শিরোনাম
বুধবার, ১৩ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

চট্টগ্রামে টার্গেটে সরকারি স্থাপনা পুলিশ সংখ্যালঘু

মাঠে এবিটির ১৫ সদস্যের প্রশিক্ষিত টিম

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে বড় ধরনের নাশকতার হামলার পরিকল্পনা ছিল আনসারউল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি)। চট্টগ্রাম বিমানবন্দরসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, বিদেশি নাগরিক কর্মরত আছেন এমন শিল্পপ্রতিষ্ঠান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য এবং সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ‘মহাপরিকল্পনা’ নিয়ে মাঠে নামে এবিটির প্রশিক্ষিত ১৫ সদস্যের টিম। এ মাসের মধ্যেই চট্টগ্রামজুড়ে হামলার ছক তৈরি করেছিল তারা। তাদের নাশকতার পরিকল্পনা দেখে চক্ষু চড়কগাছ হয়ে যায় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের। সোমবার রাতে সীতাকুণ্ড থেকে এবিটির ওই মিশনের জন্য অবস্থান নেওয়া চার সদস্য গ্রেফতার হওয়ায় ভেস্তে যায় তাদের সেই মহাপরিকল্পনা। একই সঙ্গে বড় ধরনের হামলা থেকে রক্ষা পায় বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘চট্টগ্রামজুড়ে নাশকতার পরিকল্পনা নিয়ে এখানে আসে এবিটির একটি প্রশিক্ষিত দল। চট্টগ্রামের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এবং বিদেশিদের ওপর হামলার পরিকল্পনা ছিল তাদের। কিন্তু ওই দলের  চার সদস্যকে গ্রেফতার করে এবিটির বড় ধরনের হামলা নস্যাৎ করে দেয় পুলিশ। চট্টগ্রামে হামলার পরিকল্পনাকারী এবিটির বাকি সদস্যদেরও গ্রেফতারের জন্য অভিযান চালানো হচ্ছে।’ জানা যায়, বড় ধরনের নাশকতা করতে কিছুদিন আগে চট্টগ্রাম আসে এবিটির ১৫ সদস্যের একটি প্রশিক্ষিত দল। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন আবদুল্লাহ ওরফে রাজীব। তারা চট্টগ্রাম বিমানবন্দর, নৌবন্দর, সরকারি অফিস-আদালত, ইপিজেড, বিদেশিরা কর্মরত আছেন এমন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে হামলার পরিকল্পনা করে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা চালানোও তাদের পরিকল্পনা ছিল। তাদের মধ্যে একটি গ্রুপকে সীতাকুণ্ডে অবস্থিত চিটাগং কেমিক্যাল কমপ্লেক্সে হামলার দায়িত্ব দেওয়া হয়। ওই প্রতিষ্ঠানে ২৫ জন চীনের নাগরিক কর্মরত রয়েছে। তাই এখানে হামলার পরিকল্পনা করে এবিটি। এ হামলার দায়িত্ব দেওয়া হয় গ্রেফতার হওয়া মুসা ইবনে উমায়ের, খোরশেদুল আলম, ফয়সাল হোসেন শিপন ও রাসেল মোহাম্মদ ইসলামকে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, গ্রেফতার চারজনের কাছ থেকে উদ্ধার করা অস্ত্রগুলো বিভিন্ন জায়গায় জঙ্গিদের কাছে পাওয়া অস্ত্রগুলোর মতো। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানান, শিগগিরই চট্টগ্রামে হামলার পরিকল্পনা ছিল তাদের। যে চারজনকে সীতাকুণ্ড থেকে গ্রেফতার করা হয় তাদের বিদেশি কর্মরত আছেন এমন একটি প্রতিষ্ঠানে হামলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।’

এবিটিতে যোগ দিতে ধর্মান্তরিত! : হিন্দু ধর্মাবলম্বী পিকুল দাশ। চাকরি করেন সিইপিজেডে একটি বিদেশি পোশাক তৈরি কোম্পানিতে। দুই বছর আগে তিনি ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলামধর্ম গ্রহণ করেন। নতুন নাম ধারণ করেন মুসা ইবনে উমায়ের। একই সময় তিনি এবিটিতে যোগ দেন। এর পর থেকে এ সংগঠনটির চট্টগ্রাম অঞ্চলের বায়তুল মাল সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন তিনি। গ্রেফতার মুসার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ছনহরা গ্রামে। তার বাবার নাম অরুণ কান্তি দাশ। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এবিটিতে যোগ দিতেই মুসা ওরফে পিকুল ধর্মান্তরিত হয়েছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছি। ধর্মান্তরিত হওয়ার পর থেকে পরিবারবিচ্ছিন্ন হয়ে যান মুছা।’

এবিটির চার সদস্য রিমান্ডে : সীতাকুণ্ড থেকে গ্রেফতার এবিটির চার সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। তারা হলেন মুসা ইবনে উমায়ের, খোরশেদুল আলম, ফয়সাল হোসেন শিপন ও রাসেল মোহাম্মদ ইসলাম। মঙ্গলবার এ আদেশ দেন অতিরিক্ত মুখ্য হাকিম আ স ম শহীদুল্লাহ কায়সার। চট্টগ্রাম আদালতের পুলিশ পরিদর্শক মো. মশিউর রহমান জানান, এবিটির চার সদস্যকে সন্ত্রাস দমন আইনের মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে তাদের প্রত্যেকের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।

সর্বশেষ খবর