টারবাড়ি। বাড়িটির চারপাশে বাঁশের ঝোঁপঝাড়সহ বড় বড় গাছপালা। ঝড়ে একটি গাছ উপড়ে ঘরের ওপর পড়ে আছে। মাস্টার বাবুর নিষেধ থাকায় গাছের একটি ডালও কাটার সাহস পায়নি কেউ। বকের কোনো প্রকার অসুবিধা যেন না হয়। তার জন্যে এ নিষেধাজ্ঞা। প্রায় ৩০ বছর ধরে নিজের সন্তানের মতো বকগুলোকে আগলে রেখেছেন শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার বাঘবেড় ইউনিয়নের দিকপাড়া গ্রামের ব্রজেন্দ্র চন্দ্র বর্মণ (৮০)। ব্রজেন্দ্র মাস্টার বলেন, প্রতিদিন বিকাল হলেই ঝাঁকে ঝাঁকে বকের এ দৃশ্য দেখার জন্য বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে আসে মানুষ। রাতদিন নজর রাখি, কেউ যেন এদের ওপর উত্পাত না করে। বাঁশঝাড় ও গাছে বিভিন্ন জাতের বক ছাড়াও পানকৌড়ি ও অন্যান্য পাখি থাকে। অন্তত ৩০ বছর ধরে তারা এখানে আছে। তার ধারণা এদের সংখ্যা হাজারের নিচে হবে না। মাঝে মাঝে পাড়ার দুষ্ট ছেলেরা চুপিচুপি বকের ছানা পাড়তে আসে। আমরা তাদের বাধা দেই। বকগুলো আমাদেরও প্রিয় হয়ে গেছে। ঝড় বৃষ্টিতে অনেক সময় বকের ছানা মাটিতে পড়ে যায়। আমরা আবার সেগুলো বাসায় দিয়ে আসি। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. আশরাফুজ্জামান বলেন, পানকৌড়ি ও বকের প্রধান খাদ্য হচ্ছে ছোট ছোট মাছ। যে সব জায়গায় তাদের খাবার জোটে সাধারণত সে জায়গাতেই তারা যায়। গ্রামের লোকজন পাখিগুলোকে শিকার করে না বা ভয়ভীতি দেখায় না সে কারণেই হয়তো গ্রামটিকে অভয়াশ্রম হিসেবে বেছে নিয়েছে।

সর্বশেষ খবর