শুক্রবার, ১৫ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

রাজমহলে অবকাঠামো উন্নয়ন শুরুই হয়নি

মাহমুদ আজহার ও সরকার হায়দার গাড়াতি (পঞ্চগড়) থেকে

রাজমহলে অবকাঠামো উন্নয়ন শুরুই হয়নি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার পরও পঞ্চগড়ের রাজমহলের (বিলুপ্ত গাড়াতি ছিটমহল) উন্নয়ন চলছে কচ্ছপগতিতে। এখনো শুরু হয়নি অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম। গেল বছরের অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী দেশের ১১১টি বিলুপ্ত ছিটমহলে একযোগে বিদ্যুৎ সংযোগ উদ্বোধন করেন। এ ছাড়া পরে আর দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন লক্ষ করা যায়নি। এখনো বাঁশের পুল দিয়ে চলাচল করছে সাধারণ মানুষ। পাকা কোনো রাস্তাঘাট হয়নি। বাড়িঘরের তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি। মঙ্গলবার রাজমহলে সরেজমিন ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।

ছিটমহলবাসীর অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী আমাদের বিদ্যুৎ দিয়েছেন। তিনি নিজেই বিলুপ্ত ছিটমহলগুলোর দেখভাল করছেন। তার সদিচ্ছা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসনের  সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। এখনো অবকাঠামো উন্নয়ন শুরুই হয়নি। মসজিদ-মন্দিরও নেই। এখনো রাজমহলবাসী কাঁচা রাস্তা ব্যবহার করছে। বর্ষায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর সূত্র জানায়, সরকারি খরচে ৬৭ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রাইমারি স্কুল স্থাপন করা হচ্ছে। এর কার্যক্রমও চলছে ধীরগতিতে। ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সাড়ে ১০ কিলোমিটার পাকা রাস্তা তৈরির বাজেটও পাস হয়েছে। কিন্তু এখনো কার্যক্রম শুরু হয়নি। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এডিবির সহায়তায় ২০টি ল্যাট্রিন নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রতিটির খরচ ৭০ হাজার টাকা। এ ছাড়া ব্যক্তি উদ্যোগে একটি স্কুল, একটি মাদ্রাসা ও একটি কলেজ স্থাপন করা হচ্ছে। যা এখনো নির্মাণাধীন। এর সঙ্গে অবশ্য সরকারের সম্পৃক্ততা নেই। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বিলুপ্ত গাড়াতি ছিটমহলের পুরোটাই কাঁচা রাস্তা। বর্ষায় কাদামাখা রাস্তায় চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে রাজমহলবাসীকে। বেশকিছু বাঁশের সাঁকোও দেখা গেছে। হাতেগোনা দুএকটি পাকা বাড়ি লক্ষ করা গেছে। অধিকাংশ ঘরবাড়িই টিন আর খড়ের। ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের বাইরের স্কুলে পড়াশোনা করতে দেখা গেছে। এদিকে রাস্তাঘাট উন্নয়ন নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। পঞ্চগড় উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) আহম্মেদ রফিক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, রাজমহলে ১৭ কিলোমিটার রাস্তা পাকাকরণের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে ১০ কিলোমিটার রাস্তা পাকাকরণের বরাদ্দ পাওয়া গেছে। তবে আমরা আরও কয়েকটি বিকল্প পাকা রাস্তা করতে এলাকাবাসীর সহযোগিতা চেয়েছিলাম। কিন্তু রাজমহলবাসী জমি দিতে রাজি হয়নি। রাস্তা পাকাকরণের সব প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। যেকোনো সময় কাজ শুরু হবে। এদিকে উল্টো বক্তব্য দিচ্ছেন বিলুপ্ত ছিটমহলবাসী। ছিটমহলের বাসিন্দা বাবল খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রাস্তা তৈরিতে জমি দিতে ছিটমহলের কারও আপত্তি নেই। সরকার যেখান দিয়ে রাস্তা করতে চাইবে, আমরা সেখানেই রাস্তার জমি দিতে প্রস্তুত।

জানা যায়, সরকারের পাশাপাশি বেসরকারিভাবেও বেশকিছু অনুদান পেয়েছে বিলুপ্ত ছিটমহলবাসী। তবে তা ছিটমহলের সাধারণ মানুষের চেয়ে একটি প্রভাবশালী শ্রেণির পকেটে চলে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। টিন, সেলাই মেশিন, টিউবওয়েল, শীতবস্ত্রসহ নানা সামগ্রী প্রভাবশালীরা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিয়েছে বলে একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন। তারা এও বলেছেন, ছিটমহলের বরাদ্দ অনেকাংশ চলে গেছে ছিটের বাইরে থাকা ক্ষমতাধরদের হাতে।  পঞ্চগড়ের গাড়াতিতে সাতটি ছিটমহল ছিল। সেখানে জনসংখ্যা ২ হাজার ৮১ জন। মোট আয়তন ১ হাজার ১১৭ একর। এরমধ্যে প্রায় ১ হাজার মানুষের বয়স ১৮ বছরের ওপরে। মোট পরিবার ৪২২টি। এর মধ্যে ৮১ জন হিন্দু বসবাস করছেন। ছিটমহল থাকায় দীর্ঘদিন তারা মৌলিক নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিলেন। এবার তারা ভোটাধিকার ফিরে পাচ্ছেন। এদিকে গত ১৩ জুলাই পঞ্চগড়ের ‘রাজমহলের রাজা মফিজার’ শিরোনামে একটি সরেজমিন প্রতিবেদন বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রকাশিত হলে জেলা প্রতিনিধিকে নানা হুমকি দিচ্ছেন মফিজারের লোকজন। বৃহস্পতিবার রাতে পরিচয় না দিয়ে একটি মোবাইল থেকে (০১৭৩৮-৩৪৪২১১) প্রতিনিধিকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে সদর থানায় অভিযোগ করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর