মঙ্গলবার, ১৯ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

ঝিনাইদহে দুই শতাধিক মেসে কারা থাকে

কোনো তথ্য নেই পুলিশের কাছে

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

ঝিনাইদহ শহরে দুই শতাধিক ছাত্রাবাস আর মেস থাকলেও সেখানে কারা থাকে, কেন থাকে, কী করে, এ ব্যাপারে পুলিশের কাছে কোনো তথ্য নেই। জেলা শহরের হামদহ সোনালী পাড়ার মেসে চার মাস আগে উঠেছিল গুলশান হামলার আলোচিত জঙ্গি নিবরাস ইসলাম ওরফে সাঈদ তার কথিত খালাতো ভাই ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া মাঠে নিহত আবির ওরফে শাওনসহ ৭ সহযোগী। এই জঙ্গিদের থাকার সুবাদে শহরের বাড়ির মালিকরা পড়েছেন বিপাকে। সেই সঙ্গে তারা আতঙ্কগ্রস্তও। এরই মধ্যে কোনো কোনো ছাত্রাবাসের মালিক মেস উঠিয়ে ফ্যামিলি বাসা ভাড়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এদিকে জঙ্গিদের আশ্রয় দেওয়ার ঘটনায় মসজিদের ইমাম ইবি ছাত্র রোকনুজ্জামান রোকন ও বাড়ির মালিকসহ পাঁচজনকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ ঘটনায় মসজিদ কমিটি অব্যাহতি দিয়েছেন ইমাম রোকনকে। গত শুক্রবার থেকে নতুন ইমাম মসজিদের ইমামতি করতে দেখা গেছে। তবে এসব ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনও কঠোর গোপনীয়তা অবলম্বন করে আসছে। আটক, গ্রেফতার, অভিযান বা জঙ্গি নিবরাস সম্পর্কে তাদের কাছে কোনো তথ্য নেই বলে জানিয়ে আসছে সংবাদকর্মীদের কাছে। ঝিনাইদহ জেলা সদরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও একটি গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রমতে জানা গেছে, জেলা শহরে দুই শতাধিক ছাত্রাবাস ও মেস আছে। এসব মেসে অবস্থানকারীদের বড় একটি অংশ ঝিনাইদহ-সংলগ্ন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এসব শিক্ষার্থীর মধ্যে অনেকেই ছাত্রশিবিরের রাজনীতিতে জড়িত, এদের মধ্যে কেউ মসজিদে ইমামতি, মাদ্রাসায়, কিন্ডারগার্টেনে, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা, টিউশনিসহ নানা পেশায় যুক্ত। এসবের পাশাপাশি অনেক ছাত্র, শিক্ষার্থী বাসাভাড়া করে শহরে অবস্থান করছে। কিন্তু কে কী করে তার কোনো হিসাব নেই পুলিশের কাছে। জঙ্গি নিবরাস ইসলাম ও তার সহযোগীরা অবস্থানকারী শহরের ৩ নম্বর পানির ট্যাঙ্কি এলাকার সোনালী-খোন্দকার পাড়াতেও ৪-৫টি মেস রয়েছে। ঝিনাইদহের সোনালীপাড়ার এক ছাত্রাবাসের মালিক শরিফুল হাসান জানান, ছাত্রাবাস ভাড়া দেওয়ার মতো কোনো অবস্থা এখন আর নেই। গুলশানে হলি আর্টিজানে হামলাকারীদের একজন নিবরাস ইসলাম হামলার আগে ঝিনাইদহে ৪ মাস অবস্থান করেছিল। পরে জানা যায়, কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে হামলাকারী আবিরও মাসখানেক ঝিনাইদহের সোনালীপাড়ার এক ছাত্রাবাসে ছিল। তিনি বলেন, ‘আমি ছাত্রাবাসের সবাইকে বলেছি, আগামী মাস থেকে তারা যেন রুম ছেড়ে দেয়।’ সোনালীপাড়ায় অর্কিড ছাত্রাবাসের মালিক লিয়াকত হোসেন বলেন, ‘আমার মেসে তিনটি কক্ষে ১২ জন সদস্য থাকে। এদের সবাই বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তাদের আইডি কার্ডের ফটোকপি নিয়ে মেসে সিট দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা যদি নকল কার্ড দেয় বা ভুল তথ্য দিয়ে অপরাধমূলক কাজ করে তাহলে আমাদের কী করার আছে?’ সদর থানা পুলিশের ওসি হরেন্দ্রনাথ সরকার জানান, পুলিশের পক্ষ থেকে মেসের মালিকদের জীবন বৃত্তান্ত, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি ও কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, চাকরিজীবীদের আইডি কার্ডের ফটোকপিসহ যাবতীয় তথ্য থানায় জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দু-একদিনের মধ্যে আমরা সেগুলো হাতে পাব। পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেন জানান, এখন থেকে ঝিনাইদহে মেস ভাড়া দিতে হলে পুলিশের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। কে থাকবে আর কে থাকবে না সেটা পুলিশ যাচাই-বাছাই করে দেখবে।

সর্বশেষ খবর