সোমবার, ১৮ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

আউটসোর্সিংয়ে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ

২০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের আশা, ভবিষ্যৎ আয়ের স্বপ্ন ৫ বিলিয়ন ডলার

রুহুল আমিন রাসেল

বিশাল সম্ভাবনা নিয়ে আউটসোর্সিংয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এ খাতে বছরে আয় ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ফলে বিশ্বের ৫০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ২২তম। ভবিষ্যতে আউটসোর্সিং থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার আয়ের স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ। তাতে জিডিপিতে এই খাতের অবদান দাঁড়াবে ৫ শতাংশে। বর্তমানে এ খাতে সাড়ে ৪ লাখ মানুষ জড়িত থাকলেও, ভবিষ্যতে ২০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের বিশাল সম্ভাবনা দেখছেন তথ্য-প্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তারা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বে বছরে এক ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাজার রয়েছে আউটসোর্সিংয়ে। বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারত এই খাতে আয় করছে ১০০ বিলিয়ন ডলার। আর বাংলাদেশ ২০২১ সালে আয়ের স্বপ্ন দেখছে ৫ বিলিয়ন ডলার। এক্ষেত্রে ১ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রয়োজন বলে মনে করেন তথ্য-প্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ীরা। আউটসোর্সিংয়ের চ্যালেঞ্জ তুলে ধরে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)-এর সাবেক সভাপতি শামীম আহসান গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী ৫ বিলিয়ন ডলারের যে স্বপ্ন দেখছেন, তাতে সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ প্রয়োজন। সেই বিনিয়োগটা প্রত্যাশিতভাবে দেখছি না। তার দাবি, তথ্য-প্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশ যে ৪০০ মিলিয়ন ডলারের রপ্তানি করে, তাতে ৩০০ মিলিয়নই আসে আউটসোর্সিং থেকে। এই আয় বাড়াতে বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের যে ইতিবাচক ব্র্যান্ডি প্রয়োজন, তা নেই। বাংলাদেশ নিয়ে পশ্চিমা গণমাধ্যম নেতিবাচক প্রচারণা করছে। এটা বন্ধে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশকেও ইতিবাচক প্রচারণা চালাতে হবে।

আউটসোর্সিং কী : সূত্র মতে, আউটসোর্সিং (ঙঁঃংড়ঁত্পরহম) মানে বাইরের মাধ্যম থেকে কোনো কাজ বা তথ্য নিজের কাছে নিয়ে আসা বা নিজের কাজ বা তথ্য অন্যের কাছে পাঠিয়ে দিয়ে তুলনামূলক কম মূল্যে করিয়ে নেওয়া। শুধু ফ্রিলান্সিংকে এককভাবে আউটসোর্সিং বলা চলে না। স্থানীয় বা নিজ দেশের কাজকেও আউটসোর্সিং বলা যাবে না। বাংলাদেশ আউটসোর্সিংয়ে বর্তমানে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে জানিয়ে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছিলেন, আমরা এই খাতে আরও এগিয়ে যাব। আগামীতে আউটসোর্সিংয়ের জন্যে ৫০ হাজার ছেলে-মেয়েকে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলা হবে। দেশের তথ্য-প্রযুক্তি খাতের আয় পোশাকশিল্পকেও ছাড়িয়ে যাবে বলে আশাবাদ প্রকাশ করেন তিনি। সরকারি তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে সাত লাখ তথ্য-প্রযুক্তি পেশাজীবী আছেন। এর মধ্যে ১ লাখ ২০ হাজার ও অন্যান্য খাতে ১ লাখ ৩০ হাজার মিলিয়ে মোট ২ লাখ ৫০ হাজার তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর পেশাজীবী রয়েছে বলে জরিপ করে জানিয়েছে বেসিস। প্রতিষ্ঠানটির তথ্যমতে, তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর পেশাজীবী ছাড়াও দেশে ফ্রিল্যান্স-আউটসোর্সিংয়ে জড়িত আছেন প্রায় সাড়ে ৪ লাখ মানুষ। সরকারি-বেসরকারিভাবে প্রায় ২ লাখ তথ্য-প্রযুক্তি পেশাজীবী তৈরির প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে। তবে আগামী ২০১৮ সালের মধ্যে দেশে ১০ লাখ তথ্য-প্রযুক্তি পেশাজীবী তৈরির ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এতে সরকারের চলমান উদ্যোগগুলো বাস্তবায়ন ও সামনের দিনগুলোতে ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এই ১০ লাখ পেশাজীবী তৈরি ও কর্মসংস্থান করা সম্ভব। বেসিস জানিয়েছে, রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে তথ্য-প্রযুক্তি খাতের ১ শতাংশ আবদান রয়েছে। তথ্য-প্রযুক্তি খাতে রপ্তানি আয় প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে তথ্য-প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশ ব্যাংকের সি-ফর্মের জটিলতায় এটি সরকারি হিসেবে প্রায় ১৩২ মিলিয়ন ডলার।) কিন্তু বাস্তবিক অর্থে এই আয় প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলার। এরসঙ্গে ফ্রিল্যান্স-আউটসোর্সিং পেশাজীবীরা প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার আয় করছে। এ ছাড়াও দেশের তথ্য-প্রযুক্তি খাতের স্থানীয় বাজার প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলার। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের তথ্য-প্রযুক্তি খাতের মোট বাজার প্রায় ৯০০ মিলিয়ন ডলার। এটা দেশের জিডিপির প্রায় শূন্য দশমিক ৫২ শতাংশ।

সর্বশেষ খবর