মঙ্গলবার, ১৯ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

নিরাপত্তাঝুঁকিতে ব্যাংক-বীমা

সশস্ত্র প্রহরী চেয়ে প্রশাসনে আবেদন

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

নিরাপত্তাঝুঁকিতে ব্যাংক-বীমা

গুলশান ও শোলাকিয়ায় দুই দফা জঙ্গি হামলার পর এখন সারা দেশে ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো পড়েছে নিরাপত্তাঝুঁকিতে। এরই মধ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সারা দেশে তাদের নিজ নিজ শাখার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সশস্ত্র নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগ দিতে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছে। একাধিক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের পক্ষ থেকে বিষয়টি জানানো হয়েছে সরকারকে। নিরাপত্তা ইস্যুতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকেও করা হয়েছে বেশ কিছু সুপারিশ। ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের যে অটো অ্যালার্ম সিস্টেমসের সংযোগ রয়েছে, এর সঙ্গে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ছাড়াও জরুরি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্থানীয় প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ নম্বরের সংযোগ স্থাপন এবং সংকটজনক মুহূর্তে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দ্রুত সহায়তা করতে জেলা প্রশাসনকে সংযুক্ত করার সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

আগামী সপ্তাহে সচিবালয়ে অনুষ্ঠেয় জেলা প্রশাসক সম্মেলন সামনে রেখে এসব সুপারিশ অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ ছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোও নিরাপত্তা ইস্যুতে তাদের নেওয়া কার্যক্রম তুলে ধরে পৃথকভাবে ব্যাংকিং বিভাগে চিঠি লিখেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক মতামতে জানিয়েছে, ‘সশস্ত্র প্রহরী নিয়োগের বিষয়ে অধিকাংশ ব্যাংক তাদের শাখাসমূহের অনুকূলে লাইসেন্সের জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছে, যা বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ সংশ্লিষ্ট কার্যাবলি দ্রুত নিষ্পত্তিকল্পে মাঠপর্যায়ে কর্মরত প্রশাসনের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের সহায়তা প্রয়োজন।’ এসব মতামত ও সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে জঙ্গি ইস্যুতে ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক খাতের এই নিরাপত্তা ইস্যুটি এখন গুরুত্ব পাচ্ছে সরকারের কাছেও। সে কারণে জেলা প্রশাসক সম্মেলনে স্থানীয় পর্যায়ে নিরাপত্তা ইস্যুটি গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘২৬ থেকে ২৯ জুলাই পর্যন্ত সচিবালয়ে জেলা প্রশাসকদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এ বিষয়ে আমরা ব্যাংকগুলোর মতামত নিয়েছি। সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক জঙ্গি হামলার পরিপ্রেক্ষিতে বেশির ভাগ ব্যাংক তাদের স্থানীয় পর্যায়ে শাখাগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আমরা ডিসি কনফারেন্সে নিরাপত্তাঝুঁকির বিষয়টি তুলে ধরে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তা চাইব।’ ব্যাংক, বীমা ছাড়া মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রেও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকদের সহায়তা চাওয়ার সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, ২০১১ সালে কার্যক্রম শুরুর পর বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা জনসাধারণের মধ্যে বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বর্তমানে সারা দেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে গ্রাহকের সংখ্যা ৩ কোটি ৫৫ লাখ। প্রতিদিন প্রায় ৬১৬ কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্রদানে নিয়োজিত ব্যাংকগুলো তার সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নিয়োগৃকত এজেন্ট মারফত অর্থ স্থানান্তরকালে মাঝেমধ্যেই ছিনতাই ও হামলার শিকার হচ্ছে। ইতোপূর্বে রমজান ও ঈদ সামনে রেখে মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় অর্থ লেনদেনের সময় প্রয়োজনে পুলিশের সহায়তা নেওয়ার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। এ পর্যায়ে জেল প্রশাসক সম্মেলনে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের আওতায় সারা দেশে নিয়োজিত এজেন্ট কর্তৃক নগদ অর্থ পরিবহনের সময় নিরাপত্তামূলক সহায়তা প্রদানের বিষয়টি আলোচনা করা যেতে পারে। সূত্রগুলো জানায়, প্রশাসনের সহায়তার বাইরে ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এরই মধ্যে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একাধিক প্রতিষ্ঠান নিরাপত্তা ইস্যুতে কী ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে তাও অবহিত করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং বিভাগকে। রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেবাশীষ চক্রবর্ত্তী গত ১১ জুলাই এক চিঠিতে জানিয়েছেন, তারা তাদের শাখাগুলোর ভল্টের নিরাপত্তার স্বার্থে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট শাখার কাঠামোগত নিরাপত্তা, প্রযুক্তি ও বীমা নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্দেশনা দিয়েছেন। এ ছাড়া শাখাগুলোতে অতিরিক্ত অর্থ না রাখা, প্রধান কার্যালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ শাখাগুলোতে সিসি ক্যামেরা সংযোগ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুসারে অটো অ্যালার্ম স্থাপনের কাজ শুরু করেছেন।

সর্বশেষ খবর