শনিবার, ১৬ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

পেয়ারা চাষে ভাগ্য বদল

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

পেয়ারা চাষে ভাগ্য বদল

পেয়ারা চাষ এবং তা বিষমুক্তভাবে বিক্রি করে যে ভাগ্য বদল করা যায়, তার জলজ্যান্ত প্রমাণ কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার মোকারিমপুর ইউনিয়নের ফকিরাবাদ গ্রামের কৃষক রেজাউল হক, রবিউল ইসলাম, রিন্টু রহমান, ফাইমা খাতুন ও আবুল হোসেন। তারা সবাই অতিদরিদ্র ছিলেন। পেয়ারা চাষ করে এখন স্বাবলম্বী।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, তিন বছর আগে সরকারের ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের            সদস্য হন ওই পাঁচজন। ২০১৩ সালে তারা প্রকল্প থেকে ৫০ হাজার টাকার ঋণ পান। যদিও এ টাকায় পেয়ারার বাগান করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এ সময় পাশে এসে দাঁড়ান স্থানীয় ইউপি সদস্য আসাদুজ্জামান। তিনি পাঁচ কৃষকের সঙ্গে যৌথভাবে ১০ বছরের জন্য বিঘাপ্রতি ৯ হাজার টাকা দরে ১০ বিঘা জমি বর্গা নেন। কৃষক রেজাউল হক জানান, ২০১৩ সালের মার্চে জমি বর্গা নেওয়ার পর যশোর থেকে তারা ২৫ টাকা দরে প্রায় সাড়ে তেরশ থাই পেয়ারার চারা এনে রোপণ করেন। রোপণের ৮ মাসের মাথায় ফলন পাওয়া শুরু হয়। তিনি জানান, বছরে দুবার গাছে ফল আসে। তবে বর্ষাকালে ফল বেশি হলেও তখন দাম কম থাকে। শীত মৌসুমে ফলন কম হলেও পেয়ারার দাম তুলনামূলক বেশি পাওয়া যায়। জ্যৈষ্ঠ মাসে পেয়ারা গাছে এক দফা ফুল ও ফল আসে। এই মৌসুম কমপক্ষে ৯ মাস স্থায়ী হয়। তিনি আরও জানান, চলতি মৌসুমে তিনি ৫-৬ লাখ টাকার পেয়ারা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন। রেজাউল হক জানান, বর্ষা মৌসুমে প্রতি কেজি পেয়ারা পাইকারি বিক্রি হয় ১৫ থেকে ৪০ টাকায়। আর শীত মৌসুমে ৭০-৮০ টাকায়।

 তিনি জানান, তারা বাগানে পোকামাকড় দমনে কোনো কীটনাশক ব্যবহার করেন না। কেবল স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শে ভিটামিন-জাতীয় কিছু ওষুধ প্রয়োগ করেন। এ ছাড়া বাগানে পোকামাকড় ঠেকাতে পেয়ারা একটু বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পলিথিন ব্যাগে ঢুকিয়ে মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়। বাগানের অংশীদার ইউপি সদস্য আসাদুজ্জামান জানান, পাঁচ কৃষক বাগানের লভ্যাংশের পাশাপাশি শ্রমের মজুরিও পান। এ ছাড়া আরও পাঁচজন বিধবা নারীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে এই বাগানে। পেয়ারা বিক্রির পাশাপাশি ১০ বছর পর গাছগুলো কেটে জ্বালানি (খড়ি) হিসেবে বিক্রি করলেও ৫-৬ লাখ টাকা পাওয়া যাবে। বাগানের শ্রমিক রেখা খাতুন জানান, তিনি এখানে কাজ করে নিয়মিত ভালো পারিশ্রমিক পান। এতে তার সংসারে সুদিন ফিরেছে। দুটি ছেলেমেয়েকে পড়ালেখা শেখাচ্ছেন। একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের ভেড়ামারা উপজেলা সমন্বয়কারী তৌহিদুল ইসলাম জানান, বাজারে বিষমুক্ত এ পেয়ারার যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেন বলেন, সরকারি প্রকল্প থেকে পাঁচ কৃষক ঋণ নিয়ে বিষমুক্ত পেয়ারাবাগান করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তিনি অন্য কৃষকদের এ ধরনের উদ্যোগ বাস্তবায়নে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর