শনিবার, ১৬ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

সুন্দরবনের দস্যুপ্রধান মজনুসহ ১১ জনের আত্মসমর্পণ

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে ২৫ অস্ত্র ও গোলাবারুদ সমর্পণ

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা ও বাগেরহাট প্রতিনিধি

সুন্দরবনের দস্যুপ্রধান মজনুসহ ১১ জনের আত্মসমর্পণ

বনদস্যু বাহিনীর ১১ সদস্য গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করে —বাংলাদেশ প্রতিদিন

সরকারের কাছে সাধারণ ক্ষমা চেয়ে বনদস্যুতা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার অঙ্গীকার করে গতকাল আত্মসমর্পণ করেছেন সুন্দরবনের দুর্ধর্ষ বনদস্যু মজনু ও ইলিয়াছ বাহিনীর দুই প্রধানসহ ১১ বনদস্যু। দুপুরে মংলা বন্দরের বিএফডিসি জেটিতে বনদস্যু মজনুবাহিনী প্রধান মজনু গাজী ও ইলিয়াছবাহিনী প্রধান ইলিয়াছ হোসেন তাদের সহযোগীসহ ২৫টি দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র ও ১ হাজার ২০ রাউন্ড গুলি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে তুলে দিয়ে আত্মসমর্পণ করেন। আত্মসমর্পণকৃত অন্য বনদস্যুরা হলেন বাবুল হাসান, জাহাঙ্গীর হোসেন রহমত, ইদ্রিস আলী, ইসমাইল হোসেন, মজনু শেখ, রবিউল ইসলাম ওরফে ইমদাদুল, আবুল কালাম আজাদ, এনামুল হোসেন ও নাসির হোসেন। আত্মসমর্পণকারী বনদস্যুদের মধ্যে মজনুসহ নয়জন মজনু বাহিনীর ও ইলিয়াছসহ দুজন ইলিয়াছ বাহিনীর। তাদের বাড়ি খুলনা ও সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকায়। আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সুন্দরবনের অন্যসব বনদস্যুবাহিনীকে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, দস্যুতা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চাইলে তারাও এ সুযোগ পাবে। তবে দস্যুতা চালিয়ে যেতে থাকলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদের দমনে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। বনদস্যুদের গডফাদারদেরও আইনের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। সুন্দরবনসহ উপকূলের জেলে-বনজীবী ও পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশিত জিরো টলারেন্সের কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী আরও বলেন, আত্মসমর্পণকৃত দস্যুদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সব রকম আইনি সহায়তা দেওয়া হবে। বনদস্যু দমনে এ এলাকায় র‍্যাব ও কোস্টগার্ডের শক্তি বাড়ানো হয়েছে। তাদের তত্পরতার ফলে সুন্দরবনে টিকতে না পেরে বনদস্যুরা এখন আত্মসমর্পণ করছে। সুন্দরবনসহ উপকূল দস্যুমুক্ত করে পর্যটক ও জেলে-বনজীবীদের চলাচল নিরাপদ করা হবে। র‍্যাব-৮-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল ফরিদুল আলম জানান, সুন্দরবনের এই বনদস্যুরা দস্যুতা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে তাদের ২৫টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ১ হাজার ২০ রাউন্ড গোলাবারুদ আগেই র‍্যাবের কাছে জমা দেন। দুই বাহিনীর প্রধানসহ ১১ বনদস্যুকে র‍্যাবের হেফাজতে নেওয়া হয়। এর আগে ৩১ মে সুন্দরবনের বনদস্যু মাস্টার বাহিনীর প্রধান মাস্টারসহ ১০ বনদস্যু অর্ধশতাধিক আগ্নেয়াস্ত্র ও ৫ হাজার রাউন্ড গুলি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে তুলে দিয়ে আত্মসমর্পণ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় এই ১১ বনদস্যুর আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বৈরী আবহাওয়ার কারণে হেলিকপ্টারে চড়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দুপুরে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় নেমে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাজার জিয়ারত শেষে সড়কপথে দুপুরে মংলায় অনুষ্ঠানস্থলে এসে পৌঁছান। এরপর মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের বিএফডিসি জেটিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও র‍্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদের উপস্থিতিতে এরা আত্মসমর্পণ করেন। এ দুটি বনদস্যুবাহিনীর কাছ থেকে আত্মসমর্পণের সময় পাওয়া ২৫টি আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে রয়েছে ১১টি একনলা বন্দুক, ২টি দোনলা বন্দুক, ৩টি বিদেশি রাইফেল, ১টি রিভলবার, ৫টি অনশুটারগান ও ৩টি শাটারগান।  আত্মসমর্পণের পর র‍্যাবের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করে আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদসহ তাদের খুলনার দাকোপ থানা পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর