শুক্রবার, ১৫ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

কঠোর নিরাপত্তাবলয়

সব প্রতিষ্ঠানে বাড়তি সতর্কতা

বিশেষ প্রতিনিধি

কঠোর নিরাপত্তাবলয়

হযরত শাহজালাল (রহ.) বিমানবন্দরে গতকাল ডগ স্কোয়াড নিয়ে র‌্যাবের তল্লাশি (বাঁয়ে), সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা —রোহেত রাজীব

রাজধানীর গুলশান ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর সারা দেশে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পরিবর্তন এসেছে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ও চিঠি পাঠিয়ে নিজস্ব নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য তাগিদ দিচ্ছেন। অনেক প্রতিষ্ঠান নিজ উদ্যোগে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়েছে। দেশের সুপ্রিমকোর্টসহ আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ সব বিমানবন্দরে বেড়েছে নজরদারি ও সতর্কতা। বাদ যায়নি সংসদ ভবন, বাংলাদেশ টেলিভিশন, বেতার ভবন, জাতীয় স্টেডিয়াম, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সব স্থাপনাসহ দেশি-বিদেশি বড় বড় স্থাপনা। গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় স্থাপনার পাশাপাশি সাধারণ ব্যবসাকেন্দ্র বা বাসাবাড়িতে প্রবেশের ক্ষেত্রেও কড়াকড়ি দেখা যাচ্ছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান শিল্পকলা একাডেমি, শিশু একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর ও গণগ্রন্থাগারের মতো যেসব স্থানে বেশি লোক সমাগম হয়, সেসব স্থানে নিরাপত্তা কঠোর করা হয়েছে। গতকাল নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বেসরকারি বা নিজস্ব উদ্যোগেও নিরাপত্তার উদ্যোগ নিয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। একাধিক বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিপণি বিতান, মোবাইল ফোন প্রতিষ্ঠান ও আবাসিক ভবনের লোকজন জানান, সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার ঘটনার পর সতর্ক হয়ে উঠেছেন তারা। ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ শাখার সূত্র জানায়, নিজস্ব উদ্যোগে নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য সবাইকে পুলিশের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে। এ আহ্বানে অনেকেই সাড়া দিয়েছেন। পুলিশের পক্ষ থেকেও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার প্রেক্ষাপটে দেশের সব আদালত প্রাঙ্গণে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এরই মধ্যে সুপ্রিমকোর্টে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সুপ্রিমকোর্টে জঙ্গি প্রতিরোধে কমিটি করেছেন আইনজীবীরা। প্রধান বিচারপতির নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। এ বিষয়ে সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (প্রশাসন ও বিচার) সাব্বির ফয়েজ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সাম্প্রতিক বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে দেশের সব অধস্তন আদালতের বিচারক, কর্মচারী ও আদালত সংশ্লিষ্টদের সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে প্রধান বিচারপতি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আদালতসমূহের নিরাপত্তায় ব্যবস্থা নিতে সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন থেকে গতকাল সরকারের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার আবু সৈয়দ দিলজার হোসেন স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, নিরাপত্তার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে জরুরি ভিত্তিতে স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহায়তায় দেশের প্রত্যেক আদালত প্রাঙ্গণ, বিচারকদের বাসভবন, বিচারক ও কর্মচারীসহ আদালত সংশ্লিষ্টদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা আবশ্যক। একই ভাবে দেশের সব বিমানবন্দরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ সতর্কতা। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বাড়ানো হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ বিমানবন্দরে কর্মরত সব বাহিনীর সদস্য। তারা পোশাকে ও সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করছেন। সন্দেহভাজন ব্যক্তি, গাড়ি, ব্যাগ মেটাল ডিটেকটর, ভেহিক্যাল স্ক্যানার ও ম্যানুয়াল চেকিংয়ের মাধ্যমে তল্লাশি করা হচ্ছে। যাত্রী ছাড়া কাউকে বিমানবন্দরের ভিতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মনিটরিং বাড়ানো হয়েছে। বিমানবন্দরের আশপাশে র‌্যাব-পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে। জঙ্গি হামলার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সব স্থাপনার নিরাপত্তা জোরদার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল সংশ্লিষ্ট এলাকার আগন্তুকদের ওপর নজরদারি বাড়ানোরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের জনসংযোগ বিভাগ। সংশ্লিষ্ট এলাকার সিসিটিভি ক্যামেরা, আর্চওয়ে গেইট স্থাপন, মেটাল ডিটেকটর, অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র সংরক্ষণসহ যাবতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর