বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সন্ত্রাসী বা জঙ্গি তত্পরতায় অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০-এ। কিন্তু অংশগ্রহণ করলে তাদের বিরুদ্ধে কেমন আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এ নিয়ে কিছু উল্লেখ করা হয়নি। এতে জঙ্গিবাদে জড়িত কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বা এর শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করতে পারছে না বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। তবে জানা গেছে, সম্প্রতি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন সংশোধনের কাজ শুরু হয়েছে। এতে জঙ্গিবাদে জড়িতদের শাস্তির বিধান ছাড়াই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অন্তর্ভুক্ত হতে যাচ্ছে। এদিকে সম্প্রতি দেশে ঘটে যাওয়া জঙ্গি তত্পরতায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়ার পর আজ ইউজিসির চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বিশ্ববিদ্যালয়টি পরিদর্শনে যাচ্ছে। জানা গেছে, গত বছর তাদের লাইব্রেরিতে নিষিদ্ধ-ঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহ্রীরের বই থাকার প্রমাণ মেলার পর এ বিশ্ববিদ্যালয়টি কী সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এ বিষয়েও জানতে চাইবে প্রতিনিধি দল।
বিশ্ববিদ্যালয় আইনে জঙ্গি-সংশ্লিষ্টতায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো ধারা না থাকার বিষয়টি স্বীকার করে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান গতকাল বলেন, আইনে বলা হয়েছে জাতীয় স্বার্থে ক্ষতিকর এমন কার্যকলাপে অংশগ্রহণ করা যাবে না। জঙ্গি তত্পরতায় জড়িত কাউকে পৃষ্ঠপোষকতা করা যাবে না। কিন্তু এখানে আইন প্রয়োগের বিষয়টি তুলে ধরা হয়নি। জরিমানা বা শাস্তি প্রয়োগেরও কোনো বিধান রাখা হয়নি। ইউজিসি সূত্র জানায়, নর্থ সাউথে ইউজিসির চার সদস্যের প্রতিনিধি দলে অন্যান্যের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম ও অধ্যাপক ড. এম শাহ্ নওয়াজ আলী রয়েছেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে দেখা গেছে, ধারা ৬-এর ১০ উপধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় স্বার্থ ও শিক্ষার্থীদের স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর বিবেচিত হইতে পারে এমন কোন কার্যকলাপে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করিবে না বা সন্ত্রাসী বা জঙ্গি তত্পরতা বা এই জাতীয় কোন কার্যকলাপে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে কোনভাবেই কোন পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করিবে না।’ জানা গেছে, সম্প্রতি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েছে এমন তথ্য থাকা সত্ত্বেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তি প্রয়োগের বিধান না থাকায় ইউজিসি তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, ‘ইউজিসি সত্যিকার অর্থে কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা বা পদক্ষেপ নিতে পারে না। এটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজ। আমরা শুধু এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করতে পারি।’
নর্থ সাউথের প্রতি ক্ষুব্ধ : গত বছর ইউজিসি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে তদন্ত করতে গিয়ে তাদের লাইব্রেরিতে হিযবুত তাহ্রীরের বই পাওয়ার পর এবার বিভিন্ন জঙ্গি কর্মকাণ্ডে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এসব ঘটনায় নর্থ সাউথের প্রতি নাখোশ ও ক্ষুব্ধ ইউজিসি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিরা। বিশ্ববিদ্যালয়ে জঙ্গি তত্পরতা বন্ধে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের গৃহীত (এক সেমিস্টার অনুপস্থিত থাকলে ছাত্রত্ব বাতিল) সিদ্ধান্তকে অকার্যকর আখ্যা দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি বলেছেন, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন সিদ্ধান্ত জঙ্গি তত্পরতা বন্ধে কোনো ভূমিকাই রাখতে পারবে না। এটি তাদের একাডেমিক সিদ্ধান্ত হতে পারে। কিন্তু জঙ্গিবাদ দমনে এটি কোনো ভূমিকা রাখবে না। এটি এড়িয়ে যাওয়ার কৌশল বলেও মনে করছেন কর্তাব্যক্তিরা। এদিকে জঙ্গি কার্যক্রমে সংশ্লিষ্টতায় বার বার নর্থ সাউথের নাম আসায় ইউজিসি চেয়ারম্যান আবদুল মান্নানও এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি ক্ষুব্ধ। গতকাল তিনি ইউজিসি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘এমন বিশ্ববিদ্যালয়কে আমি দামি বিশ্ববিদ্যালয় বলতে চাই। কিন্তু নামি বলতে চাই না। দামি বলতে বোঝায়, যেখানে একটি ডিগ্রি নিতে পাঁচ থেকে দশ লাখ টাকা খরচ করতে হয়।’ এই বিপুল খরচের সঙ্গে শিক্ষার মানের কোনো সম্পর্ক নেই বলেও দাবি করেন তিনি। অনেক অভিভাবক মনে করেন, বেশি টাকা খরচ করে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেই সন্তানরা ভালো শিখবে। কিন্তু এ ধারণা সত্য নয়। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, বিভিন্ন জঙ্গি কার্যক্রমে কেন শুধু এ বিশ্ববিদ্যালয়ের নামই বার বার উঠে আসবে!