বৃহস্পতিবার, ২১ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

শিল্প-কারখানার নিরাপত্তায় উৎকণ্ঠা

রুহুল আমিন রাসেল

শিল্প-কারখানার নিরাপত্তায় উৎকণ্ঠা

গুলশান-শোলাকিয়ায় ভয়ঙ্কর জঙ্গি-সন্ত্রাসী হামলার পর দেশের শিল্প-কারখানাসমূহের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় আছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মী দিয়ে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করছেন শিল্পমালিকরা। রপ্তানিপণ্যের বিদেশি ক্রেতা আর বিনিয়োগকারীরা দেশের বিমানবন্দরগুলোতে নেমেই পাচ্ছেন ভ্রমণকালীন আইন-প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর নিরাপত্তা। বাংলাদেশে বিদেশিদের কর্মস্থল এবং আবাসিক জায়গাগুলোতেও নিয়মিত টহল দেওয়ার পাশাপাশি তাদের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে শিল্পপুলিশ।

ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) প্রথম সহ-সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘গুলশান হামলার পরই আমাদের নিজ নিজ কারখানাগুলোর প্রবেশপথে নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মীদের সতর্ক দৃষ্টি রাখতে বলা হয়েছে। শিল্প-কারখানাগুলোতে অপরিচিতদের প্রবেশের ক্ষেত্রে নজরদারি রাখা হচ্ছে।’ এ ক্ষেত্রে সীমিত সম্পদ ও জনবলের মধ্যেও আইন-প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর যে সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে, তা সন্তোষজনক বলে মনে করেন এই ব্যবসায়ী নেতা।

শিল্পপুলিশের মহাপরিচালক আবদুস সালাম গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশের শিল্প-কারখানার নিরাপত্তায় আইন-প্রয়োগকারী সংস্থা হিসেবে সব ধরনের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে শিল্পপুলিশ। তার দাবি, বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশিরা যেখানে কাজ করেন এবং যেখানে থাকেন, সেই জায়গাগুলোতে নিয়মিত টহল দেওয়ার পাশাপাশি তাদের খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। এ ছাড়া বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বেপজাকে অনুরোধ করে শিল্পপুলিশ বলেছে, ‘বিদেশি ক্রেতাদের নিরাপত্তা দিতে আমরা প্রস্তুত। তাই বিদেশি ক্রেতারা বাংলাদেশ ভ্রমণকালীন পুরো সময়ে বিমানবন্দরে নেমেই তাদের সব কাজ শেষ করে ফের বিমানবন্দরে ফিরে যাওয়া পর্যন্ত নিরাপত্তা দেবে শিল্পপুলিশ। একই সঙ্গে প্রত্যেক শিল্প-কারখানায় সন্দেহভাজন শ্রমিকদের দেহ তল্লাশি করতেও বলা হয়েছে। তবে শিল্পপুলিশের এমন উদ্যোগের পরও দেশের শিল্প-কারখানার নিরাপত্তা চেয়ে মঙ্গলবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ব্যবসায়ী নেতারা। বৈঠকে ছিলেন এফবিসিসিআইর প্রথম সহ-সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, সহ-সভাপতি এস এম মান্নান কচি প্রমুখ। জানতে চাইলে বৈঠক প্রসঙ্গে বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা নিরাপত্তা চেয়েছি। জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, অ্যাকর্ডের সদস্য ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানসহ যে কোনো বিদেশি ক্রেতা ও কূটনীতিকদের নিরাপত্তা দিতে সরকার প্রস্তুত। এমনকি সারা দেশে বিজিবি প্রস্তুত আছে। তবে আরও বড় কোনো ফোর্স লাগলেও নিরাপত্তার স্বার্থে তা দেওয়া হবে।’ বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, প্রতিটি শিল্প-কারখানার সামনে শিল্পপুলিশ দেওয়া হয়েছে। এমনকি বাংলাদেশে অবস্থানরত ক্রেতাদের অফিসগুলোর তালিকাও পুলিশ কমিশনারকে দেওয়া হয়েছে। আবার ক্রেতাদের কাছে পুলিশের মহাপরিদর্শক, পুলিশ কমিশনার, র‌্যাবের মহাপরিচালকের নম্বর সরবরাহ করা হয়েছে। ১ জুলাই রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী হামলায় ২০ জিম্মিকে হত্যা করে হামলাকারীরা। এর মধ্যে ১৭ জন ছিলেন বিদেশি নাগরিক। এরপর কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের অদূরে ফের জঙ্গিরা হামলা চালায়। গুলশান-শোলাকিয়া হামলার এমন প্রেক্ষাপটে দেশে কর্মরত বিদেশিদের নিরাপত্তা জোরদারের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেয় সরকার। শিল্পপুলিশের তথ্যমতে, দেশের শিল্পাঞ্চলের মধ্যে আছে আশুলিয়া, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রাম। বস্ত্র ও পোশাক, পাদুকা, পাট, সিরামিক, ওষুধশিল্প মিলিয়ে এ অঞ্চলগুলোয় ছয় হাজারের বেশি কারখানা আছে। এর মধ্যে পোশাক কারখানা রয়েছে তিন হাজারের বেশি। এ ছাড়া আশুলিয়া ও চট্টগ্রামে রয়েছে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা (ইপিজেড)। সব মিলিয়ে শিল্প অধ্যুষিত এ অঞ্চলগুলোর বিভিন্ন কারখানায় কর্মরত আছেন প্রায় চার হাজার বিদেশি নাগরিক। এর মধ্যে ভারত, শ্রীলঙ্কা ও চীনের নাগরিক আছেন ৭০ শতাংশের বেশি। জানা গেছে, সম্প্রতি গুলশানে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ইতালির নয় নাগরিকের মধ্যে ছয়জনই পোশাকশিল্পের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।  বিজিএমইএর তথ্যমতে, দেশে পোশাকশিল্পে প্রায় ২০ হাজার বিদেশি কাজ করেন। এর মধ্যে বড় অংশই কাজ করেন বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দেশীয় কার্যালয়ে। বাকিরা শিল্পাঞ্চলের কারখানাগুলোয়। বিদেশিদের অধিকাংশই উৎপাদন ব্যবস্থাপনার কারিগরি দিকগুলোর দায়িত্বশীল পদে কাজ করেন।

সর্বশেষ খবর