মঙ্গলবার, ১৯ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা
ঐতিহ্য

ইতিহাসের নীরব সাক্ষী ঘুঘুডাঙ্গা জমিদারবাড়ি

দিনাজপুর প্রতিনিধি

ইতিহাসের নীরব সাক্ষী ঘুঘুডাঙ্গা জমিদারবাড়ি

দিনাজপুরে সোয়া ২০০ বছরের পুরনো ঘুঘুডাঙ্গা জমিদারবাড়িটি ঐতিহ্যের নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এটি দিনাজপুর শহর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দক্ষিণে পুনর্ভবা নদীর কোলঘেঁষে নিরিবিলি ও কোলাহলমুক্ত ঘুঘুডাঙ্গা গ্রামে অবস্থিত।

ইতিহাসবিদদের মতে, অনেক ঘটনার সাক্ষী এ জমিদারবাড়িটি সংস্কার করা হলে ঐতিহ্যের নিদর্শন হয়ে এটি নতুন প্রজন্মের জন্য শিক্ষণীয় দর্শন কেন্দ্র হতে পারে। ঘুঘুডাঙ্গায় বসবাসরত বংশধরদের            ভাষ্য ও ইতিহাস থেকে জানা গেছে, ব্রিটিশ শাসনামলে দিনাজপুর জেলায় যে কজন জমিদার ছিলেন তার অন্যতম ঘুঘুডাঙ্গার জমিদার। তত্কালীন দিনাজপুরের ১১টি থানায় এই জমিদারের জমিদারি ছিল। তার জমিদারি থেকে বার্ষিক ১ লাখ টাকা খাজনা দিতে হতো ব্রিটিশ সরকারকে। ১৮টি কাচারি ও ৪১টি তহসিল অফিসের মাধ্যমে পরিচালিত হতো জমিদারি। ঘুঘুডাঙ্গা জমিদার বংশের গোড়াপত্তন করেন নবীর মোহাম্মদের একমাত্র পুত্র ফুল মোহাম্মদ। পর্যায়ক্রমে ঘুঘুডাঙ্গা জমিদারি স্থায়ী ছিল ৮০ বছরের মতো। জানা গেছে, ঘুঘুডাঙ্গা জমিদারবাড়িটি ছিল এক তলা-দোতলা মিলে একটি অনুপম পাকা ভবন। এখন অবশ্য ভগ্নদশায় রয়েছে বিরাট প্রবেশদ্বার। তখন ফুল-লতাপাতায় সজ্জিত ছিল এর দ্বার। হাতিশালে হাতি, ঘোড়াশালে ঘোড়া ছিল। আর অন্যান্য জমিদার পরিবারের মতো ছিল পাইক-পেয়াদা-সিপাই, বাবুর্চি, খানসামা, খামারু ইত্যাদি। ছিল একজন ম্যানেজার। ছিল মেহমানখানা ও একটি সুদৃশ্য মসজিদ। সপ্তাহ বা মাসে বসত মেহমানখানা চত্বরে গ্রামপ্রধানদের আসর। এ আসরে আলোচনা হতো শান্তি-শৃঙ্খলা, সামাজিক, চাষাবাদ ও আর্থিক নানা বিষয়। মেহমানখানার পেছনদিকে ঘুঘুডাঙ্গা জমিদার পরিবারের দুটি কবরস্থানও রয়েছে। এ বাড়িতে দুর্লভ অনেক সামগ্রী ছিল। একটি সোনার চেয়ার ছিল, যা বর্তমানে জাতীয় জাদুঘরে ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে সংরক্ষিত আছে। এ ছাড়া ১০১ ভরি ওজনের সোনা দিয়ে তৈরি কৃত্রিম কই মাছ, রুপার বাটযুক্ত ছাতা, পাখা, রুপা নির্মিত লাঠি, তামার ডেকচিসহ দুর্লভ সামগ্রী ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে লুণ্ঠিত ও ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। হানাদাররা এ বাড়ির ওপর বোমা বর্ষণ করে অনেক কিছুই ধ্বংস করে দেয়। এটি এখন ধ্বংসপ্রাপ্ত বাড়ি হিসেবে প্রায় পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়ে গেছে।

সর্বশেষ খবর