শুক্রবার, ১৫ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

পাহাড়ি হাতির তাণ্ডব

প্রতিদিন ডেস্ক

পাহাড়ি হাতির তাণ্ডব

রাঙামাটি ও বান্দরবানের পাহাড়ি অঞ্চল এবং শেরপুরের সীমান্ত এলাকায় বন্যহাতির ভয়াবহ তাণ্ডব শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে বহু মানুষ এর শিকার হয়েছেন। অনেকে ঘরবাড়ি ও ফসল হারিয়েছেন। গ্রাম ছেড়ে পালিয়েও গেছেন বহুজন।

রাঙামাটি প্রতিনিধি জানিয়েছেন, রাঙামাটির প্রত্যন্ত অঞ্চলের দুর্গম পাহাড়ি গ্রামগুলোয় বন্যহাতির তাণ্ডব বেড়েছে। ফলে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন লংগদুর ভাসান্যাদম ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের ৮ হাজার মানুষ। সূর্য ডুবলেই বন্যহাতির তাণ্ডব শুরু হয়। হাতির ভয়ে অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে চলে গেছেন। এরই মধ্যে ভাসান্যাদম ইউনিয়নের ৭টি ওয়ার্ড মানুষশূন্য হয়ে পড়েছে। বগা চত্বরের বাসিন্দা কবির হোসেন জানান, হাতির দল দিনের বেলায় পাহাড়ে অবস্থান করলেও সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে হানা দিচ্ছে। তাণ্ডব চালিয়ে ধ্বংস করছে বসতঘর, ধানসহ চাষিদের কষ্টের খেত-খামার। তিনি জানান, বিশেষ করে জুন ও জুলাইয়ে বন্যহাতির উপদ্রব বাড়ে। জুমের ধান পাকলে পাহাড় থেকে নেমে আসে এসব হাতির দল। লংগদু উপজেলা চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন জানান, লংগদুর ভাসান্যাদম, বগা চত্বর, গুলশাখালী, রাঙীপাড়া; কাপ্তাই উপজেলার জিপতলীসহ বিভিন্ন এলাকায় বন্যহাতির তাণ্ডব বেড়েছে। ভাসান্যাদমের বেশ কটি গ্রামে হামলা চালিয়ে শতাধিক ঘরবাড়ি ভেঙে তছনছ করেছে হাতির দল। ভয়ে অনেকেই গ্রাম ছেড়ে নিরাপদ স্থানে সরে গেছেন। অনেকে রাত জেগে পাহারা বসিয়েছেন। দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সালাহ উদ্দিন জানান, জুমের ধান পাকলে পাহাড় থেকে নেমে আসে বন্যহাতির পাল। তা ছাড়া পার্বত্যাঞ্চলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও নতুন নতুন জায়গায় জুম চাষসহ বৃক্ষ নিধনের ফলে হাতির খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে; যার কারণে বন্যহাতি বন ছেড়ে লোকালয়ে প্রবেশ করছে। বান্দরবান প্রতিনিধি জানান, নাইক্ষ্যংছড়ি, লামা ও সদর উপজেলার কয়েক ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ বন্যহাতি আতঙ্কে দিনযাপন করছেন। প্রতিদিন বন্যহাতির পাল নেমে আসছে লোকালয়ে। ধ্বংস করছে দুর্গম দৌছড়ি, জারুলিয়াছড়ি, বাঁকখালী, বাইশারী, কাগজিখোলা, হরিণখাইয়া, আম্রছড়ি, ছাইল্লাতলি, হাতির ডেবা, মাইগাপাড়া; লামা উপজেলার তিরের ডিব্বা, রূপসীপাড়া, ক্যাজুপাড়া, গজালিয়া; সদর উপজেলার রাজবিলা, কদুখোলা, সুয়ালকসহ অসংখ্য এলাকার হতদরিদ্র লোকজনের বসতবাড়ি, জমির ফসল, বাগানসহ মূলবান জিনিসপত্র। সম্প্রতি ভোররাতে নাইক্ষ্যংছড়ির দৌছড়ি ইউনিয়নের বাঁকখালীতে বন্যহাতির দল হানা দিয়ে পায়ের নিচে পিষ্ট করে আবদুস সালামের দুই শিশু পুত্র মোজাহিদ (৫) ও শাহীনুরকে (১০) মেরে ফেলেছে। এ সময় শিশুদের মা ইসমত আরা বেগম (৩০), নানি মাসুদা বেগম (৫২) ও জাফর আলম গুরুতর আহত হন। জারুলিয়াছড়ির বাসিন্দা আহমদ হোসেন জানান, ৩০-৪০টি বন্যহাতির দুটি পাল প্রতি রাতেই হানা দিচ্ছে। রাত জেগে পাহারা দেওয়ার কারণে লোকজনকে দিনের বেলায় ঘুমাতে হচ্ছে। ফলে তারা কাজকর্ম করতে পারছেন না। শেরপুর প্রতিনিধি জানান, তিন-চার মাস ধরে শেরপুরের সীমান্তবর্তী গারো পাহাড় এলাকায় ভারতীয় বন্যহাতির তাণ্ডব চলছে। সীমান্তবাসী তাদের ফসল বাঁচাতে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন। অনেকেরই অভিযোগ, ভারতের মেঘালয় অঞ্চলে হাতির উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় ভারত সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার বিশাল গেট খুলে দিয়েছে। ফলে হাতিগুলো অনায়াসে বাংলাদেশে ঢুকছে। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী শেরপুরের নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী ৪০টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ বন্যহাতির ভয়ে আতঙ্কিত জীবন যাপন করছেন। একাধিক গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সীমান্তের প্রায় প্রতি বাড়িতেই মশাল আর ভোগাবাতি (বাঁশ ও পাট দিয়ে তৈরি মশাল) তৈরি করে রাখা হয়েছে। পাহাড়ের টিলা ও শাল-গজারি বাগানের ফাঁকে ফাঁকে আবাদি জমির ওপর গ্রামবাসী ডেরা তৈরি করে ছোট ছোট গ্রুপে রাত জেগে পাহারার ব্যবস্থা করেছেন। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে ভোররাত পর্যন্ত শুকনো বাঁশের মশাল জ্বালিয়ে পাহারা দিচ্ছে কৃষক। জামালপুর প্রতিনিধি জানান, বন্যহাতির ভয়ে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার ৫টি গ্রামের মানুষ। চুকাইবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম খান জানান, কয়েক দিন আগে বন্যার পানির সঙ্গে ভারতীয় একটি বন্যহাতি নেমে আসে যমুনার চর এলাকায়। হাতিটি প্রতিদিনই নষ্ট করছে খেতের ফসল ও বাড়িঘর। তিনি জানান, এ হাতির আতঙ্কে প্রায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন গ্রামের মানুষ। দিনের বেলা হাতিটি নদীতীরে থাকলেও সন্ধ্যার পরই চলে আসে জনপদে। হাতির আক্রমণ থেকে খেতের ফসল ও বাড়িঘর রক্ষায় গ্রামবাসী মশাল জ্বালিয়ে রাতভর পাহারা দিচ্ছেন। বিজিবি ও বন বিভাগের লোকজন চেষ্টা করেও হাতিটি তাড়াতে পারেননি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর