বুধবার, ১৩ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

জাতীয় ঐক্য গড়তে অনড় বিএনপি

শফিউল আলম দোলন

দেশব্যাপী মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা উগ্র ও জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় ‘জাতীয় ঐক্য’ গড়ার সিদ্ধান্তে অনড় বিএনপি। জঙ্গি-সন্ত্রাসকে জাতীয় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে দল-মত ও শ্রেণি-পেশা নির্বিশেষে সব রাজনৈতিক দলসহ সর্বস্তরের মানুষকে নিয়ে একটি ‘ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্ম’ গড়ে তুলতে চায় দলটি। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ইতিমধ্যে সব ভেদাভেদ ভুলে দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে সন্ত্রাসবিরোধী ঐক্য গড়ে তুলে শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত কোনো সাড়া না পাওয়ায় এ বিষয়ে দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতাকে দায়িত্ব দেওয়ার পর তারা পরোক্ষভাবে ‘বৃহত্তর একটি ঐক্য’ গড়ে তোলার প্রক্রিয়াও শুরু করে দিয়েছেন। 

এ প্রক্রিয়ার পাশাপাশি দল ও জোটের পক্ষ থেকে দৃশ্যমান কর্মসূচিও অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন দলের একাধিক নীতিনির্ধারক। গতকাল বিকালে কেন্দ্রীয়ভাবে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটসহ সারা দেশে জেলা ও মহানগরীতে ‘গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলা’র ঘটনায় শোক সভার মাধ্যমে এ কর্মসূচির শুরু করেছে বিএনপি। ভবিষ্যতে দল ও জোটের পক্ষ থেকে আরও কর্মসূচি ঘোষণা ও পালন করা হবে বলেও দলীয় সূত্রে জানা গেছে। শেষ পর্যন্ত সরকার আগ্রহ না দেখালেও ২০-দলীয় জোটের পক্ষ থেকেই সারা দেশের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রচেষ্টা চালানো হবে। একই সঙ্গে সরকার যে- জঙ্গিবাদ নিরসনে আন্তরিক নয়, সেটিও তখন জনসম্মুখে তুলে ধরার চেষ্টা করবে বিএনপি জোট। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এই উগ্র ও জঙ্গি সমস্যাকে ভয়াবহ এক জাতীয় সমস্যা আখ্যা দিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দল-মত নির্বিশেষে জাতীয় ঐক্য ছাড়া এ ধরনের ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি মোকাবিলা সম্ভব নয়। তাই আমাদের নেত্রী সরকারের প্রতি সবাইকে নিয়ে সেই ‘বৃহত্তর ঐক্য’ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। এখন বিষয়টি নির্ভর করছে সরকারের ওপর। সরকার যদি আলোচনায় বসার কোনো উদ্যোগ না নেয়, তাহলে তো- পুরো জাতির জন্যই বিষয়টি হবে দুঃখজনক। স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ সাম্প্রতিক উগ্র ও জঙ্গিবাদে সৃষ্ট অবস্থাকে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, জঙ্গি ও উগ্রবাদ রুখতে সরকারের কাছে আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ‘জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি’র উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। আসুন, তার এই আহ্বানে দল-মত নির্বিশেষে সব রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, শ্রেণি-পেশা ও সুধীসমাজের প্রতিনিধি সবাইকে নিয়ে একটি ‘ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্ম’ তৈরি করি। অন্যথায় এই পরিস্থিতির উত্তরণ সম্ভব নয়।

একই বিষয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশের বৃহত্তর স্বার্থে এখন প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য। অন্যথায় ভয়ানক এই সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা সম্ভব হবে না। তাই সরকারের উচিত কালবিলম্ব না করে সব রাজনৈতিক দলের নেতা, বুদ্ধিজীবী ও পেশাজীবী নেতাদের নিয়ে বসে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া। তিনি আরও বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন, বর্তমানে কে ক্ষমতায় আছে আর ভবিষ্যতে কে ক্ষমতায় যাবে তা এখন দেখার বিষয় নয়। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে জাতীয় দুর্যোগের মতো সৃষ্ট জঙ্গিবাদের এই ভয়াল থাবা থেকে দেশ ও মানুষকে বাঁচাতে আর সময় নষ্ট না করে দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে একসঙ্গে বসে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, সরকারের এতে আগ্রহ কম। অথচ দেশের স্বার্থে জাতীয় এই ঐক্য গঠনে সরকারেরই উচিত অগ্রণী ভূমিকা পালন করা। রাজধানীর গুলশানের কূটনৈতিক জোনে ভয়াবহ রক্তাক্ত জঙ্গি হামলায় হতাহতের ঘটনার একদিন পর এক সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন, ‘এই আতঙ্ক- এই হত্যালীলা থামাতেই হবে। বন্ধ করতে হবে এই রক্তপাত। আর এ জন্যই দল-মত নির্বিশেষে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, জঙ্গি ও সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা নিয়ে দোষারোপের রাজনীতি করা হলে প্রকৃত জঙ্গিদের দমন করা যাবে না। যখনই কোনো ঘটনা ঘটে- তখনই আওয়ামী লীগের লোকেরা তার জন্য বিএনপি-জামায়াতকে দায়ী করে বক্তৃতা করেন। বিরোধী দলকে দায়ী করে জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে ফেরানোর সরকারের এই অপচেষ্টা বন্ধেরও আহ্বান জানান তিনি। দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জঙ্গি হামলা ও সন্ত্রাসী তত্পরতা আজ জাতীয় সংকটে পরিণত হয়েছে। এই সংকট নিরসনে জাতীয় সংলাপের মাধ্যমে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা জরুরি হয়ে পড়েছে। সরকারের উচিত অবিলম্বে জাতীয় সংলাপ আহ্বানের মাধ্যমে ভয়াবহ জঙ্গি তত্পরতা থেকে দেশকে বাঁচানোর উদ্যোগ নেওয়া।

সর্বশেষ খবর