বৃহস্পতিবার, ১৪ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

চট্টগ্রামে নজরদারিতে দেড় শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

জঙ্গি তত্পরতা রোধ

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে চট্টগ্রামের দেড় শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে। পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন ধরে অনুপস্থিত শিক্ষার্থী এবং উগ্র মতাদর্শী হিসেবে পরিচিত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের তালিকা তৈরি করছে প্রশাসন।

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (অপারেশন ও ক্রাইম) দেবদাস ভট্টাচার্য বলেন, ‘গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলার পর থেকে আমরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতে জঙ্গিরা তত্পরতা চালাতে না পারে এজন্য নেওয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। যাদের বিরুদ্ধে জঙ্গি-সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে তাদেরও রাখা হয়েছে কড়া নজরদারিতে।’

চট্টগ্রাম জেলা বিশেষ শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ বলেন, ‘সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বিগত সময়ে যেসব শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে উগ্রপন্থিদের সঙ্গে যোগাযোগের অভিযোগ ছিল, তাদেরও নজরদারিতে রাখা হয়েছে।’

সিএমপি ও জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম নগর ও জেলায় কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও ইন্টারন্যাশনাল স্কুল-কলেজ দেড় শতাধিক। এর মধ্যে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ১৪টি। ইংলিশ মিডিয়াম ও ইন্টারন্যাশনাল স্কুল-কলেজ রয়েছে ৪০টি। সরকারি-বেসরকারি কলেজ ও ডিগ্রি কলেজ রয়েছে শতাধিক। জানা যায়, রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারি ও শোলাকিয়ার জঙ্গি হামলায় অংশগ্রহণকারীদের অধিকাংশই দেশের নামকরা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও সাবেক ছাত্র। এ দুই হামলার পর চট্টগ্রামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে জঙ্গি তত্পরতা ঠেকাতে উদ্যোগ নিয়েছে নগর ও জেলা পুলিশ। এরই মধ্যে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে সন্দেহভাজন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের তালিকা চাওয়া হয়েছে। তালিকা পাওয়ার পর তাদের বিগত সময়ের কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করবেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে যেসব শিক্ষার্থী ক্লাসে উপস্থিত হচ্ছে না, তাদেরও তালিকা দিতে বলা হয়েছে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে। এরই মধ্যে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকও করছেন প্রশাসনের লোকজন। বিগত সময়ে জঙ্গি-সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) বেশ কয়েকজন ছাত্র। অভিযোগ রয়েছে, বর্তমানে জেএমবি, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, হিযবুত তাহ্রীরসহ কয়েকটি জঙ্গি সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন চবির কয়েকজন ছাত্র। এ ছাড়া একই অভিযোগ রয়েছে চট্টগ্রামের অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দেওয়া তথ্যমতে, চট্টগ্রামের বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের দায়িত্বশীলদের অধিকাংশই সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বতর্মান ও সাবেক ছাত্র। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আলী আজগর চৌধুরী বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে যারা অনুপস্থিত রয়েছে তাদের তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছে অনুষদসমূহকে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে জঙ্গি তত্পরতা ঠেকাতে করণীয় নির্ধারণ করতে আগামীকাল (আজ) প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসছে চবি কর্তৃপক্ষ।’ জেলা বিশেষ শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ বলেন, ‘জঙ্গিবাদ ঠেকাতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শুরু করছে পুলিশ। বৈঠকে সন্দেহভাজন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া চাওয়া হয়েছে জঙ্গিবাদ নির্মূলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সহায়তা।’

সর্বশেষ খবর